সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসে দিয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে জুয়ার আসর থেকে ১৮০ কোটি টাকা আয়ের অভিযোগ আনায় পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সাইবার ট্রাইবুন্যালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর কয়েকটি ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
এবার সেই এসআই’র বিরুদ্ধে লড়ার ঘোষণা দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। নিজের ফেসবুক লাইভে তিনি এ তথ্য জানান।তিনি সবার কাছে প্রশ্ন রাখেন বলেন, ‘ওসি সাইফুল আমিন যে ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, আদৌ সেটা তারই ফেসবুক কিনা সেটা যাচাই বাছাই করার দরকার ছিলো। এছাড়া তিনি এমপি সাহেবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন সেটার কি কোনো তদন্তের ব্যবস্থা করেছে কিনা দুদক বা অন্য সংস্থা যারা এগুলোর দায়িত্বে আছে, নাকি সেটা অন্যসব ঘটনার মত চাপা পড়ে যাবে?’
বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আমিনকে বরখাস্ত না করে হুইপের বিরুদ্ধে তিনি যে অভিযোগ এনেছেন কর্তৃপক্ষ তার ব্যাখ্যা চাইতে পারত। কিন্তু তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে।বিষয়টিকে বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার সুমন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় সৎ পুলিশ অফিসাররা উৎসাহ হারাবেন। এ কারণে আমি তার পক্ষে উচ্চ আদালতে বিনা পয়সায় আইনি লড়াই করব।’গত ২০ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট দেন পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আমিন। তিনি এক সময় হালিশহর থানা, চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের হাজতখানাসহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় কর্মরত।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘ক্যসিনো, ফ্লাশ, হাউজি, হাজারি, কাইট, পয়শা (চাঁন তারা) এগুলো আবহমান কাল থেকেই মহানগর ও জেলা সদরের ওসিদের বিনা ঝামেলায় মোটা টাকা পাওয়ার পথ।মহানগরের ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক দেহ ব্যবসা, ম্যাসেজ পার্লারগুলো ওসি সাহেবদের ২য় ইনকাম জেনারেটিং এসিসট্যান্স করে, থানার ক্যাশিয়ার কালেকশন করে ওসির প্রতিনিধি হিসেবে। ক্লাবপাড়ার ওসিরা এই দুই খাত থেকেই দৈনিক ৫ লাখ করে নিলেও মাসে সেটা দেড় কোটিতে পৌছায়। এবার আছে থানার সিভিল টিম, সিয়েরা ডে/নাইট, লিমা ডে/ নাইট/ গল্ফ ডে নাইট।
এরপর ডিবি। ডিবি একসঙ্গে নেয় না, তালিকা অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা হয়। প্রতি মাসেই স্ব স্ব ইউনিট থেকে কর্মরত অফিসারদের তালিকা আপডেট করে হাউজগুলোতে পাঠানো হয়।বাকি থাকে মাদক, ওসিরা এখন মাদকের টাকা নেয় না।
মফস্বলের ওসিরা চায় সারা বছর মেলা। মেলা মানে ধামাকা ধামাকা নৃত্য, জুয়া, হাউজি, ওয়ান/টেন আর ডাব্বা খেলা। দৈনিক ওসির ৫০ হাজার, মাসান্তে ১৫ লাখ, তিন মাস চললে ৪৫। ব্যস! আগের পোস্টিং ফ্রি, আর পরেরটা মজুদ। বাকি দিনে যা পান সব বোনাস।ঢাকায় মেনন সাহেব একটির চেয়ার অলঙ্কৃত করেছেন। দোষের কিছু নাই। রাজনীতি বলে নকশালীরা টাকশালি। অর্থাৎ টাকশালের মালিক তারা হন।
চট্টগ্রামে শামসুল হক মাস্টার (!)। ছিঃ ধিক্কার জানাই। আমার নিজের হিসেবে তিনি আজ ৫ বছর চট্টগ্রাম আবাহনীর জুয়ার বোর্ডের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক এবং গডফাদার। দৈনিক সর্বনিম্ন ১০ লাখ করে নিলেও আজ ৫ বছরে শুধু জুয়া থেকে নিয়েছেন প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। ক্লাবটি হালিশহর থানায়, এমপি সাহেব ওসির জন্য মাসে হাজার দশেক টাকা পাঠান ছিঁচকে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবী দীঘলের মারফত ( তথাকথিত যুবলীগ নেতা)। টাকার এত অবনয়নে হালিশহরের ওসিরা সেই টাকা নেন না। যদিও ওই থানায় ১৩০০টি দেহ ব্যবসার আলয় আছে। ওসি দৈনিক বাসা প্রতি ৫০০ টাকা করে ৬০ হাজার পান। মাসে এখানে ১৮ লাখ পান, তাই মাস্টারের জুয়ার আখড়া মুফতে চললেও না করেন না।
এই হক মাস্টারের অর্থশালী হয়ে ধরা কে সরা জ্ঞান করার অন্য কারবার হলো ইয়াবা ট্রানজিট। সরকারের কড়াকড়ি আরোপের আগ পর্যন্ত টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবার ৮০ ভাগ তার পটিয়ায় ট্রানজিট নিতো। এবং র্যাগব এর এনকাউন্টারে মাস্টার সাবের ইয়াবা উইং কমান্ডার নিহত হলে দীর্ঘ একযুগ পর চট্টগ্রামের স্টেশন কলোনি ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। শত অভিযান আর আন্তরিকতা স্বত্তেও যা বন্ধ করতে পারেননি সিএমপির সাবেক কমিশনার জনাব মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, জনাব জলিল, জনাব ইকবাল বাহার চৌঃ। অথচ হক মাস্টার ধোয়া তুলশী রয়ে গেলেন।
জুয়া দিয়ে এবং নিয়ে দেশময় প্রায় একই অবস্থা। আগের সরকারে করেছেন খোকা, আব্বাস, ফালু, এখন করছেন মেনন, শামসু মাস্টার, খালিদ। কিন্তু সব আমলেই কমন আছেন ব্রাত্য ওসি সাহেব।’