শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন

গিবত থেকে নিজে বাঁচুন অন্যকেও বাঁচান

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ২০০ Time View

গিবত বা পরনিন্দা মানুষের অন্তরের প্রশান্তি ও পারিবারিক-সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী এক ঘৃণ্য অপরাধ। কোরআন গিবতকে নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো অরুচিকর ঘৃণিত কাজের সঙ্গে তুলনা করেছে। আর হাদিসে ব্যভিচারের চেয়ে মারাত্মক অপরাধ বলা হয়েছে। আজকের সমাজে গিবত এতটাই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে যে, মানুষ গিবতকে গুনাহই মনে করে না। কঠিন হারাম বিষয়টাকে আমরা একেবারেই খেলো বানিয়ে ফেলেছি। কোথাও দুই বা তিনজন একত্র হবে আর গিবত হবে না, এ যেন অকল্পনীয়। বর্তমানে যে কোনো আড্ডা গিবত ছাড়া অসম্পূর্ণই রয়ে যায়। এটি এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কারও দোষ অন্বেষণ কোরো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারও গিবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তওবা কবুলকারী এবং দয়ালু।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত ১২)

‘গিবত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা করা, কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, দোষারোপ করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা। ইসলামি শরিয়তে গিবত হারাম ও কবিরা গুনাহ। হাদিসের বর্ণনা, ‘যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায় তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ।’ (মুসলিম) আল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।… অবশ্যই তারা হুতামাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জানো হুতামা কী? তা আল্লাহর প্রজ্বালিত অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। নিশ্চয় বেষ্টন করে রাখবে, দীর্ঘায়িত স্তম্ভগুলোয়।’ (সুরা হুমাজা, আয়াত ১-৯) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কি জানো গিবত কাকে বলে?’ সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুল ভালো জানেন।’ তিনি বলেন, ‘তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গিবত।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল, আমি যে দোষের কথা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তা হলেও কি গিবত হবে?’ উত্তরে রসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যে দোষের কথা বল তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গিবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছ।’ (মুসলিম) অনেকে ভাবতে পারেন আমি তো গিবত করি না। অন্যে বলে আমি কেবল শুনি। না, তাদেরও রক্ষা নেই। কারণ তারা গিবতকারীকে সাহায্য করছে এ পাপ কাজ করতে। গিবতকারী গিবত করার জন্য যদি কাউকে না পায় তাহলে সে আর গিবত করতে পারবে না। তাই গিবত শ্রবণকারীদের জন্যও রয়েছে পাপের হুকুম। যে গিবত শোনে সে-ও গিবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। হাদিসে আছে, যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে অন্যের গিবত করে তখন তাকে থামতে বলুন, আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন। আর তাতেও যদি কাজ না হয় তবে সেখান থেকে সরে আসুন। কোনোভাবেই গিবত শোনা যাবে না। গিবতকারীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, মুসলিম)

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর (সা.) বলেন, যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো তখন আমি তামার নখবিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা নখগুলো দিয়ে তাদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? জিবরাইল (আ.) বললেন, এরা দুনিয়ায় মানুষের গোশত ভক্ষণ করত এবং তাদের মানসম্মান নষ্ট করত। অর্থাৎ তারা মানুষের গিবত ও চোগলখুরি করত। (আবু দাউদ) রসুল (সা.) বলেন, গিবতের কাফফারা হলো, তুমি যার গিবত করেছ তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি এভাবে করবে- ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও।’ (বায়হাকি)

 

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin