রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন

সীমান্তে রণপ্রস্তুতিতে এগিয়ে আসছে চীন!

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০
  • ২৫৩ Time View

লাদাখে চীন-ভারত সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সরকার।

এর মধ্যে দুই দেশই লাদাখ এলাকা রণপ্রস্তুতি নিয়েছে। চীন ওই এলাকায় শত শত সামরিক যান এনেছে। গত ৯ ও ১৫ জুন স্যাটেলাইটে ধরা পড়া ছবিতে এ দৃশ্য দেখা গেছে বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দূরদর্শন নিউজ।

উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে আরো ভয়াবহ দৃশ্য। শত শত ট্রাক, বুলডোজার, চার চাকার গাড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে যুদ্ধসাজে সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসছে চীনা বাহিনী। গত ৯ জুন সীমান্তের কাছে গালওয়ান উপত্যকার যে ছবি স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছিল, তার থেকে ১৬ জুনের ছবি অনেকটাই আলাদা।

উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, শতাধিক ট্রাক ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এগিয়ে আসছে চীনা বাহিনী। ৯ জুনের উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছিল ওই এলাকা একেবারেই জনশূন্য। ১৬ জুনের স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে, ট্রাক, বুলডোজার মিলিয়ে অন্তত ৭৯টি গাড়ি এলএসি থেকে ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছে।

পরের উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, ক্রমশই এই সংখ্যা বাড়ছে। এলএসি বরাবর চীনা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ১২৭টি গাড়ির দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে। এই এলাকা এলএসি থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাক, বুলডোজার ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম নিযে যুদ্ধের প্রস্তুতিই নিচ্ছে চীন। অতর্কিতে হামলা হতে পারে যে কোনো সময়েই। এলএসি থেকে ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যে চীনা বাহিনীর ৫০টি ক্যাম্প ধরা পড়েছে উপগ্রহ চিত্রে। রীতিমতো তাঁবু খাটিয়ে এলএসি বরাবর সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখছে চীন।

উপগ্রহ চিত্রে আরেকটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, এলএসি বরাবর গালওয়ান নদীর যে গতিপথ সেখানেই নতুন করে কোনো কাঠামো গড়ে উঠেছে। ৯ জুনের উপগ্রহ চিত্রে নদী উপত্যকায় তেমন কোনো কাঠামো দেখা যায়নি। তবে ১৬ জুনের উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, নদী উপত্যকা বরাবর এলএসি থেকে ৬০০ মিটারের মধ্যে নতুন করে কোনো কাঠামো তৈরি হয়েছে।

এদিকে লাদাখে সংঘাতের পর এবার ভারতকে ‘বড় বেইজ্জতি’র হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীনের সংবাদমাধ্যম। সীমান্তে প্রয়োজন হলে অস্ত্র ব্যবহারে ভারতীয় সেনাদের অনুমতি দেয়ার পর চীনের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

গত ১৫ জুন লাদাখে ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে চীনের সেনাদের। সেখানে ২৩ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। তবে ভারতও দাবি করেছে, সংঘর্ষে চীনের ৪০ সেনা নিহত হয়েছে।

এ ঘটনার পর দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। দফায় দফায় বৈঠকেও কোনো সুরাহা আসেনি। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। বৈঠক থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অস্ত্রের ব্যবহারের স্বাধীনতা দেয়া হয়। এখন থেকে লাদাখে অস্ত্রের ব্যবহার প্রয়োজন হলে পিছপা হবে না ভারতীয় সেনারা।

ভারতের এই সিদ্ধান্তের পর চীনের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইম একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারত যদি চীনের সাথে যুদ্ধ করতে চায় তাহলে ৬২ সালের চেয়েও বড় বেইজ্জতি সইতে হবে। উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে ভারত-চীনের মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং ভারত পরাজিত হয়।

গ্লোবাল টাইমসের ওই রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে তাদের ভেরিফায়েড পেজে লিখেছে, ‘চীনের এই মন্তব্যে গা জ্বলে যাবে আপনার! যুদ্ধ করলে ’৬২-র চেয়েও বড় বেইজ্জতি সইতে হবে ভারতকে। সেনাকে স্বাধীনতা দেওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পাল্টা হুঙ্কার চীনের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসের।’

এর আগে, ১৯৭৫ সালে ভারত-চীন সীমান্তে শেষবার কোনও সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর থেকে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখে বা ইস্টার্ন সেক্টরে অরুণাচলে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি কম হয়নি। কিন্তু এ ধরনের প্রাণঘাতী মারামারি কখনও হয়নি।

তবে এই সংঘাতে কোনও পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। লোহার রড, লাঠি, পাথর নিয়ে হামলা করেছে চীনা সেনা। তারপরই প্রত্যাঘাত করেছে ভারতীয় সেনারা।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘাতের পরিবেশ বিরাজ করায় এসব অস্ত্রের মজুত করা হয়েছে।

কিছুদিন আগে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, চীন সেনাবাহিনী সীমান্তের যে এলাকায় রয়েছে সেখান থেকে ভারতের অংশে ঢুকতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাগবে। লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের বিভিন্ন জায়গায় ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়াচ্ছে চীনা বাহিনী।

ভারতীয় সূত্রের বরাতে খবরে বলা হয়, চীনের সেনাবাহিনী লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের কাছের ঘাঁটিগুলিতে নানান যুদ্ধের গাড়ি ও ভারী যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে এসেছে। বিষয়টি জানতে পেরে ভারতও আর্টিলারের মতো অস্ত্র ওই এলাকায় পাঠিয়েছে।

সূত্র: মিলিটারি ডিফেন্স ফোরাম।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin