‘মা’ শব্দটিই একটি বিশেষণ, শব্দটিতে লুকিয়ে থাকে নিঃসঙ্কোচ নির্ভরতার সংজ্ঞা। আমাদের প্রায় সকলেরই হয়তো যাপিত জীবনের প্রথম উচ্চারিত শব্দটিই হচ্ছে ‘মা’। মূলত নাড়ি ছিঁড়ে শারীরিক বিচ্ছেদের মধ্য দিয়েই মা এবং সন্তানের যাত্রা শুরুর গল্প, কিন্তু আত্নীক ভালোবাসার মায়ার বুননে অটল থাকে এ সম্পর্কের বুনিয়াদ আজীবন।
এতো জানা কথাই? নাহ মা কিংবা সন্তানের জানা গল্প লিখতে নয় আজ বসেছি আরেকজন ‘মা’কে নিয়ে লিখতে, যার সাথে কোন রক্তের সম্পর্কের সুতো জড়িয়ে থাকেনা। জড়িয়ে থাকে কিছু ভালোবাসার গল্প।
জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির জননী অর্থাৎ দ্যাম্পত্যসঙ্গীর জননী’কে একটি বয়সের পর আমাদের সবচেয়ে প্রিয় এবং নির্ভরতার শব্দটি উপহার দিতে হয়।
‘মা’ বলে ডাকার মধ্য দিয়ে তৈরি হয় একটি মায়ার সম্পর্ক, তৈরি হয় নতুন একটি পরিবার। অথচ মা এবং সন্তানের এই ডাকের মধ্য দিয়ে সেই ভালেবাসার বুনিয়াদটা প্রায়শই অনুপস্থিত থেকে যায় শাশুড়ি এবং পুত্রবধূর মাঝে।
খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে বড় সড় বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিবারের পরিবেশটিকে অনিয়ন্ত্রিত করে তোলায় শাশুড়ি- বউয়ের সম্পর্কের উদাহরণ বহু যুগ ধরে উপন্যাস থেকে শুরু করে নাটক চলচ্চিত্র সর্বত্র বিস্তৃত। আজকাল টেলিভিশন সিরিয়ালগুলোর মুল বিষয়বস্তুই হয়ে দাঁড়িয়েছে এ সম্পর্কের টক-ঝাল সমীকরণ।
অথচ দুজন মিলে চাইলেই কিন্তু নিজেদের সংসারটিকে গুছিয়ে রাখা সম্ভব। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে শাশুড়ি-বউয়ের সম্পর্ক মধুর হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-
ভারসাম্য স্থাপন
অনেক ক্ষেত্রে শাশুড়ির ব্যবহার বউয়ের জন্য স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। বউকে আঘাত করে কথা বলতে পারেন তিনি। বউয়ের নেওয়া সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করতে পারেন। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে শাশুড়ির সঙ্গে এক ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করা উচিত।
নয় কোনো অবহেলা
মনে রাখতে হবে, স্বামীর জীবনে অন্যতম একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তাঁর মা। মা তাঁকে লালনপালন করে বড় করেছেন। এত দিন মা ছিলেন তাঁর সব। সুতরাং স্বামীর মাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। সংসারে, স্বামীর জীবনে তাঁর গুরুত্ব বুঝতে হবে। তাঁকে বোঝার চেষ্টা করুন। তাঁর সঙ্গে পরশ্রীকাতরতা পরিহার করুন।
বরফ গলান
শাশুড়ি ও বউয়ের মন মানসিকতা এক না হওয়াটাই স্বাভাবিক। দুজন দুজনের থেকে ভিন্ন। তাই দুজনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দিতে পারে। কিন্তু এই মতপার্থক্য দূর করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। শাশুড়ির সঙ্গে যথাসম্ভব বেশি বেশি কথা বলতে হবে। কথা বলে সম্পর্কের কঠিন বরফ গলাতে হবে। এতে স্বস্তির মাত্রা বাড়বে। শক্তিশালী হবে পারস্পরিক বোঝাপড়া।
নমনীয় হোন
শাশুড়ি তাঁর সিদ্ধান্তে একদমই অটল। বউও তাঁর দিক থেকে অনড়। এমন হলে সম্পর্ক দিন দিন খারাপের দিকেই যাবে। বরং এ ক্ষেত্রে বউ একটু নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন। শাশুড়ির চোখ রাঙানির মুখেও ধৈর্য ধারণ করুন। নরম সুরে কথা বলুন। শাশুড়ির সমালোচনা পরিহার করাই ভালো।
হাস্যরস করুন
হালকা ধরনের কৌতুক, হাস্যরস বউ-শাশুড়ির মধ্যকার সম্পর্ককে আরও সহজ করে তুলতে পারে। শাশুড়ি হয়তো বউয়ের বিরুদ্ধে সারাক্ষণ অভিযোগ করেই চলছেন। বউয়ের উচিত এটাকে সহজভাবে নেওয়া। হাস্যরস করে অভিযোগগুলো উড়িয়ে দেওয়া।
তর্ক পরিহার
তর্কে তর্ক বাড়ে। দুজনে মধ্যে কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে পাল্টা জবাব বা তর্ক পরিহার করা শ্রেয়। ক্ষুব্ধ হয়ে শাশুড়ি তাঁর কথা চালিয়ে গেলেও আপনি থেমে যান। পাল্টা জবাব দিলে শাশুড়ি আরও কথা বলার সুযোগ পাবেন। এতে পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিতে পারে। শান্ত হলে শাশুড়িকে সব বুঝিয়ে বলুন।
ভুলের ব্যাখ্যা
কোনো কারণে দুজনের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হলে দ্রুত তা ব্যাখ্যা করুন। ভয়ে বা লজ্জায় মনের মধ্যে কথা চেপে না রাখাই ভালো। শাশুড়ির পাশে গিয়ে বসুন। আন্তরিকতা নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির বিষয়টি তাঁকে গুছিয়ে বলুন।
প্রশংসা
শাশুড়ির কাজের স্বীকৃতি দিন। পরিবারে তাঁর অবদান, ভালো কাজের প্রশংসা প্রকাশ্যে করুন। তাঁকে জানিয়ে দিন, তাঁর প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতার কমতি নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা পরিহার করা উচিত। কারণ, এতে আপনার মনোভাব প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। সুস্পষ্টভাবে মন থেকে পরিমিত প্রশংসা করুন।