রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি ব্যবসায়িক ফোরামে বক্তৃতায় বলেছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সফল হবে না। এর পাশাপাশি তিনি ব্যবসায়ীদের রাশিয়ায় বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

শুক্রবার বক্তৃতা দেয়ার সময় পুতিন ইউক্রেনেযুদ্ধের পক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন। পাশাপাশি বলেন, ‘যারা চায় তাদের সঙ্গে’ অর্থনৈতিক সহযোগিতার হাত বাড়াবে রাশিয়া।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ‘প্রয়োজনীয়’

সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তৃতার সময়, ইউক্রেনে আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। পুতিন বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমাদের জন্য ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং হুমকির ফলে রাশিয়া একটি বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন ছিল। তবে এই অভিযান বাধ্যতামূলক এবং প্রয়োজনীয়।”

পুতিন বারবার বলেন, প্রাথমিকভাবেইউক্রেনের পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে রুশভাষী লোকদের ‘রক্ষা’ করতেই এই অভিযান করেছিল রাশিয়া।

রাশিয়ার ‘দাভোস’-এ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা নিখোঁজ!

পুতিনের নিজের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার উত্তর হিসাবে এই শহরে ফোরামের আয়োজন করা হয়। বিগত বছরগুলিতে যে পশ্চিমা কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীরা এসেছিলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে তাদের কারো দেখা মেলেনি চলতি বছরে।

প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘অভিযান’-এর কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেন পুতিন। তার কথায়, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সফল হওয়ার কোন সম্ভাবনা শুরু থেকেই ছিল না। পুটিন বলেন, ‘‘আমরা শক্তিশালী এবং আমরা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি।”

পুতিনের বক্তব্য, রাশিয়া ‘উদার অর্থনীতি’ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথ অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি রুশ কোম্পানিগুলিকে দেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি। তার বিশ্বাস, ম্যাকডোনাল্ডস এবং মাইক্রোসীফটের মতো যেসব প্রতিষ্ঠান রাশিয়া ছেড়ে গেছে তাদের বিকল্প সহজেই মিলবে।

পুতিন বলেন, ‘‘আমরা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করছি। আমরা আর্থিক বাজার, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বাণিজ্য ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করেছি।”

প্রথম দিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলে চাপে পড়লেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য রাশিয়ার রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। তবে দেশটির সরকারি হিসাবেই চলতি বছর মূল্যস্ফীতির হার ১৬ দশমিক সাত শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এটি যথেষ্ট বেশি বলে স্বীকার করেছেন পুটিনও।

ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্যের জন্য দোষারোপ

রুশ নেতা বিশ্বব্যাপী শস্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়েমন্তব্য করেছেন। আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মতো অঞ্চলে খাদ্য সংকটের কথা বলেছেন। পুতিনের দাবি, ইউক্রেন দেশটির বন্দরের চারপাশে ‘মাইন’ স্থাপন করে শস্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও ইউক্রেনের শস্য সরবরাহ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নগণ্য।

পুতিনের অভিযোগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ টাকা ছাপিয়ে বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য ‘ছিনতাই করছে’। মস্কো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য ও সার রপ্তানি বাড়াবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।