শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দুঃসংবাদ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০২০
  • ৩৫২ Time View

চলতি বছরের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানের ভাড়াবাড়ি ‘ফিরোজাতেই’ আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি না হওয়ায় পরবর্তী চিকিৎসা কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হবে,

এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি তিনি। এমনকি উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে দেশের বাইরে যাবেন কিনা— তাও স্পষ্ট করে জানাননি খালেদা জিয়া। শনিবার (১ আগস্ট) পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা-বিনিময়কালে

এ সংক্রান্ত কোনও আলোচনা তিনি করেননি। বরং একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে যে অবস্থায় আছেন, তাতে তার উন্নত চিকিৎসা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু তিনি কী করবেন, তা বোঝা যাচ্ছে না।

তবে তার আইনজীবীদের একজন জানিয়েছেন, ২৫ সেপ্টেম্বরের আগেই উন্নত চিকিৎসার গ্রাউন্ড দেখিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে। বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান,

শনিবার ঈদের দিন রাত আটটার দিকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা চেয়ারপারসনের বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর প্রায় ১০টার দিকে তারা বেরিয়ে আসেন। সাক্ষাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ,

ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌনে দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে খালেদা জিয়া স্থায়ী

কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তার বাসার দ্বিতীয় তলায়। সামাজিক দূরত্ব ও সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান করেই দলীয় নেত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করেছেন নেতারা। বৈঠক থেকে বেরিয়ে শনিবার রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন,

আমরা কথা বলেছি, ঈদের দিনে যেসব কথা বলা হয়। এতদিন ধরে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি, সবার সুখে-দুঃখের কথাবার্তা আছে।’ স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আলোচনার মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারির পরিস্থিতি, এই ভাইরাসের কারণে বিশ্বপরিস্থিতি,

বন্যা ও বন্যায় আক্রান্ত মানুষ, দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা-মোকাদ্দমা ও তার নিজের শারীরিক পরিস্থিতিও ছিল। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, আমরা দলীয় সামর্থ্য নিয়ে কতটুকু কী করতে পারি, সেটা তিনি বলেছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে স্থায়ী কমিটির

একাধিক সদস্যের ভাষ্য— বিএনপি প্রধানের শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। বাতের ব্যথা আগের মতোই রয়েছে। রুচি কম থাকায় খেতে পারছেন না নিয়মিত। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো দরকার। চিকিৎসকেরা এই সময়ে কী করবেন, সেটাও অনিশ্চিত হয়ে আছে।

কিন্তু এই মুহূর্তে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার (২ আগস্ট) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক বিষয় নিয়ে মহাসচিব কাল কথা বলেছেন। আমাকে বললে আমি বলবো আলহামদুলিল্লাহ।’

রাজনৈতিক কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে খালেদা জিয়ার সঙ্গে, এমন প্রশ্নে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলছেন, রাজনৈতিক আলাপের কোনও মানসিকতাই এই সময়ে নেই। তিনি করোনা পরিস্থিতি, টেস্ট কম হওয়া ও বন্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কর্মীরা বেশি ভালো নেই,

মামলা-মোকাদ্দমা চলছে, গ্রেফতার চলছে— এ বিষয়টিতে তিনি মর্মাহত হয়েছেন। কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে যে নিম্নবিত্তরা বিক্রি করেছে, ঈদের দিন ঢাকায় সেই মাংস কিনেছেন অনেক বিপদগ্রস্ত মধ্যবিত্ত, এ বিষয়টিও খালেদা জিয়াকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করেছে।

ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়ে খালেদা জিয়া নতুন করে কিছু বলেননি, বলে দাবি করেন স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য। তারা বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির যেভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, এই আলোচনার খবরটি তিনি জানেন। ফলে,

আমরা সবাই মিলে একটি অবস্থানে পৌঁছানোর পর হয়তো ম্যাডাম তার অবস্থান ব্যক্ত করবেন। বিএনপি সনাতনী ধারা থেকে বেরুতে চায়। তার সন্তান এখন দল পরিচালনা করছেন, তিনি চাইছেন সবকিছু ভালো করে আলোচনার মধ্য দিয়ে আসুক।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষ মুক্তির মেয়াদ শেষ হবে, পরের প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শুরু হবে, এমন প্রশ্নে শনিবার রাতে সাক্ষাৎ শেষে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই বিষয়টা নিয়ে এখনও বিস্তারিত কোনও আলোচনা হয়নি। সময় আসলে আলোচনা হবে।

তবে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। তার শারীরিক যে কন্ডিশন তাতে দ্রুত তার চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। তবে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি মিলিয়ে হয়তো

এ মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত তিনি নিজে গ্রহণ করবেন। একইসঙ্গে মুক্তির পরবর্তী মেয়াদবৃদ্ধি করার বিষয়টিও হয়তো সরকারের দিকে ঠেলে দেবেন, এমনটিও চাইছেন কেউ-কেউ। সেক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি হয়তো তিনি বিলম্বিত করতে পারেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, শনিবার রাতের শুভেচ্ছাবিনিময় পর্বে খালেদা জিয়া দলের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ম্যাডামের মুক্তির সময় শেষ হওয়ার আগেই দরখাস্ত করা হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin