শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন

লকডাউনের সুযোগে মা ও দুই মেয়েকে ধর্ষনের পর বাচ্চাসহ মোট ৪ জনকে গলা কেটে হত্যা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০
  • ১২৭৬ Time View

মেঝেতে মা ও বড় মেয়ের, খাটে ছোট মেয়ের, আর খাটের নিচে শিশুপুত্রের গলা কাটা লাশ। ঘরের মেঝে থইথই রক্ত। হত্যাকাণ্ডের এই নৃশংস দৃশ্যটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়নের আবদার গ্রামের একটি দোতলা বাড়ির।

বাড়িটির মালিক মালয়েশিয়াপ্রবাসী রেজোয়ান হাসান কাজল। ওই বাড়ির দোতলায় থাকতেন তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও একমাত্র শিশুপুত্র। কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান বংশোদ্ভূত।

নিহতরা হলেন রেজোয়ান হাসান কাজলের স্ত্রী স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), বড় মেয়ে নোরা আক্তার (১৫), ছোট মেয়ে হাওয়ারীন হাওয়া শাওরীন (১১), ছেলে ফাদিল আল সাদ (৭)। নোরা পাশের হাজি আবদুল কাদের একাডেমির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী, শাওরীন পাশের ব্রাইট স্কলার ক্যাডেট মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণি এবং ফাদিল একই এলাকার আবদুল করিম একাডেমির নার্সারির শিক্ষার্থী ছিল।

স্বজনদের দাবি, গত বুধবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তের দল বাইরে থেকে দড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এখলাস উদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, মা ও দুই মেয়েকে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এরপর হত্যা করা হয় শিশু ছেলেটিকেও।’

রেজোয়ান হাসান কাজলের ছোট ভাই আরিফুর রহমান জানান, ২০০০ সালের দিকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান বড় ভাই কাজল। সেখানে ফাতেমাকে বিয়ে করেন তিনি। নোরার জন্ম মালয়েশিয়ায়। এরপর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দেশে আসেন। শাওরীন ও সাদিলের জন্ম বাংলাদেশে। বর্তমানে কাজল মালয়েশিয়া রয়েছেন।

আরিফুর আরো জানান, প্রায় দেড় শ গজ দূরে তাঁর বাড়ি। বুধবার সন্ধ্যায় ভাবি ফাতেমা তাঁকে ডেকে কথা বলেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে পাশের বাজার থেকে গরুর মাংস কিনে আনতে বলেছিলেন। সকাল ১০টার দিকে মাংস কিনে ওই বাসায় গিয়ে ডেকেও কারো সাড়া পাননি তিনি।

সবাই ঘুমাচ্ছে ভেবে ফিরে যান। দুপুর ১২টার দিকে ফের ওই বাসায় গিয়ে ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া না পেয়ে এবার সংশয় জাগে তাঁর। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে প্রতিবেশী এক যুবককে ডেকে মই বেয়ে দোতলায় উঠতে বলেন তিনি।

ওই যুবক দোতলায় উঠে পেছনের একটি দরজা খোলা দেখেন। ওই দরজা দিয়ে উঁকি মেরে মেঝেতে মরদেহ দেখে চিত্কার দেন তিনি।

খবর পেয়ে শ্রীপুর থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছায়। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কথা জেনে বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ ও গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।

আরিফুর রহমান জানান, তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের নেউকা গ্রামে। প্রায় এক যুগ আগে শ্রীপুরের আবদার গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেন তাঁর বড় ভাই। দোতলা বাড়ির নিচতলা ফাঁকা ছিল।

প্রতিবেশী নূরজাহান বেগম জানান, বিদেশি হলেও সবার সঙ্গেই মিলেমিশে থাকতেন ফাতেমা। ভালো বাংলা বলতে পারতেন।

উপপরিদর্শক এখলাস উদ্দিন জানান, ঘরের ভেতর সব কিছুই গোছানো রয়েছে। কোনো কিছু লুট করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্যই এসেছিল।

শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, ‘পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের পাশেই একটি রক্তমাখা বঁটি ও ছুরি পাওয়া গেছে। মা ও দুই মেয়ের শরীরজুড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin