শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য কী রকম হবে?

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩
  • ২৫১ Time View

শিশুর বেড়ে ওঠার সময়টাতে পারিবারিক কলহ শিশুর ওপর বড় রকমের প্রভাব ফেলে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য কী রকম হবে, পড়ালেখায় সে কেমন করবে, এমনকি ভবিষ্যতে শিশু যেসব সম্পর্কে জড়াবে, সেগুলো কেমন হতে পারে ইত্যাদি সবকিছুর ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে পারিবারিক কলহ। তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক কেমন, এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ তাদের দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক। সমাজ বিজ্ঞানী ও শিশু মনোবিদরা বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতি বাচ্চাদের বিশ্বাস এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্কটাই বিশেষ জরুরি।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অতিমাত্রায় সন্দেহপ্রবণতা, ঝগড়াবিবাদ, পারিবারিক বন্ধনকে নষ্ট করে। তাদের মানসিক প্রতিবন্ধী করে তোলে। বাচ্চাদের কাছে মায়ের থেকে বাবার আদর-শাসন, বন্ধুর মতো সম্পর্ক তাদের আস্থাবান হতে শেখায়। একটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝগড়াঝাটি, অশান্তির চেয়ে দুজনের সম্মতিতে বিবাহ-বিচ্ছেদ ভালো, যদিও সন্তানদের জন্য বিবাহ-বিচ্ছেদ কাম্য নয়। সন্তানের শৈশবকে সুন্দর রাখতে কোনো বিষয় ঝগড়ার দিকে মোড় নিচ্ছে দেখলেই শিশুর বাবা অথবা মাকে সেখানেই থেমে যেতে হবে। শিশুর সামনে ঝগড়াঝাটি একদম করা যাবে না। কোনো বিষয়ে মতের অমিল হলে পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে অমতের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা এবং সমাধানে আসার জন্য পথ খুঁজতে পারেন। ঝগড়ার সময় প্রায় আমরা শুনি ‘বাবার পরিবারের মতো বেয়াদব হচ্ছ, মায়ের খারাপ সব কিছু পেয়েছ, রক্তই তো ভালো না সন্তান ভালো হবে কীভাবে!’ এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করা কখনই উচিত নয়। এসবের ফলে সন্তানের মনে বাবা বা মা সম্পর্কে অশ্রদ্ধার জন্ম নেয়।

তারা হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করে। একে অন্যকে গালাগাল, ভাঙচুর, জোরে চিৎকার করলে পরিবারে আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। একে অন্যের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে সন্তানের মঙ্গলার্থে। আবার অনেক সময় বাচ্চাদের খারাপ ফলাফল কিংবা ভুল-ত্রম্নটির জন্য বাবারা মায়ের ওপর দোষ চাপিয়ে মাকে তিরস্কার করে। তাই সবদিক বিবেচনা করে স্বামী-স্ত্রীর উচিত একজন আরেকজনকে বুঝে চলা। কোনোভাবেই একে অন্যকে সন্দেহ করা যাবে না। পারস্পরিক সম্পর্কে ইগো, ছিদ্রান্বেষিতা পরিহার করতে পারলে যে কোনো সংসারে কলহ-বিবাদ কমে যাবে। এতে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, সবল, বিবেকসম্পন্ন হয়ে বেড়ে উঠবে। পরিশীলিত, বিনয়ী ও শান্তিপ্রিয় জাতি গড়তে এবং আগামী দিনে সুনাগরিক হয়ে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিতে আমাদের শিশুদের আমাদের নিজেদেরই গড়ে তুলতে হবে। যেমন ‘সারাদিন বসে বসে টিভি দেখো! ছেলেকে/ মেয়েকে ঠিকমতো পড়াতেও পারো না! ঘরে বসে করোটা কী’? এ ধরনের দোষারোপ সন্তানের সামনে একদমই করা উচিত না। সন্তানেরা বন্ধু-বান্ধব বা পারিপার্শ্বিক অবস্থার শিকার হয়ে বিপথগামী হলে শুরুতেই তাকে তিরস্কার না করে সময় দিন।

ধৈর্য, সহমর্মিতায় তাকে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়া বাবা-মায়েরই কর্তব্য। বাবা-মায়ের ঝগড়ার ফলে সৃষ্টি হওয়া ক্ষোভ সন্তানের ওপর দিয়ে প্রকাশের চেষ্টা করা আমাদের দেশে খুবই একটা বাজে চর্চা। অনেক পরিবারে কলহ শুরুই হয় এসব দোষারোপ থেকে, যার প্রভাব সন্তানের ওপর অবধারিতভাবে পড়ে। সন্তানের কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ তার বাবা-মা। যখন একে অন্যকে দোষী বা খারাপ বানানোর চেষ্টায় ঝগড়া করে, তখন সেটা সন্তানের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তা আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের সন্তানদের শৈশব হোক সুন্দর, মধুময়। মুক্ত থাকুক তারা সকল কলুষতা থেকে। ভুলে গেলে চলবে না সন্তানরা ভালো থাকলে ভালো থাকবে পরিবার, ভালো থাকবে দেশ, তথা বিশ্ব।

তথ্যসুত্রঃ দৈনিক যায়যায়দিন, বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin