আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করলেও এরপর টানা ছয়টি ম্যাচে হেরে গেছে টাইগাররা। সবশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ে বিশ্বকাপ থেকে সবার আগে বিদায় নিশ্চিত করেছে সাকিব বাহিনী।
চলমান বিশ্বকাপের সপ্তম রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে পরাজয়ে টাইগারদের পয়েন্ট মাত্র ২। তাই কাগজ-কলমেও সাকিবদের বিদায়ই বলতে হচ্ছে বিশ্বকাপকে। একই সঙ্গে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনাও অনেকটা ফিকে হয়ে এসেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ভারত বিশ্বকাপের ৩১তম ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে ৪৫.১ ওভারেই মাত্র ২০৪ রানেই শেষ হয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
জবাবে ২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওপেনিংয়েই জয়ের ভিত গড়ে দেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার ফখর জামান ও আবদুল্লাহ শফিক। এই দুই ব্যাটারের ফিফটির পর মেহেদি হাসান মিরাজ একাই ৩ উইকেট শিকার করলেও ৩২.৩ ওভারে ৭ উইকেটের জয় ছিনিয়ে নেন বাবর আজমের দল।
২০৫ রানের স্বল্প লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই দাপট দেখিয়েছেন দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক এবং ফখর জামান। উদ্বোধনী জুটিতেই তারা দুজনে মিলে ১২৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের আশা ভেঙে দেন। পাকিস্তানের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে ২২তম ওভারে। এলবিডব্লিউতে আব্দুল্লাহ শফিককে ফেরান মেহেদি মিরাজ। তবে শফিক ততক্ষণে এবারের বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। মিরাজের বলে আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ৬৮ রানের ইনিংস।
এরপর বাবর আজম এসে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। ১৬ বলে ৯ করেই ফিরে গিয়েছেন সাজঘরে। এবারও উইকেট মিরাজের। ক্যাচটা নিয়েছেন তাওহীদ হৃদয়। আর সেঞ্চুরির দিকে ছুটতে থাকা ফখর জামান থেমেছেন ৮১ রানে। তাকেও ফিরিয়েছেন মিরাজই। বাউন্ডারি লাইনে রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় এই ওপেনারকে।
এরপর ক্রিজে থাকা ইফতেখার আহমেদ আর মোহাম্মদ রিজওয়ান দেখেশুনেই ইনিংস শেষ করেছেন। এই ম্যাচের পর ৭ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের। আর ৬ পয়েন্ট নিয়ে এখনও সেমির আশা বাঁচিয়ে রেখেছে পাকিস্তান।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই শাহিন আফ্রিদির শিকারে পরিণত হন তরুণ তানজিদ হাসান তামিম। এরপর রানখরায় থাকা নাজমুল হোসেন শান্তও টেকেননি বেশিক্ষণ। শাহিনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরার আগে ৪ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। জোড়া উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিমকে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে পাঠানো হলেও ৫ রানেই শেষ হয়েছে তার ইনিংস।
এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে জুটি গড়েন লিটন। এদিন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ। আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছেন ব্যাটে। তাদের জুটিতেই ১১তম ওভার শেষে দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে টাইগাররা। এরপর ১৭তম ওভারে এই জুটি পূর্ণ করে ৫০ রান। ২১তম ওভারে শতরান পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। কিন্তু ঠিক এর পরেই বিদায় নেন লিটন।
লিটন না পারলেও অর্ধশতক ,হাঁকিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ৭০ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৫৬ রান করে শাহিনের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। এরপর ব্যাট করতে নেমে একটা ছক্কা মেরেই ওসামা মীরের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তাওহীদ হৃদয়। সাকিব-মিরাজ জুটি বেঁধে দলকে ২০০ এর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সাকিব বিদায় নেন ১৮৫ রানে। হারিস রউফের শর্ট বলে আগা সালমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৬৪ বলে ৪ চারে ৪৩ রান করে আউট হন টাইগার দলপতি।
৪৪ ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ ওয়াসিমের দারুণ গতির বল তুলে মারতে চেয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু বলে-ব্যাটে হয়নি। ৩০ বলে ১ চার ও ১ ছয়ে ২৫ রান করেন মিরাজ। মিরাজের বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি বাংলাদেশ। শেষ তিন ব্যাটারকেই ফেরান মোহাম্মদ ওয়াসিম।
পাকিস্তানের পক্ষে সফলতম বোলার শাহিন আফ্রিদি। ৯ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। ৮.১ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ ওয়াসিমও। হারিস রউফের শিকার হয়েছেন দুই টাইগার। বাকি দুটি গেছে ইফতেখার ও উসামা মীরের ঝুলিতে।