শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন

সাহেদ যেভাবে আ. লীগের উপ কমিটিতে ঢুকেন

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০
  • ৩৫৩ Time View

রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতি আর প্রতারণার তথ্য উদঘাটিত হওয়ার পর এই গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্ম’দ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছবি আসতে শুরু করেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। তিনি কী করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ কমিটিতে ঢুকে পড়েছিলেন, সেই প্রশ্নও আসছে রাজনৈতিক মহলে।

ক’রোনাভা’ইরাস পরীক্ষা না করেই ভু’য়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং মেয়াদপূর্তির পরও লাইসেন্স নবায়ন না করায় ব’ন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল।

র‌্যাবের দায়ের করা মা’মলায় বলা হয়েছে, ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্ম’দ সাহেদ ‘প্রকৃতপক্ষে একজন ধুরন্ধর, অর্থ লিপ্সু এবং পাষণ্ড’। এই সাহেদ ফেইসবুক পেইজে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন।

সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, আ’ইনশৃঙ্খলা বা’হিনীর শীর্ষ কর্মক’র্তা, সরকারি আমলাদের সঙ্গে নিজের অসংখ্য ছবি তিনি সেখানে দিয়ে রেখেছেন। এদিকে বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গেও সাহেদের পুরনো কিছু ছবি ফেইসবুকে এখন শেয়ার করছেন অনেকে।

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে সখ্য এবং সেই সূত্রে সাহেদের হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার কাহিনীও কেউ কেউ লিখছেন। সাতক্ষীরার ছেলে সাহেদ স্কুলের শেষ দিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় ঢাকায় চলে আসেন। তার মা সাফিয়া করিম এক সময় মহিলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জ’ড়িত ছিলেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

২০০৯ সালে প্রতারণার অ’ভিযোগে গ্রে’প্তার হওয়া সাহেদ দুই বছরের মাথায় ধানমণ্ডিতে এমএলএম ব্যবসা শুরু করে বহু লোকের টাকা মেরে দেন বলে অ’ভিযোগ আছে। পরে তিনি প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠা করেন রিজেন্ট গ্রুপ। হাসপাতালে ছাড়াও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, আবাসন, হোটেল ব্যবসা রয়েছে এ গ্রুপের।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা জানান, বেশ কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের বাসায় যাওয়া আসা শুরু করেন সাহেদ। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ বা উত্তর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ত ছিল না।

এর মধ্যে বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে দেখা যেতে থাকে সাহেদকে। অনেক সাংবাদিকের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এরপর ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে সরাসরি তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে যান।

দল না করেও সাহেদ কীভাবে সরাসরি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য হয়ে গেলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে ওই উপ কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর মোহাম্ম’দ জমিরের নাম বলেছেন একজন, যিনি নিজেও ওই কমিটিতে ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, “আমাদের কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্ম’দ জমির সাহেবের সঙ্গে সাহেদের সখ্য অনেক বেশি। আমরা দেখেছি সাহেদের গাড়িতে করে জমির সাহেব বিভিন্ন সময় পার্টির কর্মকাণ্ড, এমনকি বৈঠকগুলোতেও আসতেন। সাহেদ গত কমিটির সদস্য ছিল, কিন্তু জমির সাহেবের সঙ্গে এখনও সে বৈঠকে আসত।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও উপ কমিটির সদস্য সচিব শাম্মী আহমেদ বলেন, “সে (সাহেদ) আমাদের বর্তমান কমিটির সদস্য নয়, নতুন কোনো খসড়া কমিটি আমরা করিনি।”

তাহলে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন কী করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে একজন সম্মানিত ব্যক্তির মাধ্যমে সে বৈঠকে আসত, তখন আমি তো তাকে বৈঠক থেকে বের করতে পারি না।”

আওয়ামী লীগে সাহেদের পদ আছে কি না জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর মোহাম্ম’দ জমির বলেন, “সাহেদ বর্তমান কমিটির কোনো পদে নেই। গত কমিটিতে সে সদস্য ছিল। এখনও তো আমাদের কমিটি অনুমোদন হয়নি। তাহলে কীভাবে বলবেন সে আমাদের কমিটির সদস্য।”

সাহেদকে বৈঠকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “মিটিংয়ে ৩০-৪০ জন উপস্থিত থাকে, অন্য সদস্যদের মত আমি তাকেও চিনি।” আর মোহাম্ম’দ সাহেদের গাড়িতে চড়ে দলের বৈঠকে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, “না, আমি কেন তাকে আনতে যাব। অন্য সদস্যদের মত আমি তাকেও চিনি…। কী করে সে এমন গলদ সার্টিফিকেট দিল, আই ক্যানট ইমাজিন।“

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “প্রতারক, ধোঁকাবাজ, মানুষ নামের ক’লঙ্ক, যাদের কোনো রাজনৈতিক ঐতিহ্য-ইতিহাস নেই, মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলে, হু’মকির মুখে ফেলে দেয়, তাদের হাত থেকে দেশকে বাঁ’চাতে হলে এই ধরনের সাহেদদের ক’ঠোরভাবে দমন করতে হব।”

যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় সাহেদ ওই ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পেরেছে, তাদেরও বি’চারের আওতায় আনার দা’বি জানান ক্ষ’মতাসীন দলের এই নেতা। তিনি দাবি করেন, “এর সাথে আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই, আওয়ামী লীগেরর কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কোনো পর্যায়ের কোনো ধরনের পদবীর চিঠি তার নামে আজ পর্যন্ত ইস্যু হয়নি।”

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “সাহেদ এক সময় বিএনপি করত, বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান, নাজমুল হুদার সাথে তার খাওয়ার ছবি রয়েছে। এ ধরনের নব্য আওয়ামী লীগাররা দেশ ও দলের ক্ষ’তি করছে।” তথ্য সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin