ইনবক্সে ‘হাই বা হ্যালো’ বললে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ফিরতি বার্তা আসে। উত্তর দিলেই শুরু হয় দরদাম। ‘বাসায় কি একা? করতে অস্থির? কলেজ ও ভার্সিটির ছাত্র? স্ত্রী কাছে নেই অথবা বিদেশে? তুমি কি আমার শরীর চাও?
বিশেষ করে মামা, চাচা, ভাগিনা, ভাইস্তে, ছোট ভাই বা ছেলে বানিয়ে বাসায় অথবা হোটেলে নিয়ে থাকতে পারেন। যেভাবে চান, সেভাবেই করা যাবে। আর ক’ষ্ট করার দরকার নাই। এখনই যোগাযোগ করেন। আমি আছি আপনাদের জন্য।’
‘কাজের কথা ছাড়া আজাইরা কথা বলে বিরক্ত করলে ডাইরেক্ট ব্লক মা’রতে বা’ধ্য হব। রিয়েল সে’ক্স ফুল নাইট ১৫০০ টাকা, ভিডিও সে’ক্স ৫০০ টাকা, ফোন সে’ক্স ৩০০ টাকা, চ্যাট সে’ক্স ২০০ টাকা।’
উপরের মন্তব্যগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের একটি অ্যাকাউন্টের পোস্ট থেকে নেওয়া। ফেসবুকে থাকা এমন কিছু গ্রুপ হলো ‘এস্কর্টস সার্ভিস’। এগুলোতে বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে খদ্দের হতে বলা হচ্ছে। ফেসবুকে কার্যক্রম চালানো গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘সার্ভিস’।
অনুস’ন্ধানে এমনটি বেরিয়ে এসেছে। অনুস’ন্ধানে দেখা গেছে, ক’রোনার মধ্যে দেহ ব্যবসা চালাতে ফেসবুকে খোলা হয়েছে একাধিক পেইজ। সেখানে দেহ পসারিনীদের ন’গ্ন ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য ও ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। এসব পেইজের ব্যাপক প্রচারণার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাঙালি মেয়েদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে।
তবে সুনির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা না থাকায় এই পেজ ও ওয়েবসাইটগুলো কে বা কারা পরিচালনা করছে, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি। খোঁ’জ নিয়ে জানা যায়, অনলাইনভিত্তিক এই গ্রুপগুলো বাসায় বা ফ্ল্যাট এবং হোটেলে যৌ’নকর্মী সরবরাহ করার কথা বলছে।
এমনকি শত ভাগ সততা ও গো’পনীয়তার সঙ্গে কাজ করার নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পাঁচ থেকে সাত জন মেয়ের একটি গ্রুপ মেঘলার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।
এই সংঘ’বদ্ধ গ্রুপটি প্র’তারণা, অর্থ-আ’ত্মসাৎ ও মা’দক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা গাজীপুরের ব্যাবসায়ী এবং ‘মালদার পার্টি’ দেখে ফোনে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা চালিয়ে যায়।
সম্পর্ক গভীর হলে শারীরিক সম্পর্কসহ অন্যান্য প্র’লোভন বিয়ে ও বাসায় নিয়ে আটকে রাখাসহ বিভিন্নভাবে তাদের ফাঁ’সিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। তাদের নেপথ্যে একটি শক্তিধর হাত জ’ড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকাতেও চলছে একই রকম ঘ’টনা। প্রতিরাতেই ছি’নতাই হচ্ছে পথচারীদের টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন। গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার ভাসমান এক যৌ’নকর্মী জানান, ‘রাস্তায় খাড়াইলে দালালগো টাকা দেওন লাগে।
পু’লিশ আইস্যা ঝা’মেলা করে। কিন্তু আমার এক বান্ধবী আমারে একটা ইমো আর ফেসবুকে আইডি করে দিছে। ওহানে ইচ্ছামতো কিছু লিইখা দিলে কাস্টমার পাওন যায়। আমার ওই বান্ধবী ফেসবুকে আরও কিসের যেন গ্রুপ বানাইছে। ওহান থেইক্যাও কাস্টমার পাওন যায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক যৌ’নকর্মী জানান, হোটেলে প্রোগ্রাম করলে হোটেলের দালাল এবং হোটেলকে টাকা দিয়ে পুষতে হয়। আবার আ’ইনশৃঙ্খলা বা’হিনীর সদস্যরাও তাদের যখন-তখন ধ’রে নিয়ে যায়।
আর ফেসবুক ব্যবহার করে এসব ঝামেলা থেকে কিছুটা মু’ক্তি পেয়েছেন তারা। এ ধরনের বাণিজ্য বিশ্বের অনেক দেশে চালু থাকলেও বাংলাদেশে এর কথা গণমাধ্যমগুলোতে খুব একটা শোনা যায়নি। তবে ক’রোনার মধ্যে এ বাণিজ্য ব্যপক পরিসর লাভ করছে।
সম্প্রতি সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রা’ইম বিভাগের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনলাইন এস্কর্টস সার্ভিস প্রোভাইডার পরিচয় দেওয়া সাতজনকে গুলশান ও বাড্ডা এলাকা থেকে ওই সাতজনকে গ্রে’ফতার করে।
অ’নুমতি ছাড়া অনলাইনে শারীরিক সম্পর্কের জন্য খদ্দের খোঁ’জা কিংবা যৌ’ন ব্যবসা বাংলাদেশে প্রচলিত আ’ইন অনুযায়ী দ’ন্ডনীয় অ’পরাধ বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কো’র্টের আ’ইনজীবী ড. শিব্বির আহমেদ।
তিনি জানান, দ’ন্ডবিধি, সাইবার ক্রা’ইম ট্রাইব্যুনাল ও পু’লিশ কমিশনারের অধীনে এ ধরনের অ’পরাধের মা’মলা ও বি’চার করা যায়। অ’পরাধ প্র’মাণিত হলে বি’চারিক হাকিম দন্ড দিতে পারেন। সা’জার মেয়াদ অপ’রাধের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
এ ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পু’লিশের গো’য়েন্দা বিভাগের এন্টিসাইবার ক্রা’ইম টিমের সহকারী কমিশনার (সিনিয়র এসি) আসাদুজ্জামান এর সাথে, তিনি বলেন, আগে বিষয়টি অনেক সীমিত পরিসরে ছিল। এখন তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সাইবার ক্রা’ইম বিশ্বব্যাপী একটি বিষয়।
অনেক সময় দেখা যায় যে, দেশের বাইরে বা আমেরিকায় বসে আমাদের দেশের ছবি বা ভিডিও তারা অপলোড করছে। সেক্ষেত্রে কিছু করার নেই। তবে দেশব্যাপী আমাদের সাইবার ক্রা’ইম টিম কাজ করছে।