রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও সতর্কতা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩
  • ১৭৪ Time View

সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরের সার্বিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে সেই সঙ্গে ডেঙ্গুজ্বরের আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। এ বছরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আগের বছরগুলোর তুলনায় মারাত্মক হতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই জোর প্রস্তুতি নিতে হবে। সাধারণত ডেঙ্গু বর্ষাকালের অসুখ কিন্তু এখন শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই ডেঙ্গু সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।

গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ সারা দেশে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে বাসাবাড়ি, আঙিনাসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে যা কিনা এডিস মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ। সুতরাং বর্ষাকালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সবার সচেতনতা, সবার সহযোগিতা এবং সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে হবে।

ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ কী : ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত ২ ধরনের-ক্ল্যাসিক্যাল ও হেমোরেজিক আর যখন ডেঙ্গু তীব্র আকার ধারণ করে তখন তাকে ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ বলে। এখন লক্ষণগুলো জেনে নেওয়া যাক-

 

১। ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বর : সাধারণত ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরে শরীরে প্রচ- জ্বর (১০০-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত) সেসঙ্গে তীব্র মাথা ব্যথা হয়। অনেক সময় ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দিয়ে আবারও জ্বর আসতে পারে। এ ছাড়াও মাংসপেশিতে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হয়। অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ এবং রুচি কমে যায়। জ্বর হওয়ার ৪-৫ দিনের মধ্যে শরীরে ঘামাচির মতো লাল লাল র‌্যাশ দেখা দেয়।

২। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর : ডেঙ্গুর জীবাণু শরীরের রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফলে রক্তের প্ল্যাটিলেট কমে যায় এবং যার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়ে যেমন- নাক মুখ, দাঁতের মাড়ি, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, রক্তবমি, প্রস্রাব-মলের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। অনেক সময় বুকে, পিঠে পানি চলে আসে এবং লিভার আক্রান্ত হয়ে জন্ডিস ইত্যাদি জটিলতা দেওয়া দেয়।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম : ডেঙ্গুজ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’।  হঠাৎ করেই রোগীর রক্তচাপ কমে যায়, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, দ্রুত নাড়িস্পন্দন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এমন হলে রোগী মারাও যেতে পারে।

ডেঙ্গু হলে কী করবেন : ডেঙ্গুজ্বরের এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই ডেঙ্গুজ্বর ঠিক হয়ে যায়। মুখে খাওয়ার প্যারাসিটামল এবং বাচ্চাদের সিরাপ দিতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং তরল খাবার খেতে হবে। যেমন-লেবুর শরবত, ফলের জুস, ডাবের পানি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। প্ল্যাটিলেট বাড়ে এমন খাবার যেমন-কাঠ বাদাম, দই, গ্রিন টি, ব্রোকলি, পালং শাক, বেদানা খেতে হবে। তবে ওপরের সতর্কতামূলক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু থেকে প্রতিকার : মশার বংশবিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশপাশে পানি জমতে দেওয়া যাবে না এবং যতটা সম্ভব বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুল গাছের টব, ফুলদানি, পড়ে থাকা গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ারে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা, অব্যবহৃত কৌটা এবং ডাবের খোসা সরিয়ে ফেলতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। তবে মশার কয়েল, স্প্রে অথবা মশা নিরোধক কেমিক্যাল ব্যবহার করা যেতে পারে। মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে বাচ্চাদের ফুলহাতা জামা, মোজা এবং জুতা পরাতে হবে। জানালায় নেট ব্যবহার করা যেতে পারে। ডেঙ্গু রোগীকে সবসময় মশারির ভিতরে রাখতে হবে, যাতে রোগীকে কোনো মশা কামড়াতে না পারে। তাই ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা না করে এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।

-ডা. আরিফ মাহমুদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ডিরেক্টর, মেডিক্যাল সার্ভিসেস এভারকেয়ার হসপিটালস, বাংলাদেশ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin