তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে রবিবার (০৩ ডিসেম্বর) ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ইংলিশদের ৩২৫ রানের চ্যালেঞ্জ টপকে ক্যারিবিয়ানরা জিতে যায় ৭ বল বাকি রেখে।
৭ ছক্কায় ৮৩ বলে ১০৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন হোপ। ওপেনিংয়ে আলিক আথানেজ করেন ৬৫ বলে ৬৬। শেষ দিকে যখন ওভারপ্রতি রান লাগে দশের বেশি, তখন ২৮ বলে ৪৮ রানের খুনে ইনিংস খেলে জয়ে বড় অবদান রাখেন রোমারিও শেফার্ড।
তবে ম্যাচের নায়ক হোপই। সেটি তার ইনিংস গড়ে তোলার ধরনে যেমন, তেমনি শেষ করার ধরনেও। ১০৬ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও এক পর্যায়ে খেই হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ১০ ওভারে তাদের প্রয়োজন পড়ে ১০৬ রান। তখনই হোপ ও শেফার্ডের ৫১ বলে ৮৯ রানের জুটি। শেফার্ড শেষ দিকে আউট হলেও ভুল করেননি হোপ। ১১ বলে যখন প্রয়োজন ১৮ রান, স্যাম কারানের চার বলের মধ্যে তিন ছক্কা মেরে নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করার পাশাপাশি দলের জয়ও নিশ্চিত করেন হোপ। ওয়ানডেতে ১৬টি সেঞ্চুরি করে ফেললেন তিনি ১১৪ ইনিংসেই।
ম্যাচের মধ্য বিরতিতে অবশ্য হোপদের নিয়ে অতটা আশা খুব কম জনেরই সম্ভবত ছিল। টস জিতে ইংল্যান্ড যে তুলেছিল এই মাঠের রেকর্ড রান! বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর অনেকটা নতুন চেহারার ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের শুরুটা দারুণ করে। উইল জ্যাকস ও ফিল সল্টের উদ্বোধনী জুটিতে ৭৭ রান আসে ৫০ বলে। ২৮ বলে ৪৫ রান করে আউট হন সল্ট। পরের ওভারেই জ্যাকস বিদায় নেন ২৪ বলে ২৬ করে। এরপর জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেটও আউট হন থিতু হয়ে। ইয়ানিক ক্যারাইয়াহর লেগ স্পিনে ২০ রানে বোল্ড হন ডাকেট। ক্রলি রান আউট হন ৪৮ রানে।
বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থতার আঁধার থেকে এই ম্যাচেও বের হতে পারেননি জস বাটলার। ইংলিশ অধিনায়ক ফেরেন ৩ রানেই। লিয়াম লিভিংস্টোনের ২ ছক্কার ইনিংস থামে ১৭ রানেই। এই সময়টায় দলকে এগিয়ে নেন মূলত হ্যারি ব্রুক। তবে ৭২ বলে ৭১ রানের ইনিংস খেলে তিনি যখন আউট হন, তখনও ইনিংসের ৯ ওভারের বেশি বাকি। তবে শেষ দিকে পুষিয়ে দেন স্যাম কারান ও ব্রাইডন কার্স। ২৬ বলে ৩৮ রান আসে কারানের ব্যাট থেকে, কার্স করেন ২১ বলে ৩১।
রেকর্ড রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দারুণ শুরু এনে দেন ব্র্যান্ডন কিং ও আলিক আথানেজ। দুজনের জুটির শতরান আসে ১০৩ বলে। দারুণ খেলতে থাকা আথানেজকে ৬৬ রানে থামিয়ে এই জুটি ভাঙেন তরুণ লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ। পরের ওভারেই কিং বিদায় নেন ৩৫ রান করে। তিনে নামা কেসি কার্টির মন্থর ব্যাটিংয়ে (৩৯ বলে) কিছুটা গতি হারায় ইনিংস। শিমরন হেটমায়ার নেমে রানের গতি বাড়ান বটে। তবে তার ইনিংস থেমে যায় ৩০ বলে ৩২ রানে। ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম বলে ছক্কা মেরে ওই রানেই আউট হয়ে যান শেরফেন রাদারফোর্ড।
তখন মনে হচ্ছিল, ম্যাচ ক্যারিবিয়ানদের নাগালের বাইরে। হোপ যদিও বল প্রতি রান নিয়ে দলকে লড়াইয়ে রাখেন। ফিফটি করেন তিনি ৫১ বলে। তবে প্রয়োজনীয় রান রেট কেবলই বাড়ছিল। এরপরই শেফার্ড ও হোপের সেই বিধ্বংসী জুটি। বিশেষ করে স্যাম কারানের ওপর দিয়ে তাণ্ডবলীলা চালান দুজনই। পরে রেহাই পাননি অন্য বোলাররাও। শেফার্ড শেষ দিকে আউট হয়ে যান, কিন্তু কাজ শেষ করে ফেরেন হোপ।
১০ ওভারে ১০৬ রানের সমীকরণ তারা মিলিয়ে ফেলেন ৭ বল বাকি রেখেই। ওয়ানডেতে রান তাড়ায় শেষ ১০ ওভারে এর চেয়ে বেশি রান তুলে জয়ের নজির আছে স্রেফ আর একটিই। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৯ রান তুলে জিতেছিল পাকিস্তান। ৯.৫ ওভারে ৯৮ রান আসে কারানের বোলিং থেকে। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড এটি।
সেঞ্চুরির পথে ৫ হাজার ওয়ানডে রানও পূর্ণ করেন হোপ। স্রেফ ১১৪ ইনিংসে মাইলফলক ছুঁয়ে ক্যারিবিয়ানদের মধ্যে দ্রুততম হিসেবে তিনি স্পর্শ করেন ভিভ রিচার্ডসকে।
তিন ছক্কায় ম্যাচ জিতিয়ে যখন উদযাপন করছেন হোপ, গ্যালারিতে তখন দাঁড়িয়ে তালির পর তালি দিয়ে চলেছেন স্বয়ং স্যার ভিভ রিচার্ডস। এই মাঠের নামকরণ তার নামেই, ওয়ানডেতে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের কিংবদন্তি তিনি। সেই রিচার্ডসও মুগ্ধ হোপের ম্যাচ জেতানো ইনিংসে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩২৫ (সল্ট ৪৫, জ্যাকস ২৬, ক্রলি ৪৮, ডাকেট ২০, ব্রুক ৭১, বাটলার ৩, লিভিংস্টোন ১৭, কারান ৩৮, কার্স ৩১*, রেহান ১২, অ্যাটকিনসন ৪; জোসেফ ১০-০-৬৫-১, শেফার্ড ১০-০-৭৭-২, মোটি ১০-০-৪৯-২, টমাস ১০-০-৫৭-২, ক্যারাইয়াহ ১০-০-৭৬-১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৮.৫ ওভারে ৩২৬/৬ (আথানেজ ৬৬, কিং ৩৫, কার্টি ১৬, হোপ ১০৯*, হেটমায়ার ৩২, রাদারফোর্ড ৬, শেফার্ড ৪৮, জোসেফ ২*, কারান ৯.৫-০-৯৮-০, অ্যাটকিনসন ১০-০-৬২-২, কার্স ৯-০-৭৩-১, রেহান ১০-১-৪০-২, লিভিংস্টোন ১০-০-৫০-১)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শেই হোপ।