কোন বিকল্প ব্যবস্থা না করেই মুমুর্ষু রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তিন শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড স্যালাইন উৎপাদনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান আইপিএইচ বন্ধ করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অথচ সরকারি হাসপাতালে স্যালাইনের বড় যোগানদাতা এটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্ত্রণায়ের অদক্ষতা আর নজরদারির অভাবেই এই প্রতিষ্ঠানের এমন পরিণতি।
স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের আইভি ফ্লুইড বা স্যালাইন এর বড় যোগানদাতা জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট- আইপিএইচ। সরকারি হাসপাতালের একটি বড় অংশের যোগান দিতো প্রতিষ্ঠানটি। আর এখনো মুমূর্ষ রোগীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় ৩ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইডের একমাত্র যোগানদাতা আইপিএইচ।
অথচ ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অদক্ষ জনবলসহ নানা করণে গত ১৫ জুন বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের একমাত্র সরকারি জৈব ঔষধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানটি। আর এজন্য প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিদের অবহেলাকে দুষছেন ওষুধ প্রশাসন।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘যেহেতু মানের নিয়ন্ত্রণ নেই তাই আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।’
এদিকে ঔষধ প্রশাসনের পক্ষে বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় স্যালাইন সরবরাহ করার নির্দেশনা দিলেও সেসব প্রতিষ্ঠানে তিন শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড পাওয়া নিয়ে সংশয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘.৩ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের স্যালাইন, যদি না দেওয়া হয় মৃত্যু ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। এটি আমাদের আইপিএইচ থেকে সরবরাহ করা হতো। বাইরের ২-১ টি প্রতিষ্ঠানের এই .৩ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকতে পারে তবে খুব একটা আমরা পাই না।’
২০১৯ এর জুলাই থেকে ২০২০ এর ১৫ জুন পর্যন্ত দেশের ১১৯ টি সরকারি হাসপাতালে আট লাখ ৫৮ হাজার পঁচাশি ব্যাগ স্যালাইন সরবরাহ করেছে আইপিএইচ। এমন একটি প্রতিষ্ঠান বিকল্প ব্যবস্থা না করেই বন্ধ করে দেয়া ঠিক হয়নি বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘দেশের একটা প্রতিষ্ঠান চোখের সামনে এরকম জরাজীর্ণ হয়ে গেলো এর দায় মন্ত্রণালয় কোনোভাবে এড়াতে পারে না।’
এখনো প্রায় ৫০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন মজুদ থাকলেও তা সরবরাহের অনুমতি পায়নি আইপিএইচ। যদিও দফায় দফায় নোটিশ পেলেও কারখানা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি কেন প্রতিষ্ঠানটি, সে বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ।