সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:১১ পূর্বাহ্ন

এবারও বাংলাদেশকে বাঁচাতে একাই লড়বে ‘সুন্দরবন’

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২০ মে, ২০২০
  • ৪৯৭ Time View

বিশ্বের প্রাকৃতিক বি’স্ময় সুন্দরবন যে বাংলা’দেশের মানুষ ও সম্পদ রক্ষা’র ঢাল হিসেবে ভূমি’কা পালন করছে সেটি আগেও বেশ কয়েকটি ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণি’ঝড়, সাই’ক্লোনে প্রমাণিত হয়েছে। এবারও এর ব্যতি’ক্রম হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সুপার সাইক্লোন ‘আ’ম্ফান’র বি’রুদ্ধে এবারও একাই লড়’বে সুন্দরবন।

সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরি’বেশের সব’চেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবনকে বিবেচনা করা হয়। দশ হাজার বর্গ কিলো’মিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দ’রবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলো’মিটার রয়েছে বাংলাদেশে। ভারতের মধ্যে রয়েছে বা’কি অংশ।

বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আ’সা যেকোনো মাত্রা’র প্রা’কৃতিক দু’র্যোগের সময় এই বনভূমি বুক পেতে দিয়ে দেশকে রক্ষার চেষ্টা করেছে। ‘আম্ফান’র গতিপথ বলছে, এবারও সুন্দরবনই পদাতিক সৈন্যের মতো প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দিয়ে ঝড়টিকে দুর্বল করে দিতে পারে। সেক্ষে’ত্রে স্থল’ভাগে ঝ’ড়টি দাপট কমাতে বাধ্য হবে।

মঙ্গ’বার আবহাওয়া অধিদ’প্তরের বুলেটিনে বলা হয়, দুপুর ১২টায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমি’টারের কম দূরত্বে থাকা ঘূর্ণি’ঝড় আম্পান আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রা’মের মধ্য’বর্তী অঞ্চ’ল দিয়ে আজ শেষরাত হতে বুধবার বিকাল বা সন্ধ্যা’র মধ্যে বাংলা’দেশের উপকূল অতি’ক্রম করতে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফ’তরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, “তবে, ঘূর্ণি’ঝড়টি যদি ধীরে ধীরে সং’কীর্ণও হয়ে আসে তবে এটি বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলীয় এলাকা, সুন্দরবন জোনের খুলনা, বাগে’রহাট ও সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানবে।”

যৌথ টাইফুন সতর্কতা কে’ন্দ্রও সতর্ক করেছে যে, সুপার সাই’ক্লোনটি সুন্দরবনের দিকে কেন্দ্র করে এগিয়ে চলেছে।তিনি বলেন, “এই ঘূর্ণি’ঝড়টির কেন্দ্রের বাতাসের গতি বিবেচনা করে এটা মনে হচ্ছে যে, এটি সিডর ও আইলার তুলনায় আরও শক্তি’শালী হবে।”

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘূর্ণিঝড় “সিডর” ২৬০ কিমি/ঘন্টা বেগে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের দক্ষিণা’ঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল, যার ফলে ৩৫০০ মানুষের মৃ’ত্যু’ হয় এবং দুর্যো’গ উপদ্রুত এলাকার প্রচুর ক্ষ’তিসাধন হয়। তবে সুন্দরবন না থাকলে এই ক্ষ’য়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতো।

একইভাবে, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় “আইলা” সুন্দর’বনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং উপ’কূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করেছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ঘূ’র্ণিঝড় “বুলবুল”কে ঠেকিয়ে দেয় সুন্দরবন।

আবহওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, “এটা যদি এর গতি অব্যাহত রাখে এবং দেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে তবে তা সিডরের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।”তবে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঝড়টি উপকূলের দিকে আসতে আসতে বাতাসের গতি ধীরে ধীরে কমবে।

এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, অতীতে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে সুন্দরবনই রক্ষা করেছিল।”তিনি আরও বলেন, “সুপার সাইক্লোনটি যদি সুন্দরবনে আঘাত হানে তবে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ থাকবে।”

“যদি ঝড়টি সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং তারপর খুলনায় আঘাত হানে, এ ক্ষেত্রে বনটি বাতাসের গতি কমিয়ে দেবে এবং সেটি দুর্বল হয়ে পড়বে। সে কারণেই বাংলাদেশ খুব বেশি হতাহতের মুখোমুখি হবে না,” বলছিলেন আমির হোসেন।তিনি বলেন, “যতদূর আমাদের অবহিত করা হয়েছে, স্থলভাগে আসতে আসতে এটি দুর্বল হয়ে পড়বে।

আমির হোসেন বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে সুন্দরবনের জেলেদের নিরাপদ অঞ্চলে চলে যেতে সতর্ক করে দিয়েছি। যদিও এতে করে দুর্ঘটনা কমে যাবে, তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্যপ্রাণী ধ্বংস হয়ে যাবে। ”এদিকে আম্ফান আপাতত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা উপকূলের আরও কাছে চলে এসেছে।

মঙ্গলবার (১৯ মে) দুপুর পর্যন্ত এটি উড়িষ্যা উপকূল থেকে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এই সময়ে ঝড়টি বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, এখন পর্যন্ত আম্ফানকে দ্বিতীয় ‘সুপার সাইক্লোন’ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এর আগে ১৯৯৯ সালের উড়িষ্যা সাইক্লোনটিও পেয়েছিল সুপারের মর্যাদা। স্থলভাগে আঘাত করার সময় এর গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটার।

এদিকে ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ ও সুন্দরবন এলাকায় বেশি তাণ্ডব চালাবে। এর প্রভাবে বুধবার (২০ মে) পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায় তুমুল বৃষ্টিপাত হবে। একই অবস্থা থাকবে বাংলাদেশের খুলনা, যশোর ও বরিশাল অঞ্চলে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin