ভারতের সাথে তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই চীন গত সপ্তাহে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আর নেপালের সাথে চারদেশীয় বৈঠক করেছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলা এবং অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য সমন্বয়ের বিষয়টি নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে অংশ নেন আমেরিকার মদদপুষ্ট আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হানিফ আতমার, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদিপ গিয়াওয়ালি এবং পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মাখদুম খুসরো বখতিয়ার।
গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় আর চীনা সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা এবং অজানা সংখ্যক চীনা সেনা নিহত হওয়ার এক মাস পরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। দুই দেশই সেনা প্রত্যাহারের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিবৃতি অনুসারে ওয়াং বলেছেন যে, ‘কোভিড-১৯ মোকাবেলা এবং করোনাভাইরাস নিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ করার ব্যাপারে সবার একমত হওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন যে, চার দেশের উচিত যৌথভাবে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের কাজ এগিয়ে নেয়া, চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) এবং ট্রান্স-হিমালয়ান বহুমুখী সংযোগ নেটওয়ার্কের সাথে সমন্বয় করা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, এই বৈঠক একটা স্পষ্ট উদাহরণ যে, চীন ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলতে চায়।
ভারত চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়নি। হাডসন ইন্সটিটিউটের সিনিয়র ফেলো এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড: অ্যা চাইনিজ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ বইয়ের লেখক ব্রুনো মাকায়েস গত মাসে হাফপোস্ট ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন যে, নয়াদিল্লী চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিআরআই-তে অংশ না নেয়ায় বেইজিং ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছে।
তিনি বলেন, “২০১৭ সালের দোকলামের সীমান্ত উত্তেজনা আর এখন গালওয়ানের ঘটনার সাথে বেল্ট অ্যান্ড রোডের সংযোগ রয়েছে। আমার মনে হয় চীন ভারত সরকারকে এটা বুঝাতে চাচ্ছে যে, তারা যদি বেল্ট অ্যান্ড রোডের বিরোধীতা করে, তাহলে তাদেরকে মূল্য দিতে হবে – সীমান্তে মূল্য দিতে হবে এবং সেখানে সামরিক আগ্রাসনের মুখোমুখি হতে হবে”।
বেল্ট অ্যান্ড রোড নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান বদলাতে রাজি হয়নি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত বছর বলেছিলেন, “বিআরআইয়ের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার প্রশ্নে আমাদের জবাব হলো ‘না’”।
দিল্লী ইউনিভার্সিটির ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক অবন্তি ভট্টাচায্য হাফপোস্ট ইন্ডিয়াকে বলেন, সোমবার চীন যে চারজাতির বৈঠকে অংশ নিয়েছে, মনে হচ্ছে সেটার উদ্দেশ্য হলো ‘ভারতকে প্রতিকূল দেশগুলো দিয়ে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা’।
“সামরিক দিক থেকে চিন্তা করলে এটা শুধু দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ নয়, বরং একটা নতুন তৃতীয় ফ্রন্ট সেখানে উন্মুক্ত হচ্ছে”।
কাঠমাণ্ডু কালাপানি, লিম্পিয়াধুরা ও লিপুলেখকে নেপালের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশের পর থেকেই ভারত আর নেপালের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে।
এদিকে, ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে যে, তিব্বতের লাসা থেকে কাঠমাণ্ডু পর্যন্ত সংযোগ রেলওয়ে নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত রেললাইন স্থাপন শুরু করেছে চীন।
ভট্টাচায্য বলেন, “ক্ষুদ্র দেশগুলো যে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, নেপালের আচরণে সেটাই প্রকাশ পাচ্ছে। সেই সাথে নেপাল সরকার কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় চীনের সাথে আদর্শিক দিক থেকেও তাদের মিল রয়েছে”।
বেল্ট অ্যণ্ড রোড নিয়ে আলোচনা এবং চীনের বৈঠকের সিদ্ধান্তটি গুরুত্বপূর্ণ। পর্যবেক্ষকরা এর আগে এমনকি এটাও বলেছেন যে, লাদাখে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তার সাথেও এই বেল্ট অ্যন্ড রোড প্রকল্পের যোগাযোগ রয়েছে।
সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর