সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে গত সপ্তাহে সম্মত হয় ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব-আমিরাত। এরপর চালু হয় দু’দেশের সরাসরি টেলিফোন যোগাযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ওই চুক্তির বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এত কিছুর পরও ইসরায়েলের বিশ্বস্ত হতে পারেনি আরব-আমিরাত। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিলেন নিরাপত্তার বিষয়ে তারা কোনোভাবেই আমিরাতকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। আমিরাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যুদ্ধ বিমান এফ-৩৫ কেনার আগ্রহ
প্রকাশ করলে তার বিরোধীতা করেন খোদ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিন ইয়ামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই নিরাপত্তা ঝঁকি নেব না। একই সঙ্গে আমরা আমিরাতের সঙ্গে হওয়া চুক্তিকে স্বাগত জানাই।
আমরা আমিরাতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। আমিরাতের বর্তমান সরকারের নিরাপত্তায় আমাদের সমর্থন থাকবে। তবে আমরা নিজেদের নিরাপত্তার ক্ষেত্র কোনোভাবেই ঝুঁকি নেব না। আমরা বিষয়গুলো বার বার যাচাই করতে চাই। আমরা নিরাপত্তার বিষয় যুক্ত
থাকবে এমন একটি শান্তি চুক্তি করতে চাই। তার আগে কোনো রকম ঝুঁকি নেয়া যায় না।’ এ বিষয়ে জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দুতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানায় রয়টার্স। গত কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে সমাঝোতার
ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবার মধ্যে প্রাচ্যে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র এফ-৩৫ বিক্রির মাধ্যমে নতুন করে এই অঞ্চলে অস্ত্র বিক্রি করতে চাইছে। যদিও ইসরায়েলে একই অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন
করেছে অনেক আগেই। তাই মধ্যপ্রাচ্যে একই যুদ্ধ বিমান বিক্রি করা হয়ে দেশটি নিরাপত্তা সংকট পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে ও আরব আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিকি করণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমিরাতের কাছে
অস্ত্র বিক্রিতে কোনো বাধা রইলা বলে মন্তব্য করার পর ইসরায়েল নড়ে চড়ে বসে। দেশটি নিরাপত্তা ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের উপর আস্থা রাখত পারছে না। ইসরায়েল ২০১৮ সালে প্রথমবার সিরিয়ার ভেতরে দুটি আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক
এবং ব্যয়বহুল এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করে। প্রতিটি বিমানের দাম প্রায় ১০ কোটি ডলার। তখনই প্রথম এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কোন ‘কমব্যাট অপারেশনে’ ব্যবহৃত হয়। অবশ্য এ বিমানের সমালোচনাও হয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন,
এফ-৩৫ যুদ্ধিবিমানে শত্রু রাডার ফাঁকি দেবার ব্যাপারটিকে এত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, অন্য নানা দিক থেকে এতে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। লকহিড মার্টিন কোম্পানির তৈরি এই বিমানে আছে ‘স্টেলথ’ প্রযুক্তি। অর্থাৎ এ বিমান ওড়ার সময় শত্রুপক্ষের রাডারে তার অস্তিত্ব ধরা পড়বে না।
তা ছাড়া শত্রুপক্ষের বিমানের চোখে পড়ার আগেই সে নিজেই তাকে দেখতে পাবে। বিমানটির পাইলটের হেলমেটে বসানো আছে একটি ডিসপ্লে সিস্টেম – যাতে অন্যদিকে মুখ করে থাকা অবস্থায়ও শত্রু বিমানের দিকে গুলি করতে পারবে। পাইলট শত্রু লক্ষ্যবস্তুর গতিবিধি চিহ্নিত করতে পারবেন,
শত্রু রাডার ‘জ্যাম’ বা অকার্যকর করে দিতে পারবেন এবং আক্রমণ প্রতিহত করতে পারবেন। তা ছাড়া এ বিমানের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত অপারেশন কমান্ডারের সাথে শেয়ার করা যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ৪০০ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য দেয় ইসরায়েলকে। মার্কিন আইন অনুযায়ী এ সাহায্য এমনভাবে দিতে হবে যাতে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব সবসময়ই অক্ষুণ্ণ থাকে।