বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

হামাস, হেজবুল্লাহ কারা? জেরুসালেম, গাজা, পশ্চিম তীর সম্পর্কে তথ্য

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১৯০ Time View

তিরিশ দিন ইজরাইলের সংঘাতের ইতিহাস যেমন দীর্ঘ তেমনই জটিল। ফিলিস্তিনের মধ্যে যে তিনটি অংশ গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হচ্ছে গাঁজা, পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেম আর এই মুহূর্তে ইজরাইলের বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ দুই নাম হামাস ও হেসবুল্লা। ইজরায়েল ফিলিস্তিন সংকটের একটা গুরুত্বপূর্ণ নাম জেলজালেম। আরবদের সাথে যুদ্ধে জিতে ইজরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় উনিশশো সাতষট্টি সালের ছয় দিনের যুদ্ধে এবং পুরো জেরুজালেম শহরটিকে ইজরায়েলি রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে ফিলিস্তিনের আর জেরুজালিমকে নিজেদের রাজধানী বলে মনে করে যদিও সেটার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বেশ কমই আছে। তারা সব সময়ই বলে আসছে পূর্ব জেরুজালেম হবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী।

ইজরায়েল ও জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে দাবি করে এবং দুহাজার সতেরো সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর স্বীকৃতি দেন এর পরের বছর মার্কিন দূতাবাস তেলাবীব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়া হয়। যেটা নিয়ে বেশ প্রতিক্রিয়া হয় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। প্রাচীন এই শহরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর কারণ ইসলাম ইহুদী এবং খ্রিস্টান ধর্মের পবিত্র ধর্মীয় স্থাপনার অনেকগুলোই এই শহরে। বিশেষত আলাক্সা মসজিদ ছিল সবসময় বিরোধের কেন্দ্রে। যেটা ইহুদীদের কাছে temple mount হিসেবে পরিচিত। পূর্ব জেরুজালেম ইজরায়েল অধিকৃত হলেও আলাক্সা বা টেম্পেল মাউন্ট এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে একটি জর্ডানি ফিলিস্তিনী ওয়াকস প্রতিষ্ঠান। ইজরায়েলেরা সেখানে যেতে পারলেও তাদের প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ অবশ্য ইজরায়েলের নানাবিধ কর্মকাণ্ড প্রায়শই এ জায়গায় বিক্ষোভ সহিংসতার জন্ম দেন।

ইজরাইল, মিশর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে অবস্থিত গাঁজা উপত্যকা এটি একচল্লিশ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং মাত্র দশ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি অঞ্চল অথচ সেই ছোট্ট অংশে প্রায় বাইশ থেকে তেইশ লাখের মতো মানুষ বসবাস করে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এটাই। উনিশশো আটচল্লিশ সালে মিশর এই অঞ্চলের পরিচালনা শুরু করে উনিশশো সাতষট্টি সালে এর দখল নেয় ইজরায়েল দু হাজার পাঁচ সালে সেখান থেকে নিজেদের সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের প্রত্যাহার করে নেয় ইজরায়েল। তবে এখনো ইজরায়েল গাঁজা এবং এর উপকূলীয় এলাকার আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ করে পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে কারা যাতায়াত করবে ও কি ধরনের পণ্য প্রবেশ করতে পারবে সেসব তদারকি করে। একইভাবে মিশর ও গাঁজা সীমান্ত দিয়ে কারা প্রবেশ করবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।

পশ্চিম তিন নামটি এসেছে মূলত জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের অংশ হওয়ার কারণে এর উত্তর দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে ইজরায়েল আর পূর্বে জর্ডান। উনিশশো সাতষট্টি সালের যুদ্ধে এই অংশটিরও দখল নেয় ইজরায়েল। উনিশশো তিরানব্বই সালের অস্ত্র চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠন হলেও এই অংশকে পুরোপুরি ছাড়েনি ইজরায়েল। ফিলিস্তিনেরা পশ্চিম তীরকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অংশ মনে করে। তবে গত পঞ্চাশ বছরে ক্রমাগত এই অংশে বসতি বাড়িয়ে গেছে ইজরায়েল চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পশ্চিম তীরে যেখানে এক লাখ দশ হাজারের মতো ইহুদী ছিল সেই সংখ্যা এখন প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ। বিপরীতে ফিলিস্তিনই থাকে প্রায় আঠাশ লাখ হ্যামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং একই সাথে রাজনৈতিক দল যারা গাঁজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে এই গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছিল প্রথম ইনতিফাদা বা সংগ্রামের অংশ হিসেবে আশির দশকের শেষের দিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিনের শাখা হিসেবে গাঁজা উপত্যকায় দুই হাজার ছয় সালের নির্বাচনে রাজনৈতিক দল হারায় হামাসের প্রার্থীরা।

দুহাজার সাত সালে ইজরাইলকে হটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে হামাস গোষ্ঠী এরপর থেকে গাঁজার ক্ষমতায় তারাই আছে এবং ইজরায়েলের সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছে। দু হাজার সাত সাল থেকে ইজরায়েল এবং মিশর একজোট হয়ে গাঁজা উপত্যকা অবরোধ করে রেখেছে। ইজরায়েল বলে সেটা নিরাপত্তার স্বার্থে করা হয়েছে তবে তাতে করে হামাসের বার বার রকেট হামলা বা রকেট নিক্ষেপ বন্ধ হয় নি ইজরাইলে এবারের হামলার পেছনে ইরানের কথা বারবার উঠে আসছে কারণ হামাসের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা আসে মূলত ইরান থেকে। হামাসকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণও দেয় ইরান। ইজরাইল আমেরিকা সহ পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষত এই সামরিক শাখাকে।

আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়াতে এ বছরই হামাসের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া এবং সৌদি আরব সফর করেছে হামলা চালানোর পর থেকেই ইসরায়েলে হামলা চালানো শুরু করেছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লা সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে ইজরায়েল, লেবানন, সীমান্তে আশির দশকের শুরুর দিকে হেজবুল্লা গঠন করেছিল ইরানের revolutionary guards উদ্দেশ্য ছিল লেবাননে ইসলামিক আন্দোলনের প্রসার ও সেখানে হামলা করা। ইজরায়েলীদের সাথে লড়াই মূলত সিয়া মুসলিমদের নিয়ে গঠন হয় হেসবুল্লা হিজবুল্লা ইজরাইলের সাথে সবচেয়ে বড় আকারের যুদ্ধ করেছে দুই হাজার ছয় সালে। চৌত্রিশ দিনের সে যুদ্ধে লেবাননের এক হাজার একশো পঁচিশের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় যাদের বেশিরভাগ ছিল সাধারণ নাগরিক বিপরীতে ইজরায়েলে মৃত্যু হয়েছিল একশো চৌষট্টি জনের যাদের বেশিরভাগই ছিল সেনা। এরপর থেকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে গেছে গোষ্ঠীটি। দু হাজার বারো সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদকে সুন্নি বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় নিয়োগের পর থেকে তাদের সামরিক সক্ষমতা বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইজরায়েলসহ বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ নিষিদ্ধ করেছে এই গোষ্ঠীকে।

লেখক: মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin