বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ন

সব জ্ঞানের উৎস মহান আল্লাহ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩
  • ১৩৩ Time View

মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ। এই সীমাবদ্ধ জ্ঞান সব বিষয়ে মানুষকে নির্ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত করতে পারে না। তা মানুষকে যেমন সঠিক পথে পরিচালিত করে আবার ভুল পথেও পরিচালিত করে। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা—‘…আমি তোমাদের (মানুষকে) অতি সামান্য জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছি। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮৫)

অনন্ত জ্ঞানভাণ্ডারের চাবি

সর্বশক্তির আঁধার যেমন আল্লাহ, তেমনি সর্বজ্ঞানের উত্সও স্বয়ং মহাজ্ঞানী আল্লাহ। অর্থাত্ অনন্ত জ্ঞানভাণ্ডারের চাবি মহাজ্ঞানী আল্লাহর হাতেই। ‘…তিনি (আল্লাহ তাআলা) যা ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা (সৃষ্টিকূল) আয়ত্ত করতে পারে না…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৫)

মহান স্রষ্টার সৃষ্টিতে জ্ঞানী-গুণী যারা গবেষণা করেন, আবিষ্কার করেন, সেসব গবেষণার উপাদানের স্রষ্টাও স্বয়ং আল্লাহ।

আল্লাহ তাআলার সিফাতি বা গুণগত নাম হলো ‘আলিম’ অর্থাত্ আল্লাহ মহা ইলম বা জ্ঞানের অধিকারী। মহান আল্লাহপাক হচ্ছেন নুরে মুতলাক অর্থাত্ এমন এক সত্তা, যা সম্পূর্ণই নুর। তাই তাঁর সব সিফাত বা গুণাবলিও নুর। ইলম বা জ্ঞানও আল্লাহপাকের একটি নুর।

আর যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করল, সে নবীদের মিরাস বা উত্তরাধিকারের বড় একটি অংশ পেয়ে গেল। আল্লাহপাকের ঘোষণা—‘তিনিই গায়েবের একমাত্র জ্ঞানী। তিনি তাঁর গায়েবের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না তাঁর মনোনীত কোনো রাসুল ব্যতিরেকে। তখন তিনি সেই রাসুলের অগ্রে ও পশ্চাতে রক্ষী নিযুক্ত করেন।’ (সুরা জিন, আয়াত : ২৬-২৭)
আমরা জানি না

জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণেই এই পৃথিবীর জ্ঞানী, গুণী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জ্ঞান নিয়ে অহংকার করা সাজে না।

‘আমরা কিছুই জানি না’—পৃথিবীর সব জ্ঞানী-গুণী ও বৈজ্ঞানিকরা আজ অকুণ্ঠচিত্তে এই কথাই বলছে।
যার মধ্যে আছে মানবীয় জ্ঞানের অপূর্ণতারই সুর জ্ঞান-বুদ্ধি-গবেষণা দিয়ে মানুষ চির অজ্ঞাত চির অজেয়কে ধরতে পারছে না কখনো। যতই সামনে এগোচ্ছে, লক্ষ্যবস্তু ততই দূরে সরে যাচ্ছে। তাই তো এত শূন্যতা! তাই তো এত হাহাকার। তাই তো আল্লাহপাক তাঁর কাছে জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করতে বলেছেন, ‘হে আমার বর, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ১১৪)

আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় মানুষের জ্ঞান

সহিহ বুখারিতে উল্লেখ আছে : মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী কে?’—এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর মধ্যে কথোপকথনের সময় একটা পাখি এসে তার চঞ্চু (ঠোঁট) দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি পান করল। তা দেখে খিজির (আ.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় আমার ও আপনার জ্ঞান এই পাখিটির সাগর থেকে তার চঞ্চুতে (ঠোঁটে) যে পরিমাণ পানি উঠল, তার চেয়ে বেশি নয়।’ (সুবহানাল্লাহ)

আল্লাহপাকের মনোনীত বান্দাদের জ্ঞান যদি এই হয়, তাহলে আমরা যারা সাধারণ মানুষ, জ্ঞানের বড়াই করছি, আমরা কত সামান্য জ্ঞানের অধিকারী?

যুগ যতই আধুনিক হোক

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগ যতই আধুনিক হোক, চিন্তা ও গবেষণা যতই ধারালো হোক, যুক্তি জ্ঞান ও গোঁড়ামি দিয়ে পরকালের মুক্তির জ্ঞানার্জন সম্ভব নয় এবং যুক্তিও সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন মহাজ্ঞানী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার বিধি-বিধান, জ্ঞান-বিজ্ঞানের গাইডলাইন, আল কোরআন মেনে, রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে চলা। জ্ঞান তখন প্রত্যক্ষ অনুভূতির মধ্যে এসে পূর্ণ হবে। অন্তরে তখন চির আধুনিক ইসলামের জ্ঞানের আলো জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠবে। ঈমান ও একিনের মূল কথা এটাই আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে সিরাতুল মুসতাকিম বা জ্ঞানের সরল-সোজা পথ, যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে নয়। কসমিক রেডিয়েশন, ইলেকট্রন-প্রোটন, অনু-পরমাণু শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, রুহ, মানব সৃষ্টি এবং বিশ্ব জগতের পরতে পরতে প্রবেশ করুন, চিন্তা ও ফিকির করুন; দেখবেন বিশাল বিশ্ব প্রকৃতি অত্যাশ্চর্য মোজেজায় পরিপূর্ণ!

জ্ঞানান্বেষণকারীদের জন্য সুসংবাদ

যে ব্যক্তি জ্ঞান পায়নি, সে কি পেয়েছে? যে ব্যক্তি ইলম বা জ্ঞান পেয়েছে তার পাওয়ার কি বাকি আছে? যদি তুমি নিঃস্ব হয়ে যাও, তবে জ্ঞানই হবে তোমার ধন। আর যদি ধনাঢ্য হয়ে যাও, তবে জ্ঞানই হবে তোমার অঙ্গসজ্জা, যা আল্লাহর স্মরণ থেকে তোমাকে গাফেল করবে না। জ্ঞানী ও মূর্খ কোনো দিন সমান নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘দৃষ্টিমান ও দৃষ্টিহীন সমান নয়, সমান নয় অন্ধকার ও আলো, সমান নয় ছায়া ও রৌদ্র।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ১৯, ২০, ২১)

জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মুমিনের হারানো সম্পদ

জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সবার জন্য। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ইকরা, তখন তিনি সব মানুষের জন্য পড়া ও গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের কথা বলেছেন। মুমিন বান্দা আল্লাহর খলিফা। দুনিয়াতে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে থেকে কখনো ইমাম আল গাজালি, হাফিজ, রুমি, শেখ সাদি, ইকবাল, ইবনে সিনা, আল কেমি, জাবের আল হাইয়ান, আল রাজি, ইমাম বুখারি, আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম শাফেয়ি প্রমুখের মতো তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। ইসলামের এই ক্রান্তিলগ্নে মুসলমানদের শত-সহস্র বাধা ডিঙিয়ে আল্লাহর রশিকে সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যেতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান ঈমানকে পূর্ণতা দেবে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে করবে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর। জ্ঞান-বিজ্ঞানের মতো উন্নতি হবে, চিন্তার যত প্রসার ঘটবে, বিজ্ঞানময় আল-কোরআনের জ্ঞান ততই স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

উপকারী ও বিশেষ জ্ঞান

যে উপকারী জ্ঞান এবং বিশেষ জ্ঞান রয়েছে আল-কোরআনের পাতায় পাতায়, নবী করিম (সা.)-এর আমীয় বাণীতে সাহাবি, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনদের আদর্শে, আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টিতে, আল্লাহপাগল জ্ঞানীদের বিভিন্ন গ্রন্থে; তা ঈমানকে সুদৃঢ় করে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক গবেষণা কর্মের দুয়ার খুলে দেয়। পৃথিবীর সব মানুষের জন্য তা উপকারী এবং বিশেষ জ্ঞান। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণকর বস্তুপ্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৯)

পরিশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষণার মাধ্যমেই শেষ করছি, ‘প্রত্যেক জ্ঞানীর ওপর আছেন এক মহাজ্ঞানী (আল্লাহ)।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৭৬)

লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin