মাধবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী তেলিয়াপাড়া চা বাগানে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মাদকের এমন সহজলভ্যতার কারণে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া তরুণরাও আশঙ্কাজনকভাবে মাদকের দিকে ঝুঁকছে। তেলিয়াপাড়া চা বাগানে গাঁজা থেকে শুরু করে ভারতীয় মদ, বাংলা মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা রকম মাদক প্রকাশ্যে কেনাবেচা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভারত থেকে এসব মাদক সংগ্রহ করে এনে বিক্রি করে মাদক কারবারিরা। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করছেন কয়েকজন অভিভাবক।
জানা গেছে, একপ্রকার প্রকাশ্যে বিক্রি হয় মাদক। যুবকদের পাশাপাশি মাদকের আগ্রাসন গ্রাস করেছে স্কুল-কলেজগামী তরুণদেরও। শখের বসে মাদক গ্রহণ করে পরবর্তী সময় মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা। অভিজাত পরিবারের অনেক সন্তান এ মাদকের নেশায় ভয়াবহ রকম আসক্ত।
হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদক। স্থানীয় প্রশাসনের যেন মাদক নিয়ন্ত্রণের কোন উদ্যোগ নেই। যে কারণে মাদকের ব্যাপকতা প্রসার লাভ করেছে। মাঝে মাঝে ২ দুই একজন মাদক পাচারকারী গ্রেফতার হলেও, একাধিক মাদক মামলার চিন্হিত মাদক সম্রাটরা রয়েছে অধরা। যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে মদ, গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হুইস্কি, বিয়ার সহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য। উপজেলার একাধিক স্পটে রয়েছে মাদক পাচারকারীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। সন্ধ্যার পর চিহ্নিত কিছু স্পটে বসে মাদকের হাট। চিহ্নিত মাদক অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিরীহ চা শ্রমিকরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।
তাৎপর্যপূর্ণ তেলিয়াপাড়া চা বাগানে রয়েছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অতুলনীয় গৌরবগাঁথা স্মৃতি। ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধের পাশের চা বাগানে সন্ধা নামারপর চলে জমজমাট মাদক ব্যবসা। তেলিয়াপড়া চা বাগানে মাদকের গড ফাদার কোকন ও সন্তুস পান তাতির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক।
যাদের নেতৃত্বে চলছে মাদক ব্যবসা!
চা বাগানের সভাপতি খোকন পান তাতী, উরিশা লাইনের দূনপান তাতীর পুত্র- কুখ্যাত মাদক সম্রাট সন্তুষ পান তাতী, নতুন টিলার- বিশু তাতীর পুত্র আশিক তাতী, ১৬নং বস্তির তরুন পাশির পুত্র- সুখেশ পান তাতির নেতৃত্বে বেড়েছে মাদকের সর্বরাহ।
প্রতিদিন সন্তুোস পান তাতীর বাড়ির সামনে অপরিচিত মানুষের গাড়ীগুলো এভাবে রাখা হয়। বহিরাগতরা এভাবেই গাড়ী রেখে মাদক সেবন ও ক্রয় করার জন্য আসে।
জানা যায়, তেলিয়াপাড়া চা বাগানের জালাই লেকের পাড় মাছের খাবার রাখার ঘরে তরুন পাসীর পুত্র সুখেশ পাশির নেত্রত্বে একদল মাদক কারবারী মাদকদ্রব্য স্টক করে রাখে। সুযোগ বুঝে উল্লেখিত মাদক সম্রাটদের নেতৃত্বে চা বাগানের বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়ে সেগুলো বগিরাগতদের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়। সন্ধা নামার আগেই বহিরাগত মাদক সেবনকারীরা জড়ো হয় স্মৃতিসৌধের লেকের পাড় ও চা বাগানের বস্তিতে। চা বাগানের সভাপতি খোকন পান তাতীর বিরুদে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খোকন বাগানের