ইমরান খান বলেছেন, নবী মুহাম্মদ (সা:) হলেন আমার অনুপ্রেরণা। মদিনার নগর রাষ্ট্রটিকে তিনি যেমন মানবিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে মানবিকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম রাষ্ট্র। এটিই আমার অনুপ্রেরণা।
পাকিস্তান তেমনই একটি মানবিক রাষ্ট্র হওয়া উচিত, যেখানে আমরা আমাদের মধ্যকার দুর্বল মানুষদের দায়িত্ব গ্রহণ করবো। আমি মদীনা রাষ্ট্রের মতো করে পাকিস্তান গঠনের স্বপ্ন দেখি, মহানবী (সাঃ) যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন সেভাবে পাকিস্তান চলবে।
যেখানে বিধবা ও দরিদ্ররা অবহেলিত হবে না, এতিমরাও সরকারের সেবা পাবে। মহানবী (সা:) যেভাবে রাষ্ট্র চালাতেন সেভাবে চলবে পাকিস্তান। দু’র্নীতির বিরু’দ্ধে যু’দ্ধ ঘোষণা করে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে।
এত বেশি ঋণ কখনো পাকিস্তানের ছিল না। দুর্নীতির কারণে প্রবাসীরা দেশের মাটিতে বিনিয়োগ করছে না। ফলে চাকরি পাচ্ছে না তরুণরা। এর সমাধান করতে হবে। দু’র্নীতি বন্ধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে।
আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো হবে আরো শক্তিশালী, যেখানে সবাই জবাবদিহী করতে বাধ্য থাকবে। সবার আগে আমার, তারপর মন্ত্রী ও অধ:স্ত’ন কর্মকর্তাদের জবাবদিহী করা হবে। আমরা আজ অন্য দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে আছি।
কেননা এখানে ক্ষমতাসীন ও সাধারণ নাগরিকদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা বিদ্যমান। গত তিন বছরে রাজনৈ’তিক নেতাদের অনেক ভোগা’ন্তির শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু এগুলো সবই এখন অতীত। আমাদের ভিশন এসবের তুলনায় অনেক বিশাল।
ইমরান খান বলেন, কেন আমি রাজনীতিতে এসেছি তা পরিস্কার করতে চাই। রাজনী’তি আমাকে কিছু নাও দিতে পারতো। কিন্তু আমি সবসময় পাকিস্তানকে এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছি, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমার মহান নেতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
আমি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর স্বপ্নের পাকিস্তান গড়তে কাজ করবো। আমি বিশেষ করে বেলুচিস্তানের মানুষদের সাধুবাদ জানাতে চাই। ভ’য়াবহ সহিং’সতা ও মর্মা’ন্তিক ভোগা’ন্তির শিকার হওয়ার পরেও তারা তাকে ভোট দিয়েছেন!
গোটা দেশের পক্ষ থেকে আমি তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই। এই নির্বা’চনের জন্য অনেক মানুষ ত্যাগ স্বীকার করেছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীকেও আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। ইমরান খান বলেন, আমি পুরো পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখবো। আইন ধনী-গরীব সবার জন্য সমানভাবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর বিশালাকার প্রাসাদ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর গভর্নর বাড়ি হবে পর্যটন স্থান।
করের টাকা ন’ষ্ট করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকবো না। সরকার হবে মিতব্যয়ী। সরকারি অনেক বাসভবনকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হবে। আমি জনগণের আদায়কৃত করের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করছি।
সরকারের সকল নীতি হবে গরীবদের উন্নয়নের জন্য, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সহযোগিতা করার জন্য; কেবল অভিজাত ব্যক্তিদের জন্য নয়। ধনীদের ‘লাইফ-স্টাইল’ দিয়ে কোনো দেশের জীবনযাত্রার মান নির্ধারিত হয় না। বরং দরিদ্ররাই এতে বড় ভূমিকা রাখে।
ইমরান বলেন, পাকিস্তানে এখনো দুর্বলে’রা ক্ষুধায় মা’রা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত চি’কিৎসা সেবার অভাবে আমাদের প্রসূতি মায়েরা অব্যাহতভাবে মা’রা যাচ্ছেন, সরকার নিরাপদ খাবার পানিও সরবরাহ করতে পারে না।
আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো যাতে আমার সরকারের নীতি দুর্বল মানুষদের, শ্রমিক মানুষদের, কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রণীত হয়। তারা সারাটা বছর ধরে কাজ করেন, কিন্তু তাদের ন্যায্য হক পান না। আমাদের ৪৫ শতাংশ শিশুর শারিরীক বৃদ্ধি পর্যাপ্ত হয় না। ওদের শরীর ও ব্রেইন যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ে না।
অনেক দেশে আড়াই কোটি মানুষও বাস করে না। অথচ আমাদের দেশে আড়াই কোটি শিশু স্কুলে যেতে পারে না। আমার চেষ্টা থাকবে এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করা। ইমরান বলেন, আমাদের সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হবে মানবসম্পদের উন্নয়ন। আমি চাই পুরো দেশ মিলে আমরা এভাবে ভাববো।
আমি চাই পাকিস্তানের সবাই ঐক্যবদ্ধ হবে। নির্বাচনের আগে আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলা হয়েছে। এত খারাপ কথা অন্য কারো বিরু’দ্ধে বলা হয়নি। কিন্তু এসবই আমি ভুলে গেছি। তারাও আমার সাথে আছেন। ব্যক্তির চেয়ে আমার লক্ষ্য অনেক গুণ বড়।
ইমরান বলেন, আমরা একটা উদাহরণ তৈরি করতে চাই। কিভাবে জবাবদিহিতা করতে হয়। আমি শপথ করছি, আমার সরকার কোনো রাজনৈতিক কারণে কাউকে প্রতিহিংসায় জড়াবে না। রাজনৈতিক কারণে কেউ প্রতিহিংসার শিকার হবে না। আমার সকল নীতি হবে দুর্বলতা কাটিয়ে দেশকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক নিয়ে পিটিআই প্রধান বলেন, আমরা আমেরিকার সাথে সমঝোতামূলক সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক চাই। ইমরান বলেন, ভারত এক পা এগুলে, আমি দুই পা এগিয়ে যাব। আমি সৌহার্দ্য চাই। একে অন্যের প্রতি দো’ষারোপ করে কোনো লাভ নেই। আমরা সবাই মিলে দারিদ্র্যমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গড়তে কাজ করতে পারি। ইনশাআল্লাহ।