রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৪ অপরাহ্ন

হেপাটাইটিস ভাইরাসের উপসর্গ

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১২৪ Time View

লিভার বা যকৃৎ অথবা কলিজার প্রদাহ বা মারাত্মক ক্ষতিসাধিত হলে রক্তে (Billirubbin) বিলিরুবিন নামক এক ধরনের পদার্থের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি ঘটে থাকে। বিলিরুবিন হলুদ জাতীয় পদার্থ যার আধিক্যের জন্য সারা শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে, বিশেষ করে চোখ- হাত-পায়ের তালুতে এ হলুদ বর্ণ প্রাথমিক অবস্থাতে পরিলক্ষিত হয় এবং প্রস্রাব গাঢ় বর্ণ ধারণ করে। ভাইরাসের দ্বারা লিভার আক্রান্ত হলে, পিত্তথলিতে অথবা পিত্তনালিতে পাথর থাকলে প্রদাহ সৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ হয়ে থাকে।

আরও যেসব কারণে জন্ডিস হয়ে থাকে তাহলো লিভার বা পিত্তনালিতে টিউমার বা ক্যান্সার জাতীয় অসুস্থতা, পিত্তনালি কৃমির দ্বারা বন্ধ হয়ে যাওয়া, পেনক্রিয়াস নামক গ্রন্থিতে ক্যান্সার জাতীয় অসুস্থতা, পিত্তথলির বা পিত্তনালির অপারেশনের জটিলতা ইত্যাদি। ভাইরাল ইনফেকশনের ফলে লিভারের প্রদাহ সৃষ্টির মাধ্যমে জন্ডিস হওয়ার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস (লিভারের প্রদাহ) ভাইরাসই জন্ডিসের জন্য মূলত দায়ী, তবে অন্য অনেক ভাইরাস হালকা ধরনের জন্ডিস সৃষ্টি করতে পারে। এ পর্যন্ত পাঁচ ধরনের হেপাটাইটিস ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে যাদের A, B, C, Dএবং E এভাবে নামকরণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে হেপাটাইটিস A ভাইরাস ও হেপাটাইটিস E ভাইরাস পানি বা খাদ্যের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে অসুস্থতার সৃষ্টি করে থাকে। অন্য তিনটি হেপাটাইটিস ভাইরাস যেমন B, C ও D  ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে থাকে।

সাধারণভাবে ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময় অন্যের শরীরে ব্যবহৃত সুই ব্যবহার করলে, কারও রক্তে ভাইরাস আছে এমন ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, কারও রক্ত জখমে লেগে গেলে, অন্যের ব্যবহৃত রেজার বা টুথব্রাস ও দাঁত পরিষ্কার করার যন্ত্র ব্যবহার করলে। ট্যাটু বা উলকি করার সুইয়ের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ যৌন সঙ্গম করলে, ঝগড়া ফ্যাসাদের সময় কাউকে কামড়ে দিলে। আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে গর্ভজাত সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মারাত্মক এইডস ভাইরাসও ঠিক একই পদ্ধতিতে ছড়িয়ে থাকে। হেপাটাইটিস A ও E ভাইরাস স্বাভাবিকভাবে শিশুকালেই বেশি হয়ে থাকে। ভাইরাস সাধারণ ধরনের জন্ডিস করে থাকে যা অল্প সময়ের মধ্যে রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য হয়ে যায়। তবে E  ভাইরাস গঠিত জন্ডিস অনেক সময়ই মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং প্রায়ই জন্ডিস দীর্ঘ সময় বিদ্যমান থাকে। অনেক সময়ই E ভাইরাস জটিল আকার ধারণ করে বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায়। কারও কারও প্রদাহের ফলে লিভার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

রক্তের মাধ্যমে প্রবেশকারী তিনটি ভাইরাসের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে B ভাইরাস দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। B ভাইরাস ছাড়া D ভাইরাস একাকী বাঁচতে পারে না। তাই D ভাইরাস একাকী শরীরে প্রবেশ করতে পারে না এবং লিভারকে আক্রান্ত করতে পারে না। C ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম, তাই ই ভাইরাসের আক্রমণকে প্রধানত বিবেচনায় আনা হয়। কারও দেহে একবার Hepatitis B virus (হেপাটাইটিস বি, ভাইরাস) প্রবেশ করলে অনেকদিন সুপ্ত অবস্থায় বিরাজমান থাকে। সুপ্তকালীন অবস্থায় রোগের কোনোরূপ লক্ষণ ব্যক্তি দেহে পরিলতি হয় না কিন্তু ভাইরাস দেহে আক্রমণের ফলে দেহকোষ এক ধরনের অ্যান্টিবডি নামক পদার্থ রক্তে নিঃস্ব করে থাকে। যাকে HBs Ag নামে অভিহিত করা হয়। যা শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই নির্ণয় সম্ভব।

লেখক: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin