বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন

পাকিস্তান-তুরস্ক সহযোগিতায় ক্রুদ্ধ ভারত!

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০২০
  • ২৫৮ Time View

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান সরকার নতুন একটি শত্রুর মুখে পড়ার শঙ্কায় পড়েছে। এই দেশটি হলো ভারত। ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র এ দেশটি উচ্চকণ্ঠে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও গ্রিসের নেতৃত্বাধীন অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকা তুর্কিবিরোধী দেশগুলোর জোটে যোগ দিতে পারে।

বৈরিতা প্রকাশ পাচ্ছে ভারতীয় নিউজ চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে। এতে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের সাথে আঁতাত করে ভারতের আনুমানিক ১৮২ মিলিয়ন মুসলিমকে রিক্রুট ও উগ্রপন্থী বানাতে চাইছে তুরস্ক।

সবচেয়ে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে ৭ আগস্ট ভারতের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত ইংরেজি পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমসে। প্রখ্যাত কলামিস্ট শিশির গুপ্তের লেখা ওই প্রতিবেদনে ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, পাকিস্তানের পর ভারতবিরোধী তৎপরতার সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে তুরস্ক।

তিনি বলেন, এরদোগানের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত তুর্কি ব্যক্তিবিশেষ ও গ্রুপগুলো তুরস্কে পড়াশোনার জন্য ভারতীয় মুসলিমদেরকে আকর্ষণীয় স্কলারশিপের ব্যবস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে। আর তারা আসা মাত্রা সেখানে সক্রিয় পাকিস্তানি প্রক্সিগুলোর হাতে পড়ছে। গুপ্তের ভাষ্য খুব পরিচিত। তুরস্ক উসমানিয়া সাম্রাজ্য আবার নির্মাণ করতে যাচ্ছে, এরদোগান হতে চান নতুন খলিফা।

উপমহাদেশ মনে হচ্ছে খুবই উর্বরা ভূমি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের আমলে সহিংস নির্যাতনের কারণে মুসলিমদের পক্ষে কথা বলা ও পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো বিরল নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এরদোগান।

এটি ঐতিহাসিক অনুরণনও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় উসামানিয়াদের পরাজয়ের সময় ভারতের মুসলিমরা খেলাফত আন্দোলন শুরু করেছিল উসমানিয়া সুলতানকে রক্ষা করতে। ওই সময় তিনি বিবেচিত হতেন মুসলিম বিশ্বের আধ্যাত্মিক নেতা। তবে মোস্তাফা কামাল আতাতুর্ক ১৯২৪ সালে খেলাফত বিলুপ্ত করে দেন। এরদোগান আতাতুর্কের সেক্যুলার ধারা রদ করে ইসলামি জাতীয়তাবাদকে তার প্রধান ধারায় পরিণত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হোসাইন হাক্কানি এ ব্যাপারে আল-মনিটরকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমরা শেষ মুসলিম সাম্রাজ্য হিসেবে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের প্রশংসা করে। খেলাফতের সমাপ্তির আশঙ্কায় ভারতের মুসলিমদের অসন্তুষ্টির বিষয়টি ফুটে ওঠেছিল খেলাফত আন্দোলনে।

তুরস্ক ভারতের মুসলিমদের উগ্রপন্থী বানাচ্ছেন, এমন প্রচারণা আসলে মোদির অবস্থান শক্ত করার একটি কৌশল মাত্র। এর মাধ্যমে মোদি তার মেরুকরণ কৌশলকে সুসংহত করছেন। তবে ভারতের ক্ষুব্ধ হওয়ার প্রধান কারণ হলো কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রতি এরদোগানের কূটনৈতিক সমর্থন।

এরদোগান ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভারতের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রস্তাবটি তিনি তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে ক্রুদ্ধ মোদি গ্রিক, আর্মেনিয়ান ও সিপ্রিয়ট নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনের ফাঁকে এবং অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় দু দিনে তুরস্ক সফর বাতিল করেন। এরপর কুর্দি ইস্যুতে নিরপেক্ষ থাকার নীতির অবসান ঘটিয়ে ৯ অক্টোবর সিরিয়ার কুর্দিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের অপারেশন পিস স্প্রিং অভিযানের সমালোচনা করেন।

ভারত জোর দিয়ে বলছে যে কাশ্মির তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখান অন্যদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু পাকিস্তান বলে আসছে, কাশ্মির সমস্যার সমাধান হতে হবে জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাবের আলোকে। পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তান ও ভারত চারবার যুদ্ধ করেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে এরদোগান আরেক দফা ভারতকে ক্রুদ্ধ করেন পাকিস্তান পার্লামেন্টে এ কথা বলে যে কাশ্মির ইস্যু পাকিস্তানের যত কাছে, আমাদেরও তত কাছে। তুরস্ক সেখানকার নির্যাতনের বিষয়ে সোচ্চার থাকবে। তিনি কাশ্মিরি মুসলিমদের সংগ্রামকে গ্যালিপলিতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তুর্কি লড়াইয়ের সাথে তুলনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরদোগানের মন্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে অভিহিত করেন।

কূটনৈতিক ক্ষেত্রে কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানকে সমর্থন করে তুরস্ক। এর বিনিময়ে পাকিস্তান ১৯৭৪ সালে সাইপ্রাসে তুরস্কের সামরিক হস্তক্ষেপের প্রতি সমর্থন দেয়। এসব বিষয় আগে থেকে থাকলেও তা ভারতকে ক্রুদ্ধ করেনি। বর্তমানে এরদোগান যেভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করছেন, তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে আছে ভারত।

এর প্রতিক্রিয়ায় ভঅরত ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য জাহাজ নির্মাণের ২.৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়েছে। তাছাড়া তুরস্কের ঐতিহাসিক শত্রু আর্মেনিয়ার কাছ থেকে রাডার কেনার জন্য ৪০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে ভারত। তবে ভারত সম্ভবত তুরস্কের সাথে চুক্তিটি বাতিল করবে না। দেশটি সম্ভবত পাকিস্তানের প্রতি তুরস্কের সম্পর্ক শিথিল করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

ইসলামাবাদভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক তাবাদল্যাবের প্রধান মোশাররফ জাইদি বলেন, ভারত মনে করে, তার অর্থনৈতিক শক্তি ও আকারের কারণে সে যেকোনো ধরনের জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকতে পারে। কিন্তু তুরস্ক তা গ্রাহ্য করছে না দেখে ভারত বিস্মিত হয়েছে।

ভারত ও তুরস্কের বাণিজ্য ভারসাম্য ব্যাপকভাবে নয়া দিল্লির অনুকূলে। জাহাজের চুক্তিটি বরং কিছুটা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

তবে ভারত যাই মনে করুক না কেন, উপমহাদেশের মুসলিমদের ওপর তুর্কি প্রভাব এখনো বেশ প্রান্তিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। বরং উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রভাবই অনেক বেশি। সেখানে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কোটি কোটি লোক বাস করে। তাছাড়া এসব দেশের মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্নভাবে দান-খয়রাতও করে থাকে উপসাগরীয় দেশগুলো।

আবার পাকিস্তানের সম্ভাবনাময় বাজারের কারণেও দেশটির সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের কাছে অ্যাটাক হেলিকপ্টার বিক্রির জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমানগুলো আধুনিকায়নের কাজেও তুরস্ক সহায়তা করছে। তাছাড়া তুর্কি টিভি সিরিয়াল, চকোলেটের মতো পণ্যও পাকিস্তানে বেশ সমাদৃত।

আবার পাকিস্তানে এমন কিছু আছে, যা কামনা করতে পারে তুরস্ক। আর তা হলো পরমাণু অস্ত্র। এরদোগান গত সেপ্টেম্বরে পরমাণু শক্তি লাভের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তেলআবিবভিত্তিক ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো গালিয়া লিন্ডেনস্ট্রাস বলেন, পাকিস্তান ও তুরস্ক পরমাণু অস্ত্র নির্মাণে সহযোগিতামূলক অবস্থান গ্রহণ করতে পারে।

তবে তুরস্ককে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পাকিস্তান ততটা সহায়তা নাও করতে পারে। পাকিস্তানে অনেকে মনে করে, তুরস্ক পরমাণু বোমা বানাতে পারলে মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পরমাণু শক্তিধর হিসেবে পাকিস্তানের মর্যাদা নষ্ট হয়ে যাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin