বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন

১০ শ্রেণির মানুষের জন্য ফেরেশতাদের দোয়া

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০২৩
  • ১৮০ Time View

এমন কিছু সৌভাগ্যবান মানুষ আছেন, যাঁদের জন্য সম্মানিত ফেরেশতারা দোয়া করে থাকেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যারা আরশ বহনে রত এবং যারা তার চতুষ্পার্শ্বে ঘিরে আছে, তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসাসহ এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে। আর তারা মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের রব, তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। অতএব যারা তাওবা করে এবং তোমার পথ অবলম্বন করে তুমি তাদের ক্ষমা করো এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।

হে আমাদের রব, তুমি তাদের প্রবেশ করাও স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের দিয়েছ এবং তাদের মাতা-পিতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরও। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আর তুমি তাদের শাস্তি থেকে রক্ষা করো। সেদিন (কিয়ামতের দিন) তুমি যাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবে, তাকে তো অনুগ্রহই করবে, এটাই তো মহা সাফল্য।’ (সুরা মুমিন/গাফের, আয়াত : ৭-৯)

ফেরেশতারা আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। তারা নিষ্পাপ ও পূত-পবিত্র। তারা সর্বদা আল্লাহর তাসবিহ ও ইবাদতে মগ্ন থাকে। তাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

মানুষের জন্য ফেরেশতাদের দোয়া করার বিষয়টি কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।
এমন কিছু আমল আছে, যার মাধ্যমে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। নিম্নে ফেরেশতাদের দোয়াপ্রাপ্ত ১০ শ্রেণির মানুষের পরিচয় উল্লেখ করা হলো—

১. সালাত শেষে অজুসহ নিজ স্থানে অবস্থান করা : সালাত শেষে অজুসহ যেসব মুসল্লি স্বীয় স্থানে বসে থাকে তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা সালাতের পর নিজ স্থানে বসে থাকে, তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তার অজু ভঙ্গ না হবে, (তারা বলেন,) হে আল্লাহ, আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং হে আল্লাহ, আপনি তাদের ওপর দয়া করুন।’ (মুসনাদ আহমাদ : ৬৭২৭)

২. রোগী দেখতে যাওয়া : যারা রোগী দেখতে যায় বা রোগীর সেবা করে তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন।

এ মর্মে হাদিসে এসেছে, আলী (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকাল বেলা কোনো রোগীকে দেখতে গেল তার সঙ্গে ৭০ হাজার ফেরেশতা যায় এবং তারা সবাই সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্ধারণ করা হয়। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো রোগীকে দেখতে গেল, তার সঙ্গে ৭০ হাজার ফেরেশতা যায় এবং তারা সবাই সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্ধারণ করা হয়।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৯২৮; সহিহুল জামে, হাদিস : ৫৭৬৭)

৩. অজু করে ঘুমানো : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে রাত যাপন করেন তাঁর শিয়রে একজন ফেরেশতা রাত যাপন করেন। তিনি যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হন (কোনো কোনো বর্ণনা মতে, যতবার ঘুমের ভেতর নড়াচড়া করেন) তখন ওই ফেরেশতা বলতে থাকেন, হে আল্লাহ, অমুককে মাফ করে দিন। কেননা তিনি পবিত্র অবস্থায় রাত যাপন করেছেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১০৫১)

৪. মসজিদে প্রথম কাতারে সালাত আদায় করা : বারা বিন আজেব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯৮৭)

৫. দ্বিনি জ্ঞান শেখানো : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন, যারা মানুষকে কল্যাণকর বিষয় (দ্বিনি জ্ঞান) শেখায়। এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও সাগরের মাছ তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬০৯)

৬. রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়া : আবদুল্লাহ বিন আমের বিন রাবিয়া তার পিতা (আমের) (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি রাসুল (সা.)-কে মিম্বরে বক্তব্য দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পেশ করবে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করবে। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করতে থাকবে, যতক্ষণ সে দরুদ পেশ করতে থাকে। সুতরাং কম হোক বেশি হোক, যার ইচ্ছা সে দরুদ পড়তে পারে।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৫৭৪৪)

৭. দোয়া করলে দোয়া পাওয়া যায় : রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দোয়া করলে তা কবুল করা হয় এবং তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে। যখন সে তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে তখন নিযুক্ত ফেরেশতা বলে, আমিন। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, কবুল করুন এবং তোমার জন্য অনুরূপ (তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে আল্লাহ তোমাকেও তা দান করুন)।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৮)

৮. প্রতিদিন দান করা : প্রতিদিন কিছু না কিছু দান করলে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতি সকালে মানুষ যখন ঘুম থেকে ওঠে দুজন ফেরেশতা আসেন। তাদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ, খরচকারীর ধন আরো বাড়িয়ে দিন।’ আর দ্বিতীয়জন বলেন, ‘হে আল্লাহ, কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২২৬)

৯. নামাজের কাতারের ডানদিকে অবস্থান করা : রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব মানুষের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন, যারা কাতারের ডান পাশে সালাত আদায় করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৭৮)

১০. কাতারের মাঝখানে খালি জায়গা পূরণ করা : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন, যারা কাতারের সঙ্গে মিলিত হয়ে সালাত আদায় করে। আর যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করে, আল্লাহ এর কারণে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯৮৫)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin