কান পরিষ্কারের জন্য অনেক মানুষই কটন ইয়ার বাড ব্যবহার করেন। এভাবেই কানের গভীরের অংশ ভালো করে পরিষ্কার করা যায় বলে একটা ধারণা চালু আছে। তবে সেটা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ ইয়ার বাড আসলে কানের খোল আরও গভীরে ঠেলে দেয়। আরও চাপের মুখে খোল ঘন হয়ে কান ভরিয়ে দেয়। তাছাড়া আঘাতের আশঙ্কাও থেকে যায়।
বার্লিনের ইএনটি ডাক্তার ড. হেনরিকে গেয়ার্টনার বলেন, ‘এক রোগীর কথা আমার মনে পড়ে৷ তিনি ইয়ার বাড ব্যবহার করছিলেন। ঠিক তখনই কেউ বাথরুমের দরজা খোলায় তিনি চমকে যান৷ ইয়ার বাড তখন মিডল ইয়ারের টিমপ্যানিক মেমব্রেন ভেদ করে পুরো মিডল ইয়ার নষ্ট করে দেয়।’
কটন সোয়াবের আসলে কোনো প্রয়োজনই নেই। কারণ কানের নিজস্ব এক পরিষ্কার করার ব্যবস্থা রয়েছে৷ আমাদের কানের খোল একই সঙ্গে রক্ষাকবচ এবং ক্লিনার হিসেবে কাজ করে।
তা সত্ত্বেও কান পরিষ্কার করার জন্য প্রায়ই ইয়ার ক্যান্ডেল ব্যবহার করা হয়। ফাঁপা মোমবাতির একটি দিক ইয়ার ক্যানেলের মধ্যে পোড়ানো হয়। এভাবে চাপ সৃষ্টি করে কান থেকে খোল বার করার চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু এই কায়দা কি আদৌ কার্যকর? ড. গেয়ার্টনারের মতে, ‘এটা একেবারেই কাজ করে না। পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, যে এভাবে কান একেবারেই পরিষ্কার হয় না৷ তাছাড়া চরম জটিলতার আশঙ্কাও থাকে৷ ইয়ার ক্যান্ডেলের কারণে ইয়ার ক্যানেলে চোট লাগে। এমনকি শেষ পর্যন্ত কানের পর্দায়ও আঘাত লাগতে পারে।’
কান চুলকালে কী করবেন?
তাহলে কান চুলকালে কী করা উচিত? অনেকে হাতের কাছে যা পান, কানে ঢুকিয়ে চুলকানি কমানোর চেষ্টা করেন। ড. হেনরিকে গেয়ার্টনার বলেন, ‘যেসব রোগী নিজেদের কান খুব পরিষ্কার রাখতে চান, সাধারণত তাদের কানই বেশি চুলকায়। আমার পরামর্শ হলো, প্রথমত যতটা সম্ভব নিজে কান পরিষ্কার করবেন না। কারণ কান নিজেই সেই কাজ করে। দ্বিতীয়ত, আঙুলের ওপর হালকা ফ্যাটি ক্রিম লাগিয়ে ইয়ার ক্যানেলের প্রবেশপথে মাখিয়ে নেবার চেষ্টা করা যেতে পারে। সেই ক্রিম নিজেই কিছুটা ছড়িয়ে পড়ে।’
বিকট শব্দই কানের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক৷ বিশেষ করে সেই শব্দ একটানা চলতে থাকলে বধিরতা এবং টিনিটাস দেখা দিতে পারে। বিস্ফোরণের মতো প্রচণ্ড তীব্র শব্দ এমনকি মানুষকে বধির করে দিতে পারে। কনসার্টে গেলে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা উচিত। ড. গেয়ার্টনারের পরামর্শ হলো, ‘এই মুহূর্তে কোনো কনসার্টে পৌঁছে যদি মনে হয়, কেন সঙ্গে কিছু নেই৷ অথচ কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। তখন টিস্যু পেপার খুব কাজে লাগে। টিস্যু পাকিয়ে কানে গুঁজে দিলেই হবে৷ কানের সুরক্ষার জন্য যতটা প্রয়োজন চেপে দিতে হবে।’
শিশুদের কানের সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কান বিশেষভাবে সংবেদনশীল৷ কোনো অনুষ্ঠানে তীব্র শব্দ হলে তারা সেটা সহ্য করতে পারে না। ড. গেয়ার্টনার মনে করেন, ‘সেক্ষেত্রে যা খুশি কানে গুঁজে দিলে চলবে না। তাদের ইয়ার ক্যানাল অনেক ছোট হওয়ায় তারা সেটা সহ্য করতে পারে না। সেটা আবার বেরিয়ে যাবে৷ হেডফোন কাজে লাগালেই ভালো।’
শিশুদের ইয়ার প্রোটেকশন দেখতে কিছুটা ভিন্ন। কোনো অনুষ্ঠানে তীব্র শব্দ অনুভব করার পর নীরবে হাঁটাহাঁটি করলে সেটা কানের জন্য ভালো। সাঁতার কাটা ও স্নান করা স্বাভাবিক কানের জন্য কোনো সমস্যা নয়। তবে স্নানের পর কান থেকে পানি বার করতে হবে। ড. হেনরিকে গেয়ার্টনার বলেন, ‘স্নানের পর কান থেকে পানি বার করা সহজ৷ মাথা নিচু করে একটু ঝাঁকালে বা এক পায়ে একটু লাফালেই চলে। তারপর তোয়ালে দিয়ে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। পানি কানের গভীরে চলে গিয়ে মাথার কোথাও জমা হতে পারে বলে রোগীদের মনে যে ভয় জাগে, সেই অমূলক ধারণা দূর করা জরুরি। কানের পর্দা যে একটা প্রাচীর, তা মনে রাখতে হবে। এখানে, অর্থাৎ বাইরের ইয়ার ক্যানালের মধ্য দিয়ে পানি কানে ঢুকলে শুধু কানের পর্দা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে৷ সে কারণে সেটা বিপজ্জনক নয়।’ মোটকথা কানের স্বাস্থ্য ভালো রাখা মোটেই কঠিন কাজ নয়।
সূত্র: ডয়চে ভেলে