সভাপতি হয়ে বনে গেছেন, রাজার হালে চলছে তার দিনকাল। অভিযোগ রয়েছে খোকন চা বাগানে গড়ে তুলেছেন বিশাল টেনওয়ার্ক। সংশ্লিষ্টরা জানান, খোকন বাগানের সভাপতি হয়ে বনে গেছেন, রাজার হালে চলছে তার দিনকাল। অভিযোগ রয়েছে খোকন চা বাগানে গড়ে তুলেছেন বিশাল অট্টালিকা। ৩০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে বাড়ি নির্মান চলমান। তার আয়ের উৎস কি? প্রশ্ন উঠেছে সে এত টাকা পেল কোথায়? যদি মাদক ব্যবসায় জড়িত না থাকে নিশ্চয়ই চা বাগানের চা পাতা চুরির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। অথবা গাছ পাচারে জড়িত রয়েছে। একাধিক বার তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়ার পরেও তিনি সা্ফাই গাইছেন মাদক ব্যবসা করছেন না। তাহলে কি তিনি আলাদিনের চেরাগ পেয়ে বসেছে।
এছাড়া সুরমা চা বাগানের ২০ বস্তি, বনগাও, এক্তিয়ারপুর, ভান্ডারুয়া এলাকায় রয়েছে অশংখ্য মাদকের স্পট। বিকাল বেলায় এসব এলাকাতেও মাদবসেবীদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।
গেল ২২ মার্চ বিকেলে হবিগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক এমদাদুল্লাহর নেতৃত্বে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের লোকজন গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মাদক উদ্ধার অভিযানে যায়।
২২ মার্চ বিকেলে হবিগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপর হামলা করে মাদক সম্রাট তাফানকে চিহিৃত অপরাধীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সন্তোষের নেতৃত্ব একদল মাদক ব্যবসায়ী।
ক্রেতা সেজে তেলিয়াপাড়া চা বাগানের তুফান পানতাতী নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ১শ বোতল ফেনসিডিল সহ আটক করে তার হাতে হাতকড়া পড়ানো হয়। তাকে নিয়ে রওনা দেওয়ার সময় তার সহযোগীরা তেলিয়াপাড়া চা বাগান নাচ ঘরের সামনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজনের ওপর হামলা ও মারপিট করে তুফান পানতাতীকে ফেনসিডিল সহ ছিনিয়ে নেয় মাদক সম্রাটদের নেতৃত্বে একদল সসস্ত্র চোরাকারবারী।
এ সময় তাদের হামলায় সহকারী পরিদর্শক রতন চন্দ্র গোস্বামী সিপাহী তাপস চন্দ্র বৈঞ্চম ও সাদ্দাম হোসেন আহত হয়। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মাদক সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা সুকৌশলে তাদের লোকজনের মাধ্যমে এসব মাদক আমদানি রপ্তানী করে থাকে। মাদক ব্যবসা অধিক লাভজনক হওয়ায় এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সের তরুণরা মাঝে মধ্যে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। খুচরা বিক্রেতারদের আটক হলেও ধঁরাছোয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে গডফাদাররা খোকন, সন্তোষ, আশিক তাতীর মতো মাদক সম্রাটরা।
সূত্র জানায়, চা বাগানে ঝালমুড়ি বিক্রেতা আশিক তাতী অল্প দিনে কোটি টাকার মালিক। বিগত ৬ থেকে ৭ মাস আগেও সে তেলিয়াপাড়ার নাইছঘর এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করে দিনযাপন করতো, আজ রাজার হালে চলছে আশিকের দিনকাল।
সমাজে সুনাম রয়েছে এমন পরিবারের যুবকরাও অতিরিক্ত মাদকে আসক্ত হওয়ার কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। আগামীতে যারা দেশের নেতৃত্ব দেবেন সেই তরুণদের একটি বড় অংশ এখন ইয়াবা সেবন করে বিপথগামী হচ্ছেন। মাদকের কড়াল ঘ্রাস থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ চান স্থানীয়রা।