সমাজের নানা কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবার ও সম্পর্কের ভাঙন। সেই স্রোতে অভিশাপের আর এক নাম যেন ক্রমবর্ধমান বিবাহ বিচ্ছেদ যার পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় অস্বাস্থ্যকর দাম্পত্য সম্পর্ককে আইন, পাপ পূর্ণ ও গীতিকথা দিয়ে এই সব ঠেকানো কঠিন। তবে পবিত্র কোরানে বিবাহ ও পারিবারিক জীবনকে পারস্পরিক সহমর্মিতা অন্তরের অনাবিল সুখ ও শান্তির উৎস হিসেবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন সুখী ও মধুময় করে তোলার বিশেষ কিছু নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সে সব নির্দেশনার আলোকে কিভাবে একটি সুখী ও সুস্থ বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি করা যায়। তাই জানাবো আমার আজকের লেখায়।
স্ত্রীর প্রশংসা করাঃ স্ত্রীদের প্রশংসা করতেন ভালো কাজের জন্য শুকরিয়া জানাতেন। আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা, বলেন আমি এর স্ত্রীদের মধ্যে থেকে খাদিজা আনহার চেয়ে অন্য কোনো স্ত্রীর প্রতি বেশি ঈর্ষা পোষণ করিনি কারণ তাঁর কথা স্মরণ করতেন এবং তাঁর প্রশংসা করতেন (বোখারী পাঁচ হাজার দুশো ঊনত্রিশ)।
দোষ গোপন রাখাঃ আমরা অনেক সময় অন্যের কাছে নিজের প্রিয় মানুষের সমালোচনা করে বেড়াই করে সংসারে কলহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয় এবং সুখ শান্তি চলে যায় এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তালা বলেন, “ধ্বংস তাদের জন্য যারা অগ্র পশ্চাতের দোষ বলে বেড়ায়” (সুরা উমাজা আয়াত এক)
গোপনীয়তা ফাঁস না করাঃ স্বামী স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস জঘন্যতম পাপ। নিজেদের একান্ত বিষয়ে অন্যের কাছে প্রকাশ করা গুরহিত অপরাধ। কেয়ামতের দিন সে হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট পর্যায়ের যে তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং স্ত্রী এবং স্ত্রী ও তার সঙ্গে বিদিত হয় অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয় (মুসলিম তিন হাজার চারশো চৌত্রিশ)।
নিজেকে পরিপাটি রাখাঃ পুরুষরা তাদের সঙ্গিনীকে সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে একইভাবে তারা তাদের সঙ্গীকেও সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। নবী বলেন আমি আমার স্ত্রীদের জন্য এমনই পরিবারটি থাকা পছন্দ করি,যেমন আমি তাদের ক্ষেত্রে সাজগোজ করে থাকতে পছন্দ করি( বাইহাতি চোদ্দ হাজার সাতশো আঠাশ) ।
ঘরের কাজে সহযোগিতা করাঃ কর্মব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও যখনই ঘরে ফিরবেন তখন একটু সময় করে চেষ্টা করবেন স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করার। বিশেষ করে ছুটির দিনটিতে দুইজনে ঘর গোছানোর কাজ শেয়ার করে নিন। আসবার রহমত উল্লাহ আলাইহি বলেন আমি হজরত আয়েশা আনহাকে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করিম ঘরে থাকা অবস্থায় কি করতেন? তিনি বললেন ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতেন অর্থাৎ পরিজনের সহায়তা করতেন সালাতের সময় সালাতের ছুটে যেতেন (বুখারী ছশো ছিয়াত্তর)।
ভরণপোষণের ব্যবস্থা করাঃ স্ত্রীর জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণপোষণের ব্যবস্থা করুন এক্ষেত্রে কৃপণ্যতা পরিহার করে সওয়াবের আশা রাখুন। কোনো মুসলিম যখন তার পরিবার পরিজনের প্রতি ব্যয় করে তা তার শ্রদ্ধা হিসেবে গণ্য হয় (বুখারী পাঁচ হাজার তিনশো একান্ন)।
মারধর না করাঃ স্ত্রীদের মারধর করা চরম অন্যায় আর নিম্ন মানসিকতার পরিচয় আব্দুল্লা বলেন, নবী করিম বলেছেন তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদের গোলামের মতো প্রহার করো না কেননা দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে (বোখারী পাঁচ হাজার দুশো চার)।
স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসুনঃ স্ত্রী যখনই আপনার সামনে আসবে তখনই তাকে মুচকি হাসি দিয়ে সম্ভাষণ জানান বেশিরভাগ সাক্ষাতের সময় আর বিদায়ের সময় আলিঙ্গনে তাকে বেঁধে রাখুন কিছুক্ষণ, ভেবে দেখুন আপনার স্ত্রী যদি সব সময় আপনাকে হাসিখুশি দেখে তাহলে আপনার জীবন কেমন সুখময় হবে স্ত্রীকে সুন্দর নামে ডাকা আপনার জীবন সঙ্গিনীকে ডাকার জন্য খুব সুন্দর একটা উপন্যাম নির্বাচন করুন। কখনো তাকে কোনো বাজে নামে বা মন্দ শব্দে ডাকবেন না। আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা বলেন,নবী ভালোবেসে কখনো কখনো আমার নাম হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন (ইবনে মাজা চব্বিশশো চুয়াত্তর।) সবচেয়ে বড় কথা পরস্পরের প্রতি শ্রাদ্ধাবোধ একটি সুখী পরিবার গঠনের মূলমন্ত্র। লেখার ধরণঃ বিশ্লেষণধর্মী।
লেখক : মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলাম লেখক