গুরুতর অসুস্থ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। RELATED STORIES কাদেরকে দেখতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ডা. দেবী শেঠী ‘চেতনা ফিরেছে’ ওবায়দুল কাদেরের আপাতত ঢাকাতেই হবে কাদেরের
চিকিৎসা সোমবার বিকাল সোয়া ৪টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজোবেথ হাসপাতালের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদেরক নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। বাংলাদেশ সময় রাত ৭টা ৫০ এ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরে পৌঁছায়।
পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ওবায়দুল কাদেরকে মাউন্ট এলিজোবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে আইসিউতে ভর্তি করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েলফেয়ার অফিসার মো. আল আমিন হোসেন জানিয়েছেন। স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদের এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল
বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী সিঙ্গাপুরে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রয়েছেন। ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের পথে কাদেরকে দেখভাল করার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন মাউন্ট এলিজোবেথ হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও একজন টেকনিশিয়ান।
রোববার সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গেই ঢাকায় এসেছিলেন তারা। রোববার সকালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে এনজিওগ্রামে তার হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ব্লক স্টেন্টিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ
করার পর কাদেরের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পরে আবার অবনতির দিকে যায়। চিকিৎসকরা তখন কৃত্রিমভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি আছেন ওবায়দুল কাদেরবঙ্গবন্ধু মেডিকেলের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি আছেন
ওবায়দুল কাদের৬৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদকে তখন থেকেই ক্রিটিক্যাল করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভেন্টিলেশনে (কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা) রাখা হয়।
সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে একটি চিকিৎসক দল রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় এলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যাত্রা পিছিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকরা। এই পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে ভারতের প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন দেবী প্রসাদ শেঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
সোমবার দুপুরে ঢাকায় এসে তিনি কাদেরের অবস্থা দেখে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তার সঙ্গে পরামর্শ করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকরা ওবায়দুল কাদেরকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিলে বিকালেই কাদেরকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, “এখন সবাই রেডি আছি। সিঙ্গাপুরের টিমের উপর নির্ভর করছে কখন সেখানে যাবেন।
যত দ্রুত সম্ভব তাকে নিয়ে যাওয়া হবে।” এর আধা ঘণ্টার মাথায় করোনারি কেয়ার ইউনিটের সুবিধা সম্বলিত একটি অ্যাম্বুলেন্স ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে পুলিশি পাহারায় বিমানবন্দরের পথে রওনা হয়। আগেই পুরো রাস্তা খালি করে দেওয়ায় বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছাতে সময় লাগে
মাত্র ২০ মিনিট। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকাল সোয়া ৪টায় রওনা হয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। কেমন আছেন কাদের রোববার সকালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর দুপুরের দিকে চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তার অবস্থা ‘সঙ্কটজনক’। আর সন্ধ্যায় তারা বলেন, অবস্থার সামান্য
উন্নতি হওয়ায় ওবায়দুল কাদের ডাকে সাড়া দিয়ে চোখ মেলতে পারছেন, তবে এখনও অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। রোববার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কাদেরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে রাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের
উপাচার্য বলেন, সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় তখুনি সিঙ্গাপুরে না নিয়ে দেশেই চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে সিসিইউতে রাতে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার আরও একটু উন্নতি হয়। আওয়ামী লীগ নেতা বিপ্লব বড়ুয়া সকালে জানান, ওবায়দুল কাদেরের চেতনা ‘পুরোপুরি
ফিরেছে’। এদিকে সরকারের ডাকে দুপুরে ভারত থেকে উড়ে আসেন ভারতের নারায়ণ ইন্সটিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেসের প্রতিষ্ঠাতা ডা. দেবী শেঠী, যার ১৫ হাজারের বেশি অস্ত্রোপচার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ওবায়দুল কাদেরের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মতামত দিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর অনুমতি দেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকরা।