বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি হারাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম!

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১
  • ৩৩৩ Time View

চোখ ভালো রাখার জন্য কাছের এবং দূরের দুইটি দৃষ্টিই জরুরি। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ সময় মানুষ ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, মোবাইল স্ক্রিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। চোখ দূরে তাকাচ্ছে না ফলে দিন দিন কমছে দূর দৃষ্টির কার্যক্ষমতা।

সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস এবং চীনের একটি জরিপে জানা গেছে, লকডাউনে চোখের সমস্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে, ছোটদের চোখে এই সমস্যা সবচেয়ে মারাত্মক। চিকিৎসকরা এর নাম দিয়েছেন ‘কোয়ারান্টিন মায়োপিয়া।’ এছাড়াও পড়াশোনার সঙ্গে মায়োপিয়ার সরাসরি যোগ আছে। যারা বেশি পড়াশোনা করেছেন, তাদের মায়োপিয়ার প্রবণতাও বেশি৷

চীনে এক লাখ ২০ হাজার স্কুল পড়ুয়া শিশুদের ওপর পরীক্ষা করে জানা গেছে, ছয় থেকে আট বছরের শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়া হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও ২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালে এই বয়সের শিশুদের চোখে মায়োপিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে তিন গুণ।
চিকিৎসকরা বলছেন, গত প্রায় এক বছরে শিশুরা বাড়িতে বসে থেকেছে। সারাক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকেছে। দূরের জিনিস দেখেনি৷ ফলে তাদের দূরের দৃষ্টিশক্তি ঠিকমতো তৈরিই হচ্ছে না। আট বছর পর্যন্ত শিশুদের চোখের গঠনগত পরিবর্তন হতে থাকে। ফলে এই বয়সের শিশুরা দূরের জিনিস না দেখতে দেখতে, দূরের দৃষ্টিশক্তিই হারিয়ে ফেলছে। বড় হওয়ার পরেও তাদের এই সমস্যা কাটবে না।

ছয় থেকে আট বছরের মধ্যে আইবল যদি খুব বড় হয়ে যায়, তাহলে দূরের দৃষ্টির ক্ষমতা একেবারে কমে যায়। খুব ফোকাস করে কাছের জিনিস দেখলে আইবল বড় হয়। এর থেকে রেটিনার সমস্যা হতে পারে। এমনকী বাড়ন্ত বয়সে অন্ধত্বও হতে পারে।

এদিকে, ব্রিয়ান হোলডেন ভিশন ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, একুশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছে, বিশ্বের পাঁচ বিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মানুষ দূরের জিনিস দেখতে পাওয়ার সমস্যায় ভুগবে।

মুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপথালমোলজির ডিরেক্টর নিকোলও এমনই জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো খুব ছোট বয়স থেকে কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা৷ প্রকৃতি ও পরিবারের সাথে সময় কাটানো এমনিই কমে গিয়েছে৷ তাই মাঠে গিয়ে সুদূরের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস এখন আর নেই বললেই চলে৷’

মায়োপিয়ার হাত থেকে বাঁচার উপায়:
যে কোনো কাজ করার সময় মাঝে মাঝেই একটু দূরের দিকে তাকানো। এটা অভ্যাস করে ফেলতে হবে। খুব মন দিয়ে মোবাইল বা ট্যাবলেটে কাজ করার সময়ও মাঝে মাঝেই দূরের দিকে তাকাতে হবে।

সূর্যের আলোও খুব জরুরি। দিনের কিছুটা বাইরে কাটাতেই হবে। সূর্যের আলো আইবলের গ্রোথ ভালো করে। স্ক্যানডেনেভিয়ার একটি সমীক্ষা বলছে, অন্ধকার মরসুমে মায়োপিয়া বাড়ে। আলো থাকলে মায়োপিয়ার সমস্যা অনেক কমে যায়।

স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে শুধুমাত্র মায়োপিয়ার সমস্যাই হয় না। এর ফলে শিশুদের চোখের জল শুকিয়ে যেতে থাকে। যাকে ‘ড্রাই আই’ বলা হয়। চোখকে ক্লান্ত করে দেয় স্ক্রিন। স্মার্টফোনের নীল আলোর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ইদানীং অবশ্য বহু স্মার্টফোনই ব্লু লাইট রিডাকশনের ব্যবস্থা থাকে। নাইট মোড থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘুমের অন্তত দুই ঘণ্টা আগে ফোন বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধরনের সমস্যা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ যুবক এই রোগে ভুগছেন। চীনের ৮০ শতাংশ মানুষ দূরের জিনিস ঠিকমতো দেখতে পান না। ইউরোপে অর্ধেক মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত।
সূত্র: ডয়চে ভেলে

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin