বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন

ফেসবুক আসক্তির কুফল ও ভয়াবহতা

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১৬৫ Time View

পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ মানুষই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অভ্যস্ত। এর একটা ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সমাজে। কিন্তু আপনি কি জানেন? আপনার শরীরেও পড়ছে এর প্রভাব। চলুন জেনে নিই এরকম কয়েকটি প্রভাবের কথা ডিজিটাল অনলাইন আসক্তিকে মনোবিজ্ঞানীরা এখন ডিজিটাল কোকেন নাম দিয়েছেন। Facebook যারা ব্যবহার করেন তাদের অনেকেই বলেছেন একটু পর পর Facebook এ ঢুকে তাদের দেখতে ইচ্ছে করে। নতুন কোনো notification এলো কিনা আর একবার ঢুকলে কিভাবে যে ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যায়।তা যেন তারা টেরই পান না। শুনে মাদকাসক্তির মতো মনে হচ্ছে কি? ব্রেন স্ক্যান এ মাদকাসক্ত আর অনলাইন আসক্তদের মস্তিষ্কের একই রকম ছবি দেখা গেছে দুজনেরই মস্তিষ্কের সামনের দিকের white matter গুলো ক্ষয়ে যাওয়া,Brain এর white matter অংশই নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের আবেগ মনোযোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ কে।

আর তা ক্ষয়ে যাওয়া মানে এই ক্ষমতা গুলোই কমে যাওয়া কাজেই সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার, আপনার আবেগকে ভারসাম্যহীন করতে পারে। নষ্ট করতে পারে, আপনার মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্যকে।

মানুষের মস্তিষ্কে, ডোপামিন নামে এক ধরনের কেমিক্যাল নিঃসরণ ঘটে প্রতিনিয়ত কিন্তু হঠাৎ যদি এমন কিছু ঘটে যা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো তখন আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় এই ডোপামিনের প্রবাহ এবং ভালোলাগাকে আরো বাড়াতে ব্রেন তখন ওই কারণটাকেই আরো বাড়াতে বলে প্রজনের অতিরিক্ত ডোপামিন এবং ভালো লাগার সাময়িক এই অনুভূতিকে ক্রমাগত বাড়াতে চাওয়া এটার নামই আসক্তি মনোযোগের ক্ষমতা নষ্ট কে কেও ভাবতে পারেন। কাজের মাঝে একটু পর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢু মেরে আপনি একজন দক্ষ মাল্টি টাস্কার হয়ে উঠছেন, ভুল সোশ্যাল মিডিয়ায় এডিকশন আর মাল্টিটাস্কিং দুটি দুই জিনিস।
গবেষণায় দেখা গেছে খুব বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যে মানুষেরা একাধিক কাজের দক্ষতা, তাদের অন্যদের চেয়ে কম।
বরং তাদের মনোযোগ এত বেশি বিক্ষিপ্ত যে এর ফলে তাদের স্মৃতিশক্তিও লোভ পাচ্ছে অন্যদের চেয়ে দ্রুত।
বিষয়টা কেমন?
ধরুন গভীর মনোযোগ দিয়ে আপনি কোন কাজ করছেন ঠিক সেই সময় মোবাইলটা বেজে উঠলে কেমন লাগে আপনার,বিরক্ত লাগে না।

মনে হয় না যে মনোযোগের সুতোটা ছিঁড়ে গেল এটা সেরকমই। আচ্ছা দাঁড়ান দাঁড়ান Mobile টা কি আসলেই বেজেছে? ভৌতিক কল,কোন কল বা SMS আসেনি কিন্তু আপনার কি মনে হল? যে মোবাইলটা বেজে উঠেছে বা প্যান্টের পকেটে থাকা ফোন set টা কাঁপছে যদি হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি ফ্যান্টাম vibration বা ভৌতিক কলসি indroom এ আক্রান্ত। আর এর কারণ হলো আধুনিক সময়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার মস্তিষ্কের ভেতরে যে hallucination বা বীরভূম তৈরি করছে তা একটা জরিপে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যতজন ছাত্রছাত্রীকে এর কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছে তাদের নব্বই ভাগেরই এই fantom vibration এর অভিজ্ঞতা হয়েছে।

স্মার্ট ফোন আমাদেরকে এতই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে একটু পর পর নিজের অজান্তেই আমরা মোবাইল হাতে তুলে নিয়ে দেখার জন্যে যে কেউ SMS দিলো বা mail করলো কিনা বা সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু এলো কিনা আত্মকেন্দ্রিকতা শুনলে অবাক লাগলেও এটাই একটা বাস্তবতা যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসলে আপনাকে অসামাজিকই করে তুলছে। বিচ্ছিন্ন আর স্বার্থপর ভুগছে।
গবেষণায় দেখা গেছে একজন মানুষ যখন সামনাসামনি আর একজন মানুষের সাথে কথা বলে তখন সে তিরিশ থেকে চল্লিশ ভাগ সময় নিজের বিষয়ে কথা বলে, বাকিটা শোনে।

কিন্তু একজন মানুষ যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দেয় সে আশি ভাগ সময় ব্যয় করে নিজেকে নিয়ে বলতে। স্বপ্ন ভঙ্গ হয়?
আমরা প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়া তে পরিচয় তারপর তা থেকে প্রেম বা পরিনয়ের কথা শুনি কিন্তু এদের একটা বড় অংশই পড়ে আর সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারে না স্বপ্ন ভঙ্গের কারণে কারণ virtual জগতের মানুষ আর রক্তমাংসের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই এক হয় না।
Online এ যে তরুণকে অসাধারণ প্রেমিক পুরুষ মনে হয়েছিল?
বাস্তবে তাকে বদমেজাজি খুনসুটের সঙ্গী হিসেবে আবিষ্কার করা খুব বিচিত্র কিছু নই।এমনি অপসরাদের মতো দেখতে ফেসবুকের আকর্ষণীয় তরুণীটি যে বাস্তবেও এমন হবে তার কি নিশ্চয়তা আছে? সাইবার গালি অনলাইন এ ঢুকে গালিগালাজ,অশ্লীল ভাষা বা আক্রমনাত্মক মন্তব্য ও হুমকি পেয়েছেন? এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই হচ্ছে। একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেছেন বা অনলাইন এ game খেলেছেন এমন শতকরা ঊনআশি জন মানুষই সাইবার বোলিং এর শিকার হয়েছেন এবং এদের একটা বড় অংশই কম বয়সী শিশু কিশোর।

যাদের জীবনে এর অনেক বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
যৌন হয়রানি, অর্থনাশ, সম্মানহানি এমনকি আত্মহত্যায় বাধ্য হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে কারো কারো ক্ষেত্রে। অতএব তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করুন ঠুনকো এই যোগাযোগের চেয়ে আপনার দেহের সুস্থতা মনের সুস্থিরতা অনেক বেশি দামি।

লেখকঃ মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin