হানি নাটস বাংলায় যাকে বলা হচ্ছে মধুময় বাদাম। ফেসবুক খুলতেই নিউজ ফিড জুড়ে দেখা মেলে যার ভুরি ভুরি বিজ্ঞাপন। শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে কিংবা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি নাকি বিশেষ কার্যকরী। অনেক বিজ্ঞাপনে দেখা যায় যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির নিশ্চয়তা ও চটকদার সেইসব বিজ্ঞাপনের কারণে হানি নাটস হঠাৎই উঠে আসে আলোচনায়। অনলাইন পেরিয়ে বোতলে বোতলে যেন ছড়িয়ে পড়ে ভালোবাসার সেই রসায়ন। কিন্তু সম্প্রতি এর পুষ্টিগুণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সত্যিই ঠিক কতটা উপকারী এই খাবার? নাকি প্রচারনার আড়ালে সবটাই রমরমা ব্যবসা? পুষ্টিবিদ্যায় বা কি বলছেন? জানতে হলে আমার লেখাটি পড়ুন।
প্রতিদিন মাত্র দুই থেকে চার চামচ হানি নাটস খাওয়ার অভ্যাস আপনার উপকার করবে তা এক কথায় অকল্পনীয়। এটি খুব তাড়াতাড়ি হজম হয় তাই আপনাকে ইনস্ট্যান্ট এনার্জি যোগাবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই থাকায় এটি আপনার বয়সের ছাপও পড়তে দেবে না মূলত এভাবেই হানি নাটস নিয়ে বিজ্ঞাপন জমে উঠেছে সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া নানা আলোচনা ও এই খাবার নিয়ে ফেসবুক লাইভে ব্যাপক প্রচারণায় খাবারটিকে ভাইরাল করে তুলেছে কোনো কোনো বিক্রেতা তো মধু সংগ্রহের কাজে নিজে চলে যাচ্ছেন সুন্দরবন কিংবা লিচু বাগানে অনেক লাইভের সব উপকরণ এক করে চেটেপুটে খেয়েও দেখানো হচ্ছে। ট্রেন টপিক, তাই এ নিয়ে ট্রলও হচ্ছে সমানে। সব মিলিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ইতিবাচক নেতিবাচক দুই ভাবেই এসেছে তুমুল জনপ্রিয় এই হানি নাটসের নাম। এবার আসি সেই আলোচিত প্রশ্নে আসলে ঠিক কতটা পুষ্টিগুণ রয়েছে আকর্ষণীয় এই খাবারে? হানি নাটস নিয়ে এত এত আলোচনা নতুন মনে হলেও এর জনপ্রিয়তা এবং ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরনো।
গবেষকরা বলছে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে মধু ও বাদাম মিশ্রিত খাবারের চাহিদা ছিল সেই প্রাচীনকাল থেকেই এর মধ্যে বাদামের উচ্চ মাত্রার পুষ্টিগুণ এই চাহিদার অন্যতম কারণ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ফেসবুক নির্ভর বিক্রেতারাও কিন্তু নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তাদের হানি নাটস সৌদি আরবের তিন ফল ও খেজুর এবং দেশি বিদেশি হরেক রকম বাদাম মিশিয়ে তৈরি করা হয়। ভিডিওতে সব উপকরণ এক করে মিশ্রণটি তৈরির প্রক্রিয়াও দেখিয়ে দিচ্ছে তারা। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় গ্রিক ও রোমানরা ওষুধ হিসেবে বাদাম ব্যবহার করতো আর প্রাকৃতিক ভাবে বাদাম এতটাই উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন যে শাকসবজি ফলমূল এবং মাংসের পাশাপাশি বাদামের অবস্থানটাও বেশ শক্ত তবে মধু মিশ্রিত বাদাম যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কতটা উপকারী এ নিয়ে তেমন কোনো তথ্য না পাওয়া গেলেও পুষ্টিবিদদের বক্তব্য হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাদামের ভূমিকা অনন্য বাদামে বিদ্যমান ও মেগা তিন চর্বি হৃদপিন্ড ভালো রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
এছাড়া বাদামে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও আয়রন রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দৈহিক গঠন সুন্দর করে। এছাড়া বাদাম, হাড় শক্ত করে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে স্মৃতি শক্তি বাড়ায় ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীর জন্য বাদাম দারুন উপকারী। আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে প্রতিদিন একমুঠো বাদাম শরীরকে চাঙ্গা তো রাখেই সেই সাথে একাধিক রোগকেও দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে অন্যদিকে মধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী আমাদের শরীরের জন্য মধুর উপকারিতা এতটাই বেশি যে কোরান এবং হাদিসেও মধুর অনেক গুনাগুন সম্পর্কে বলা হয়েছে।
পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার দিক বিবেচনা করলে মধুকে বলা যায় মহৌষধ এটি যেমন বলব বৃদ্ধিকারক তেমনি সুস্বাদু। মধু দেহের তাপ ও শক্তি যুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। ভালো মধুর মধ্যে এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এ ছাড়া হৃদরোগ প্রতিরোধ করা রক্তনালী প্রসরনের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের সহায়তা করা হৃদপিশীর কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা সহ মধুর আছে আরো নানান উপকারিতা। তাই পুষ্টি বিদ্যেরাও মানছেন হানি নাটসে থাকা মধু ও বিভিন্ন বাদাম একসঙ্গে খেলে বেশ উপকারিতা মেলে তবে তারা এটাও বলছেন চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা না দিয়ে অতি উচ্চ পুষ্টি আর ক্যালোরিতে ভরপুর এই খাবার খেতে হবে পরিমান বুঝছে।
লেখকঃ মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলাম লেখক।