বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন

কিশোরীর প্রথম পিরিয়ড শুরু হলে যা করবেন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১
  • ৪৪৪ Time View

‘কিশোরীর মাসিক (পিরিয়ড) শুরু হওয়ার পর তার কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি অন্তত ছয় মাস তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কারণ, এটি জীবনের শুরুতে মাসিকের ভয় কিংবা মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা কাটিয়ে ওঠে এর সঙ্গে মেয়েদের মানিয়ে নিতে সহায়তা করবে,’ বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের অধ্যাপক শিউলী চৌধুরী।

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সালমা বেগম বলেছেন, মাসিকের শুরুটা অনেক মেয়ের কাছেই ভয়ের হয়, যার রেশ জীবনের অনেকদিন ধরেই অনেক মেয়েকে বহন করতে হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে কথা বলার বা কারও পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ পাইনি। কারণ, মাসিকের বিষয়ে ঘরে-বাইরে কথা বলাটা কিছুদিন আগেও ছিল কঠিন। মা যেটুকু বলেছেন তাই জানতাম শুরুতে। সেখানে হাইজিন ধারণাটাই ছিল না। অথচ নিজেও কষ্ট করেছি। আবার বন্ধুদের কয়েকজনকে দেখেছি প্রচণ্ড ব্যথা কীভাবে সহ্য করতো। কিন্তু কেউ এটিকে গুরুত্ব দিত না।’

মূলত মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ অনেক মেয়ের জন্যই কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। আবার কেউ কেউ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন তলপেটে।

মেয়ে এবং তার পরিবারের যা করণীয়

চিকিৎসক শিউলী চৌধুরী বলেছেন, প্রথমত কাউন্সেলিং, দ্বিতীয়ত পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং তৃতীয়ত বিশ্রাম- এগুলো নিশ্চিত করতে হবে এমন পরিস্থিতিতে।

তিনি বলেন, ‘অনেক রক্তক্ষরণ হলে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা হতে পারে। ঠিক সময়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে পরে অন্য জটিলতা হতে পারে। তাই এ সময় পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। মাসিকের সময় মেয়েদের শরীর থেকে ভিটামিন ও খনিজ বের হয়ে যায় – এজন্য চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে কথা বলে সুষম খাদ্যের তালিকা করে তাকে খাওয়াতে হবে।’

তবে মাসিকের শুরুর দিকে মায়েদের খোলামেলা আলাপ করা এবং কাউন্সেলিং শুরু করে ১-২ বছর পর্যন্ত ক্যালেন্ডার অর্থাৎ মাসিকের সময়কাল পর্যবেক্ষণ করে, তা নোট করে রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনাচরণ ও পরিচ্ছন্নতাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এ সময় মেয়েদের শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন আসে। কারও মাসিক নিয়মিত হলেও অনেকের দেরি করে হয় কিংবা ব্লিডিং বেশি হয়, যা অনেককে রক্তশূন্যতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। অন্য কোনো সমস্যা না হলে উদ্বিগ্ন না হয়ে তার পরিচর্যা করতে হবে। তবে অতিমাত্রায় ব্লিডিং হতেই থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।’

মাসিককে কেন্দ্র করে মেয়েদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিএসএমএমইউয়ের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের অধ্যাপক শিউলী চৌধুরী। এগুলো হলো:

১. পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে আয়রণসমৃদ্ধ খাবার

২. হাইজিন সম্পর্কে ধারণা

৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম

৪. খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ভিটামিন নিশ্চিত করা

৫. প্রয়োজনে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সহায়তা নেওয়া।

শিউলী চৌধুরী বলেন, বেশি ব্যথা হলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার হতে পারে এবং সময়মতো এটি করলে পরে অনেক জটিলতার আশঙ্কা থাকে না।

স্বাস্থ্যসম্মত মাসিক: ইউনিসেফের পরামর্শ

কিশোরীদের মাসিক চলাকালীন করণীয় সম্পর্কে ইউনিসেফের প্রচারপত্রে বলা হয়েছে ভবিষ্যতের মানবসম্পদ হিসেবে কিশোরীদের মাসিক তথা প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এতে মাসিক সময়কালে করণীয় সম্পর্কে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো:

১. প্রয়োজনে বাবা-মা ও পরিবারের অন্য নারী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা

২. স্যানিটারি ন্যাপকিন বা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা এবং অভিজ্ঞদের কাছে এর ব্যবহার বিধি জেনে নেওয়া

৩. মাসিকের সময় ব্যবহৃত পোশাক নোংরা পানিতে না ধোয়া বরং সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধোয়া

৭. মাসিকের কাপড় অন্ধকার ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় শুকাতে না দিয়ে বরং পরিষ্কার জায়গায় রোদে শুকানো ও নিরাপদ জায়গায় সংরক্ষণ

৮. পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, শাক সবজি ও ফলমূল খেতে হবে। অন্য সময়ের তুলনায় বেশি খাবার খাওয়া।

৯. তলপেটের ব্যথার সময় বোতলে গরম পানি নিয়ে স্যাক দিলে আরাম পাওয়া যাবে

১০. অতিরিক্ত ব্যথা বা সংরক্ষণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

১১. বিশ্রামে থাকতে হবে, তবে স্কুলে যাওয়া বা ঘরের কাজ করার মতো স্বাভাবিক কাজ করা অব্যাহত রাখা

১২. মাসিকের সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু ব্যায়াম শরীর ও মনকে ভালো রাখতে পারে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin