শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৪ অপরাহ্ন

তরুণীকে বিয়ের প্রলোভনে দৈহিক মিলন, মামলা নেয়নি পুলিশ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০২০
  • ৩৪৮ Time View

এক তরুণীকে বিয়ের কথা বলে ডেকে নিয়ে নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে প্রেমিক রুবেল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ওই তরুণীকে হত্যা চেষ্টারও অভিযোগ করা হয় রুবেলের পরিবারের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করা হয়। জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাননি ওই তরুণীর পরিবার।

সোমবার ভুক্তভোগী ভোলার বোরহানউদ্দিনের ওই তরুণী স্থানীয় রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। নির্যাতিতা তরুণী উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক নিমার্ণ শ্রমিকের মেয়ে। অভিযুক্ত রুবেল একই এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে।

ভুক্তভোগী তার বক্তব্যে বলেন, রুবেলের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক আড়াই বছরের। এর মধ্যে আমাদের কথা-বার্তা ও মাঝে মধ্যেই দেখা হত। বিয়ের কথা বললেই রুবেল আর কয়’টা দিন পরে বলে সময় নিত। প্রতিজ্ঞা করে আমাদের আংটি বিনিময় হয়েছে। ঈদ-উল-আজহার আগে ঢাকায় আমাদের বিয়ে হবে বলে আমাকে ঈদের ৪-৫ দিন আগে ঢাকা আসতে বলে।

‘ঢাকা যাওয়ার জন্য গঙ্গাপুর লঞ্চঘাটে এক লোকের মাধ্যমে ঢাকা যাওয়ার জন্য বিকাশে তিন হাজার টাকা পাঠায়। আমি লঞ্চে ঢাকা চলে যাই। সদরঘাটে রুবেল আমাকে নিতে আসে। ওই স্থান থেকে আমাকে অসুবিধা আছে বলে আমার নাক-মুখ ঢেকে রাখে।

ঢাকার কোন এলাকার একটি খালি বাড়িতে নিয়ে যায় তবে কোথায় এটা জানা সম্ভব হয়নি। বিয়ের কথা বললে সে একসঙ্গে দেশে গিয়ে বিয়ে করবে বলে। ওই বাড়িতে আমি বাঁধা দেয়া সত্ত্বেও সে ৪ দিন আমাকে দৈহিক মিলনে বাধ্য করে। ঈদের আগের দিন আমরা উভয়ে দেশে ফিরে আসি।’

‘ঈদের দিন আমাকে রুবেল তার বাড়িতে যেতে বলে। বিকালে আমি ওই বাড়ি যাই। কিন্তু তার পরিবারের লোকজন আমার দিকে তেড়ে আসলে আমি বাড়িতে চলে আসি। পরদিন সকালে সে ফোনে বলে বাড়ির সবাইকে ম্যানেজ করেছি। তুমি আমাদের বাড়িতে চলে এস। আমি সরল মনে তাদের বাড়িতে যাই।’

‘বাড়িতে ঢোকার পর-পর রুবেল, তার বাবা-মা, ভাই-বোনসহ ৭-৮ জন ছেলে আমার ওপর হামলা করে। যার হাতে যা ছিল তা দিয়ে আমাকে মারতে থাকে। এক সময় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি আমি হাসপাতালে।

আমার সারা দেহ রক্ত জমে লাল হয়ে আছে। পরে জানতে পারি স্থানীয় কেরামত হাওলাদার ও সৈয়দ আহমেদ মোল্লা ওই বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় আমাকে আর না পিটানোর অনুরোধ করে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন।’

‘পরে খবর শুনে কুতুবা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ আমাদের বাড়িতে আসেন। পুলিশ আসে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হবে বললে পুলিশ চলে যায়। আমরা থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মামলা নেননি। চেয়ারম্যানের কাছে বার বার ধর্ণা ধরেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।’

সংবাদ সম্মেলনে মেয়ের নিমার্ণ শ্রমিক ও মা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা তাদের মেয়ের ওপর অত্যাচারের ন্যায় বিচার দাবি করেন।

ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেরামত হাওলাদার ও সৈয়দ আহমেদ মোল্লা বলেন, আমরা ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় কান্না আর হৈ-চৈয়ের শব্দ শুনতে পাই। মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে তা এটা না দেখলে বিশ্বাস হত না। আমরা উভয়ে মেয়েটিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি। আর না পিটানোর অনুরোধ করি। ঘটনা যা-ই হোক চেয়ারম্যান মেম্বারের শরণাপন্ন হতে বলি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রেমিক রুবেলের মোবাইল ফোনে (০১৭৮০-৩৬৫১২৯) নম্বরে একাধিবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে কুতুবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ বলেন, আমি গিয়ে ওই মেয়েকে আধা অচেতন অবস্থায় পাই। পরে সে জ্ঞান হারায়। তাকে প্রচুর মারধর করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে স্থানীয়ভাবে ফয়সালার জন্য দিন-তারিখ ধার্য করি। একবার বসার পর আবার মঙ্গলবার(১১ আগষ্ট) ওই বিষয় নিয়ে বসা হবে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান সাদী বলেন, হাসপাতালে আনার পর আঘাতের ফলে ওই রোগীর মাথা ফোলা পাওয়া যায়। এছাড়া পিঠ, মুখ, বাঁ কাধ, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া ছেলা ছিল।

বোরহানউদ্দিন থানার ওসি মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বলেন, মেয়েটির পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এফআইআর হয়নি। এখন যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin