মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ নেন লালমনিরহাটের ওসি মাহফুজ!

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০
  • ৩৩৭ Time View

করোনা দুর্যোগের কারণে ঘুষ লেনদেনেও পরিবর্তন এসেছে। লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম ঘুষের টাকা নেওয়ার আগে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে নেন বলে শোনা যাচ্ছে।

ঘুষ লেনদেনের এমন একটি ভিডিও এরই মধ্যে লালমনিরহাটে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, লালমনিরহাট সদর থানার একটি পরিবারিক মামলার আসামি পক্ষের কয়েকজন মামলাটির বাদীকে হেনস্থা করার কৌশল জানতে ওসি মাহফুজ আলমের কাছে এসেছেন। কৌশল হিসেবে ওসির পরামর্শ মোতাবেক তারা মামলাটির বাদীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ও ১০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন। অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে ওসিকে দিতে হবে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তাকে আরো তিন হাজার টাকা দিতে বলেন ওসি।

ভুক্তভোগীরা জানান, সদর থানায় মামলা করতে এবং আসামি ধরাতে এভাবে টাকা গুণতে হয়। অনেক সময় টাকার অংক বেশি হলে আসামি চোখের সামনে থাকলেও তাকে গ্রেফতার করা হয় না। কিংবা আসামিদের টাকার জোরে বাদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নিয়ে হয়রানি করা হয়।

ফলে ঠুনকো বিষয় নিয়েও একাধিক মামলা বা হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। টাকার জোরে বেঁচে যাচ্ছেন অপরাধিরা আর ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনগণ।

অনেক সময় আসামির টাকার জোরে বাদীকে চাপ দিয়ে থানা চত্বরেই বসানো হয় সালিশ বৈঠক। দীর্ঘদিন একই থানায় চাকরির সুবাদে ওসি মাহফুজ আলমের বিশাল সিন্ডিকেট ও দালাল চক্র গড়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মাহফুজ আলম আসামির অবস্থান জানার পরও তাকে জামিন নিয়ে বাদীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে করোনাকালে ঘুষের টাকা নেওয়ার আগে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতেও ভোলেননি ওসি মাহফুজ।

ভিডিওতে ওসি মাহফুজ বলেন, তোমাদের বাদীর (কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে বাদী দেখিয়ে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়) তো জামিন হয় নাই। জামিন না হতেই থানায় হাজির হয়ে এজাহার দেওয়া হলে তো বেআইনি হবে। জামিনের কাগজসহ এসো, অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। মামলা না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঝামেলা করা যাবে না। ঝামেলা হলে তোমরা প্যাচে পড়ে যাবে।

ঘুষ দাতা: আমরা ঝামেলা করি নাই, করব না। প্রয়োজনে ওদিকে (তাদের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদীর এলাকায়) কেউ যাব না।

ওসি মাহফুজ: মামলা এখানে একটা করে দেব, কোর্টেও একটা মামলা করবা এবং চেক ডিজঅনার করবে। এভাবে ঘুরবে (আঙ্গুল ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেন), চড়কির মতো ঘুরবে। যারা বুদ্ধিদাতা তারা হেরে যাবে। তোমাকে ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। গরম করা যাবে না।

ঘুষ দাতা: আস্তে আস্তে করতে হবে। একটা একটা করে। স্যার টাকা আজকে দিব না কি মামলার দিন? ওসি বললেন, সেটা তোমাদের ব্যাপার। ঘুষ দাতা: স্যার, আপনাকে কমিটমেন্ট করতে হবে। যেদিন মামলা হবে, সেই দিনই আসামি ধরতে হবে।

ওসি: আসামিরা পুরুষ তো? এরপর ‘নিয়ম’ অনুযায়ী টাকা লেনদেনের জন্য ঘুষ প্রদানকারীকেও টাকা বের করার আগে হাত জীবাণুমুক্ত করতে স্যানিটাইজার ঘঁষে (রাব) নিতে হবে। তাই

ঘুষ দাতা বলেন, স্যার, স্যানিটাইজারটা একটু দেন। এরপর ওসি মাহফুজ কাজ ফেলে স্যানিটাইজার দিয়ে নিজেও হাত রাব করে নেন এবং ঘুষ দাতার হাতেও স্যানিটাইজার দেন।

ঘুষ দাতা এসময় বলেন, স্যার, টাকা থেকেও করোনা ছড়ায়। তদন্ত কর্মকর্তাকে আগে এক হাজার টাকা দিয়েছি স্যার। এরপর ঘুষ দাতা পকেট থেকে টাকা বের করে টেবিলে রাখলে ওসি মাহফুজ আলম তা নিয়ে প্যান্টের পকেটে রেখে বলেন, টাকা দিয়ে বেশি ছড়াচ্ছে। এখানে কত টাকা দিয়েছ?

ঘুষ দাতা: ১০ হাজার আছে স্যার। ওসি: ওহ ঠিক আছে। ওকে (মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে) আরো দুই হাজার টাকা দিও। এভাবে লালমনিরহাট সদর থানায় বসেই চলে ওসির মামলা বাণিজ্য।

ঘুষ নেওয়ার ভিডিও প্রসঙ্গে ওসি মাহফুজ আলম বলেন, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের হবে। তবে করোনা শুরুর পর থেকে সরাসরি কোনো পার্টির কাছ থেকে আমি টাকা পয়সা নেই না। করোনার ছয় মাসে থানার অফিসাররা তদন্ত করে ফিরে দুই/তিন হাজার, যা দেয়, সেটা ছাড়া সরাসরি কোনো লেনদেন করি না।

তবে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধও করেন তিনি। লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এলে তদন্ত করে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র: বাংলানিউজ

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin