শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন

সমঝোতা না হলে নির্বাচন বর্জন করবে জাতীয় পার্টি

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৮৬ Time View

২০০৮ সাল থেকে সবশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে নবম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোট করেই অংশ নেয়। ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনে দশম সংসদ নির্বাচনে জোট না হলেও আসন সমঝোতা হয় দুই দলে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এসব আসনেই জিতে আসেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা। এই সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রওশন এরশাদের। দীর্ঘসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ভোট করে আসা জাতীয় পার্টি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এককভাবে ২৮৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এ অবস্থায় দলের শীর্ষ নেতারা বিশেষ করে দলের কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্যরা নৌকা প্রতীক এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করতে নারাজ।

তারা বলছেন, সমঝোতা হলেই ভোট হবে, নইলে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার মধ্যদিয়ে আমরা নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দলগুলোসহ নির্বাচনবিরোধী মানুষের শত্রু হয়েছি। এখন মাঠপর্যায়ে নৌকা প্রতীকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের শত্রু হতে চায় না।’ তিনি বলেন, ‘অতি সম্প্রতি পার্টির সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলামের বাসায় কো-চেয়ারম্যানদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে- জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেই আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। আওয়ামী লীগ আসন সমঝোতার বিষয়ে পজিটিভ না হলে অধিকাংশই ভোট বর্জনের পক্ষে জোরালো মত দিয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ চলছে।’

জাপার একাধিক কো-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের শঙ্কা ও সরকারের বিরুদ্ধে বছরজুড়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। তাই তফসিলের আগে মহাজোট ও আসন সমঝোতা সম্ভব হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন বণ্টন হবে- সরকারের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আসন বণ্টন ইস্যুর সুরাহা না হওয়ায় চিন্তিত দলের শীর্ষ নেতারা। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে ফয়সালা চান পার্টির নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের কাছে ৫০টি আসন চাইলেও ৩৫টিতে রফা হলেও খুশি। তারা বলছেন, নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও স্বস্তিতে নেই দলের প্রার্থীরা। কারণ সব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা ও প্রতি আসনেই বিকল্প প্রার্থী দেওয়ায় এই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিকল্প প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইয়ে তারা টিকতে পারবেন না। এ অবস্থায় নির্বাচনে থাকলে দলের বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেননি।

 

ঢাকার একটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এখনই হুমকি দিচ্ছেন। সামনে কী হয় জানি না। বাছাই শেষ হওয়ার পর তা দেখা যাবে। জাতীয় সংসদে বর্তমানে জাতীয় পার্টির সদস্য ২৩ জন। দলের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ে তাদের ১৯ জনই এখন জি এম কাদেরপন্থি। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং তার অনুসারী হিসেবে এরশাদপুত্র সাদ, বিরোধী দলের চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা ও রুস্তম আলী ফরাজীকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ কারণে সঙ্গীদের নিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন রওশন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রসঙ্গে বলেছেন, জাতীয় পার্টির সত্যিকারের অপজিশন হিসেবে নিজেদের দাঁড় করানোর এটা মোক্ষম সুযোগ। নিজেরাই নির্বাচন করতে পারলে আমরা স্বাগত জানাই। জাতীয় পার্টির আসনগুলোতে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো তালিকা পাইনি। তবে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিট ভাগাভাগির ব্যাপারে জাতীয় পার্টি যদি কোনো আসন চায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

জাপার একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আসন বণ্টন নিয়ে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নীরবতায় কাদেরপন্থিদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আসন বা সমঝোতায় সম্মত না হলে বিপদে পড়তে হবে হেভিওয়েটসহ জাপার প্রায় সব প্রার্থীকে। এমনকি বর্তমান ২৩ আসনের অধিকাংশের আসন হারানোর শঙ্কাও রয়েছে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আসন সমঝোতায় এগিয়ে না এলে সাংগঠনিক দুর্বলতা, আর্থিক সামর্থ্যসহ নানা কারণে নির্বাচনের মাঠে জাপার প্রার্থীদের কোনোভাবেই টিকে থাকা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে বড় রকমের রাজনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে এরশাদ প্রতিষ্ঠিত দলটি। এই প্রেক্ষাপটে আসন বণ্টন নিশ্চিত না হলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো সিদ্ধান্তেও যেতে পারে দলটি। তবে জাপা নেতারা আশা করছেন, দ্রুতই আসন ভাগাভাগি শেষ করে নির্ধারিত আসনে উভয় দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করা হবে। সমঝোতার বাইরের আসনগুলোতে প্রার্থীরা উন্মুক্ত নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে দলের সব প্রার্থীই নির্বাচন করবেন লাঙ্গল প্রতীকে। জাপার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোট এবং সমঝোতা করে ভোট করা জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে এককভাবেই ভোট করবে নাকি আসন সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচনী ট্রেন থেকে নেমে পড়বে জানার জন্য আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin