বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন

কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দাকে নামাজের হিসাব দিতে হবে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩
  • ১৯৭ Time View

ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় ভিত্তি হলো নামাজ। নামাজ আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মহান রব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করার জন্য, মুসলমানদের প্রতি মিরাজের উপহার। যা আল্লাহতায়ালা তাঁর পিয়ারা হাবিবকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করে মিরাজের রাতে আল্লাহপাকের আরশে আজিমে মেহমান বানিয়ে মুসলমানদের জন্য এই উপহার প্রদান করেন।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করার আগে পবিত্র মক্কা ভূমিতেই নামাজ ফরজ হয়েছিল। মক্কা অধিবাসী আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করার আগে সম্রাট হিরাক্লিয়াসের এক প্রশ্নের উত্তরে নবীজি সম্পর্কে এভাবে পরিচয়দান করেন যে, এই নবী আমাদের নামাজ, সত্যবাদিতা ও সংযমশীলতার আদেশ করে থাকেন (বুখারি-১৭৭)।

নবীজি ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাত বা নামাজের হিসাব হবে। যদি সালাত ঠিক হয় তবে তার সব আমল সঠিকভাবে হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সব আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তিরমিজি-২৭৮)।

আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের নামাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোরআনুল কারিমে ৮২ বার নামাজের কথা বলেছেন। মহান রব্বুল আলামিন বলেন, পাপীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তোমরা কেন জাহান্নামে যাচ্ছ? তারা বলবে- আমরা নামাজি ছিলাম না, মিসকিনদের আহার করাতাম না, অন্যের দোষ তালাশকারীদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম, যার কারণে আজ আমরা জাহান্নামে যাচ্ছি। (সুরা মুদ্দাসসির-৪০/৪৫)।

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, মুমিনগণ সফলকাম, যারা তাদের সালাতে নম্রতা ও ভয়ভীতির সঙ্গে দণ্ডায়মান হয়। (সুরা মুমিনুন-১/২)।

অন্যত্র ইরশাদ করেন : আর যারা তাদের নিজেদের নামাজ যত্নের সঙ্গে হেফাজত করে অর্থাৎ যথাযথভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নামাজ আদায় করে, তারাই জান্নাতে অতি সম্মান ও ইজ্জতের সঙ্গে বসবাস করবে। (সুরা মাআরিজ ৩৪/৩৫)।

আল্লাহতায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, ওইসব নামাজির জন্য বড়ই আফসোসের বিষয় যারা তাদের সালাতে অমনোযোগী ও উদাসীন থাকে, (সুরা মাউন-৪/৫)। আল্লাহতায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, আর যারা তাদের নামাজে যত্নবান তারাই জান্নাতের ওয়ারিশ, যারা ফিরদৌসের ওয়ারিশ হবে এবং তথায় তারা চিরকাল থাকবে, (সুরা মুমিনুন-৯, ১০, ১১)।

আল্লাহতায়ালা অন্যত্র বলেন, নিশ্চয়ই নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ মহান রব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা বেশি বেশি করে আল্লাহর জন্য সেজদা, সালাত আদায় করতে থাক, তোমার প্রতিটি সেজদার কারণে আল্লাহতায়ালা তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ মাফ করবেন, (মুসলিম শরিফ-৭৩৫)।

নবীজি বলেন, বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে তখন, যখন সে সেজদারত থাকে, সুতরাং তোমরা সেজদা অবস্থায় বেশি বেশি প্রার্থনা কর। (মুসলিম শরিফ-৭৪৪)। নবীজি আরও বলেন, সালাত পাপমোচনকারী এবং ছোট ছোট গুনাহের প্রায়শ্চিত্ত রূপ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী গুনাহগুলো প্রায়শ্চিত্ত করে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়, (মুসলিম-৩৪৪)।

নবীজি বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সালাত ছেড়ে দিল সে যেন কুফরি করল, (বুখারি)। নবীজি অন্যত্র ইরশাদ করেন, বান্দা যখন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে সালাত আদায় করে, তখন তার গুনাহসমূহ এমনভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেমন বৃক্ষের পাতা ঝরে, (মুসনাদে আহমদ)।

একজন মুমিন ইমান আনার পর সর্বপ্রথম নামাজের আমলের ব্যাপারে নির্দেশিত হয়। এই আমলের ক্ষেত্রে ধনী-গরিব, আজাদ গোলাম, নারী-পুরুষের কোনো বিভেদ নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রত্যেক মুমিনের ওপর ফরজ। একজন কাফের ও মুমিনের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। একজন অসুস্থ, মুসাফির, এমনকি ভয়াবহ ইসলামিক যুদ্ধে লিপ্ত মুজাহিদের জন্যও নামাজ ছেড়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রিয় নবীর জন্য পৃথিবীর সর্বত্র জায়গাকে নামাজের জায়গা বানিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা প্রথমে মেরাজের রজনীতে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছিলেন, তারপর আল্লাহতায়ালার মানুষের প্রতি দয়া করে তা কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেন এবং ঘোষণা করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে ৫০ ওয়াক্তের সওয়াব দান করবেন।

উম্মতের দরদি পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের আগে বারবার বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছিলেন, তদুপরি তিনি উম্মতকে নামাজের ব্যাপারে সর্বশেষ বারবার তাগিদ দিয়েছেন। কেননা কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সব আমলের মধ্যে নামাজেরই হিসাব হবে। যার নামাজ সঠিক হবে, তার অন্যান্য হিসাব সহজ হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের যথাযথভাবে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলারবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin