বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৩:২০ অপরাহ্ন

প্রকৃত ক্ষুধা বুঝতে শিখুন, সুস্থ জীবন গড়ে তুলুন

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩
  • ১৫৭ Time View

ক্ষুধা একটি জৈবিক তাড়না। মানবদেহে রক্তে খাদ্যকণা (ট্রাইগ্রিসারাইড, গ্লুকোজ, ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি) একটি নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে নেমে গেলে মানুষ ক্ষুধা অনুভব করে থাকে, এটাকেই প্রকৃত ক্ষুধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এ ছাড়াও অন্য অনেক কারণে মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে, ওইসব কারণকে প্রকৃত ক্ষুধা বলা ঠিক হবে না।

যেমন- খাদ্যবস্তু দেখলে, খাদ্যের ঘ্রাণ পেলে, অন্যদের খাদ্য গ্রহণ দেখলে, খাবারের সময় হলে, খাবারের কথা চিন্তা করলে, মানসিকভাবে খাদ্য গ্রহণের প্রস্তুতি থাকলে, প্রকৃত ক্ষুধা না থাকলেও মানুষ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে এবং খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। এসব অবস্থাকে চোখের ক্ষুধা, নাকের ক্ষুধা ও মনের ক্ষুধা বলে আখ্যায়িত করাই যুক্তিযুক্ত।

মানবদেহে রক্তে গ্লুকোজ, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ট্রাইগ্রিসারাইড নামক বস্তু বিদ্যমান থাকে। মানুষ যখন খাদ্য গ্রহণ করে তখন খাদ্যবস্তু হজম হয়ে এসব খাদ্যকণিকা রক্তে প্রবেশ করে এবং এসব খাদ্যকণা রক্তে বেশি পরিমাণে প্রবেশ করলে অতিরিক্ত খাদ্যকণা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সাময়িকভাবে মজুদ হয়ে থাকে। রক্ত থেকে প্রতি মুহূর্তে খাদ্যকণা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে খাদ্যের জোগান দিয়ে থাকে, এতে ধীরে ধীরে রক্তে খাদ্যকণার পরিমাণ কমতে থাকে এবং প্রতি মুহূর্তে বিভিন্ন অঙ্গে সাময়িক মজুদ থাকা খাদ্যকণা রক্তে প্রবেশ করে রক্তে খাদ্যকণার স্বাভাবিক মাত্রা বা পরিমাণ বজায় রাখে। যার ফলে শরীরের প্রতিটি কোষ রক্ত থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্যকণা গ্রহণ করে তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে। তবে একটা সময়ে সাময়িক মজুদ শেষ হয়ে যায় এবং রক্তে খাদ্যকণিকার মাত্রা বেশ কমে যায়, মানুষ তখনই প্রকৃত ক্ষুধা অনুভব করে এবং খাদ্য গ্রহণে সচেষ্ট হয়।

খাদ্য গ্রহণ করলে আবার খাদ্য হজম হয়ে খাদ্যকণিকা রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্তে খাদ্যকণিকার মাত্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এই চক্র মানব শরীরে অবিরতভাবে চলতে থাকে। ক্ষুধা পেলে মানুষ দুর্বলতা অনুভব করে কর্মক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, অনেকের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয় এটা সবাই জানে। যদি কেউ এ সময়ে খাদ্য গ্রহণ করতে না পারলে অথবা না খেলে তখন প্রাকৃতিক নিয়মেই দেহের বিভিন্ন অঙ্গে মজুদ থাকা গ্লাইকোজেন এবং চর্বি ভেঙে রক্তে খাদ্যকণার জোগান দিয়ে থাকে। তবে এসব স্থায়ী মজুদ ভেঙে খাদ্যকণিকার জোগানের জন্য দেহে বিভিন্ন হরমোন ও এনজাইমের প্রয়োজন হয় যা একটু সময়সাপেক্ষ বটে। তবে প্রাথমিক অবস্থায়ও কিছু পরিমাণ খাদ্যকণা সরবরাহ করতে পারে।

মানুষ যখন ক্রমাগতভাবে অন্যান্য ক্ষুধায় আক্রান্ত হন, তখনই অধিক খাদ্য গ্রহণের ফলে শারীরিক ওজন বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়। বয়স ৩০ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত দৈহিক বৃদ্ধির কারণে, হরমোনাল ভারসাম্যের কারণে, শারীরিক যোগ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিশ্রম করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। তারা প্রচুর শক্তি খরচ করতে পারে মানে প্রচুর খাদ্যকণিকা ব্যবহার করে মোটা হওয়ার প্রতিরোধ করতে পারেন। তাই বয়স ৩০ বছর অতিক্রম করলে খাওয়া-দাওয়ার প্রতি নজর রাখা (৩০ বছর বয়সে আপনার শারীরিক ওজনেই আপনার প্রকৃত ওজন)।

আপনি প্রকৃত ক্ষুধা ও অন্যান্য ক্ষুধার মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করে কম খাদ্য গ্রহণের চেষ্টা করে ৩০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিরা সুস্থতা বজায় রাখতে পারেন। ৩০-পরবর্তী শুধু ক্ষুধাকে কাজে লাগিয়ে আপনি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারবেন এবং ৩০ বছরপূর্তির ওজন বজায় আছে কি না সেদিকে নজর রেখে আপনি আপনার খাদ্যাভ্যাস সাজিয়ে নিতে পারেন। ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকলে আপনি খাবারের পরিমাণের ওপরে নজর রাখুন মানে ওজন বাড়তি হলে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমান বা পরিশ্রমের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন। ওজন কম হলে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন, যাতে আপনার প্রকৃত ওজন ঠিক থাকে। তবে যারা যত শিগগিরই প্রকৃত ক্ষুধা ও অন্যান্য ক্ষুধার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন, তারা চাইলেই খাদ্যাভ্যাস বজায় রেখেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবেন। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে সবাইকে আরও যত্নবান হতে হবে।

লেখক: চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin