শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন

মোট জনসংখ্যার চেয়েও ১ কোটি বেশি জন্ম নিবন্ধন!

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১
  • ২০০ Time View

বাংলাদেশের প্রকৃত জনসংখ্যার চেয়ে জন্ম নিবন্ধনের সংখ্যা ৯৯ লাখ ছয় হাজার বেশি! এটা কিভাবে সম্ভব। এক বা দুই লাখ নয়, প্রায় এক কোটি বেশি। জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এখন পর্যন্ত ১৮ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষের জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে। অথচ আদমশুমারির চলতি বছরের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ২০ লাখ ৯৪ হাজার। তাহলে বাড়তি নিবন্ধনকারীরা কারা?

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জন্ম নিবন্ধন নির্ভুলভাবে করা হচ্ছে না। এক ব্যক্তির একাধিক নিবন্ধন, জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন না হওয়া, তথ্য যাচাইয়ে দুর্বলতা, মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন বাতিল করে তালিকা সংশোধন না করায় এমন অস্বাভাবিক হিসাব দেখা দিয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন হালনাগাদ করার পেছনে গত তিন দশকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি ছাড়াও বেশ কিছু দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় দেশের সরকারগুলো জন্ম নিবন্ধনকে অন্যতম দরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কারণ কমপক্ষে ১৬টি অত্যাবশ্যক পরিসেবা পেতে জন্ম নিবন্ধন সর্বপ্রথম প্রয়োজন। অথচ হিসাব ঠিক নেই। নিবন্ধনে ভুল হলে তা সংশোধনে এবং নতুন করে নিবন্ধন করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

দেখা যায়, রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের অনলাইনে কাজ করার জন্য অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের কাজ শেষ হয়নি। নিবন্ধনের আবেদন, মৃত্যু নিবন্ধনের আবেদন করতে গেলে সহজে করা যাচ্ছে না। ফেসবুক পেজটিরও গত বছর ৭ অক্টোবরের পর কোনও আপডেট নেই। আইন অনুযায়ী শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। মোট জন্ম নিবন্ধনের তুলনায় জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের হার খুবই কম।

সম্প্রতি ছেলের জন্ম নিবন্ধনে ভুল সংশোধন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার আবদুস সালাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, ছেলের নামের বানান ভুল হয়েছিল। পরে সেটি ঠিক করার জন্য কয়েক দিন আগে তিনি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সায়েদাবাদ এলাকার অফিসে যান। সেখানের কর্মীরা তাকে জানান, প্রথমে একটি ফরম অনলাইনে ঠিক করতে হবে। তাদের কথা অনুযায়ী ওই আঞ্চলিক অফিসের কিছু দূরেই কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে তিনি দেখেন, লাইন ধরে লোকজন অনলাইনে ফরম ঠিক করছে। সেখান থেকে ফরম সংশোধন করে সেটির প্রিন্ট নিয়ে অফিসে গেলে এবার তাকে ঢাকার ডিসি অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডিসি অফিসে যাওয়ার পর সেখান থেকে জানানো হয়, সিটি করপোরেশন অফিস থেকে ফরোয়ার্ডিংসহ ফরম জমা দিতে হবে। পরের দিন তিনি আবার সিটি করপোরেশন অফিসে যান। বিষয়টি বললে ফাইলটি রেখে দিয়ে তিন দিন পরে যেতে বলেন। তিন দিন পর ফরোয়ার্ডিং নিয়ে ডিসি অফিসে গিয়ে জমা দেওয়ার পর ডিসি অফিস থেকে জানানো হয়, ১০ থেকে ১৫ দিন পর তাকে ফোনে বিষয়টি জানানো হবে। কারেকশন হওয়ার পর তাকে সিটি করপোরেশনের অফিস থেকে জন্ম নিবন্ধনের প্রিন্ট কপি নিতে হবে। ১২ দিন চলে গেলেও এখনও তাকে ডিসি অফিস থেকে ফোন করা হয়নি।

আবদুস সালাম বলেন, ‘এত ভোগান্তি সহ্য করে কারো জন্ম নিবন্ধন সংশোধন না করতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক। ছেলের নাম সংশোধনের চেয়ে বাড়তি খরচ করে নতুন বানিয়ে নিলেই হতো।’

নিবন্ধনে ভুল সংশোধন বা নতুন করার জন্য রাজধানীর সিটি করপোরেশনের জোনাল অফিস এবং কাউন্সিলরের দফতরে ভিড় জমতে দেখা যায়।

তবে মূলত বয়স ও নাম পরিবর্তনের জন্য যেতে হয় ডিসি অফিসে। নিবন্ধনের অন্য কাজগুলো করে সিটি করপোরেশনের জোনাল অফিস। জন্ম নিবন্ধনের বিষয়টি সহজ বলা হলেও বাস্তবে কিছুটা জটিল বলে উল্লেখ করেছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জোন ৯-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. খায়রুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘দরকার না হলে অনেকে জন্ম নিবন্ধন করেন না। একটা সময় করার জন্য ততটা জোরও ছিল না। জন্ম নিবন্ধন আইন থাকলেও আগে সেটি কার্যকর ছিল না। যেহেতু ম্যানুয়ালি এখন জন্ম নিবন্ধন দেওয়া হয় না, তাই দুই জায়গা থেকে নেওয়ার সুযোগ নেই। কিছু বিষয় আমাদের হাতে নেই। যেমন বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে ডিসি অফিসে একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বিষয়টি দেখে থাকেন।’

খায়রুল হাসান বাড়তি নিবন্ধন হওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘জটিলতা তো কিছু আছে। কিছু বিষয়ের কারণে আদমশুমারির সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন সমান হওয়ার কথা নয়। দেখা গেল, একজনের গ্রামের বাড়ি এক জায়গায়, কিন্তু তিনি থাকেন অন্য জায়গায়। এখন তার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে গেলে সমস্যা হয়। তিনি ঢাকায় থাকেন, কিন্তু তার ভোটার আইডিতে বর্তমান ঠিকানা থাকার কারণে গ্রামের বাড়ির ঠিকানার জন্য তাকে জন্ম নিবন্ধন করতে হয়। জন্ম নিবন্ধন একদিকে যেমন জরুরি অন্যদিকে আবার জটিলও। চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে মানুষের ভোগান্তি না হয়।’

জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ই দেশের নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচলনা করছে। জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দুটি আলাদা কর্মযজ্ঞ। জন্ম নিবন্ধনের কাজটি করে ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের কমিশনার অফিস। সারা বছরই জন্ম নিবন্ধন বা তা সংশোধন করা যায়। ২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, বিয়ে নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং জমি নিবন্ধনে বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম সনদ ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জন্ম নিবন্ধনে অসংখ্য দ্বৈততা রয়েছে। কেউ ঢাকার বাইরে থেকে নিয়েছে, আবার ঢাকা থেকে নিয়েছে। কেউ নিবন্ধন সনদ হারিয়ে ফেলায় নতুন করে আবার নিয়েছে। এগুলো এখনও বাদ করা হয়নি। সার্ভারে সমস্যার কারণে একই নিবন্ধন একাধিকবার করার নজিরও আছে। তবে নতুন সফটওয়্যার স্থাপনের পর দ্বৈত নিবন্ধন খুঁজে বের করা যাচ্ছে। বর্তমানে দেশ ও দেশের বাইরে মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার স্থান থেকে জন্ম নিবন্ধন করা যাচ্ছে; যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুর পর থেকে এসব বিষয়ে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে।

রেজিস্ট্রার জেনারেল মানিক লাল বণিক বলেন, আগের অনেক সমস্যা কাটিয়ে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম নির্ভুলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন পার্থক্য তেমন নেই। জনসংখ্যার চেয়ে প্রায় এক কোটি বেশি নিবন্ধন থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু সমস্যার কারণে হতে পারে। তবে মোট হিসাবে হয়তো মৃত ব্যক্তিদের নিবন্ধন বাদ যায়নি।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin