গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে চুলে ফ্লুরোসেন্ট সবুজাভ ধাঁচের রং করা এক তরুণকে নিয়ে। ‘অপু ভাই’ নামের এই টিকটকার খবরের শিরোনাম হয়েছেন রাস্তায় মারপিট করে গ্রেফতার হওয়ার পর।
এরপর থেকেই আলোচনা চলছে, বাংলাদেশে টিকটকে কি ধরণের কন্টেন্ট নির্মিত হচ্ছে তা নিয়ে। বাংলাদেশে অসংখ্য টিকটক সেলেব্রিটি রয়েছে। তাদের কারো কারো ভ্যারিফাইড অ্যাকাউন্টে ফলোয়ারের সংখ্যা লাখ লাখ।
যেমন ‘শামিমআফরিনমনি’, তার ফলোয়ার প্রায় ২০ লাখ। তার অ্যাকাউন্টে লাইকের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। ‘রাফিভাইইউ’ অ্যাকাউন্টে ঢুকে দেখা যায় তার লাইকের সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে বাংলাদেশে টিকটক কেন এত জনপ্রিয়? কয়েক বছর আগেও ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করা খুব চমকপ্রদ একটা বিষয় ছিল। এখন কিছুদিন পরপরই নতুন কিছু আসছে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এরকম বেশকিছু অ্যাপের পর গত কয়েক বছরের ধরে নতুন যে অ্যাপটি অনেকের আকর্ষণ কেড়েছে তা হল চীনের অ্যাপ টিকটক।
বাংলাদেশে টিকটক জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের জনপ্রিয় গান, সিনেমার ডায়ালগ অথবা কোন ভাইরাল হওয়া কোন বক্তব্যের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে অভিনয়, নাচ দিয়ে মূলত হাস্যরসের ভিডিও।
রাসয়াত রহমান জিকো বছর দুয়েক হল টিকটকে ভিডিও তৈরিতে ঝুঁকেছেন। তবে মূলত তিনি লেখালেখি করেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, টিকটক খুব সহজ। ধরুন, একটা বই লিখতে গেলে কয়েক মাস লাগে। এত কয়েক মাস রাত জেগে কষ্ট করে একটা বই লেখার পর সেটা পাবলিশ হচ্ছে , তারপর বইটা কেউ পড়ছে, তারপর আমি ফিডব্যাকটা পাচ্ছি।
কিন্তু টিকটকের ক্ষেত্রে আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনি একটা টিকটক ভিডিও বানাবো। সেটা বানাতে আমার সর্বোচ্চ সময় লাগছে এক মিনিট। ভিডিও আপলোড করার সাথে সাথে খুব সহজে মানুষকে রিচ করতে পারছেন এবং প্রতিক্রিয়া পেয়ে যাচ্ছেন। অনেক সহজে, অল্প পরিশ্রম করেই প্রতিক্রিয়া পাওয়া, মানুষের প্রশংসা পাওয়া সেটা একধরনের আত্মতৃপ্তির কাজ করে।
জিকো নামের আরেক টিকটকার বলেন, আমি টিকটক করছি স্ট্রেস রিলিজ করার জন্যেও। আমি ব্যাংকে কাজ করি। ব্যাংকের কাজ খুবই স্ট্রেসফুল। টিকটকে একটু সময় দিয়ে স্ট্রেস রিলিজ করার চেষ্টা করি। বিশ্বব্যাপী অ্যাপ ডাউনলোড চার্টের শীর্ষের দিকে রয়েছে টিকটক। টিকটকের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বব্যাপী আশি কোটি মানুষ এটি ব্যাবহার করছে।
বাংলাদেশে ভিডিও কন্টেন্ট স্ট্রিমিং সাইট বঙ্গবিডি’র অপারেসন্স বিষয়ক পরিচালক ফাইয়াজ তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে মূলত তরুণ প্রজন্ম, যাদেরকে বলে মিলেনিয়াল তারাই এটি বেশ ব্যাবহার করছেন। মূলত হাসির জিনিস বানাতেই বেশি দেখা যায় তাদের। বিশেষ করে করোনার বৈশ্বিক মহামারির সময়ে টিকটক অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।
জনপ্রিয় হতে হলে হয়ত কোন টিভি অনুষ্ঠানে, সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে হয়। টিকটকে অডিশনের দরকার নেই। অ্যাপটি ডাউনলোড করুন, একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। অ্যাপটিতে রয়েছে নানা ধরনের জনপ্রিয় গান, সিনেমার ডায়লগ আর সাউন্ড এফেক্টস।
অ্যাপটির মাধ্যমে নিজেকে ভিডিও করুন, তার আগে জুড়ে দিন অ্যাপটিতে থাকা পছন্দমতো গান, ডায়ালগ বা সাউন্ড এফেক্টস, ভিডিওতে গানটির সাথে ঠোঁট মেলান, সাথে ইচ্ছে হলে নাচ যোগ করতে পারেন, অ্যাপে নানা ধরনের ফিল্টার রয়েছে সেগুলো যোগ করতে পারেন, ভিডিও হয়ে গেলে পছন্দমতো যায়গায় ভিডিও এডিট করুন, খুব কম সময়ে তৈরি হয়ে গেল কন্টেন্ট, তারপর শেয়ার করুন।
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন অনেকেই। টিকটকেও সেই সুযোগ রয়েছে। সেটা সম্ভব হতে হলে অবশ্য আপনার অনেক ফলোয়ার থাকতে হবে। ভিডিওর মাধ্যমে কোন পণ্যের বিক্রি বাড়াতে অনেক ব্র্যান্ড টিকটকে যাদের ফলোয়ার বেশি রয়েছে তাদের অর্থ দিয়ে থাকেন। অনেক সময় নতুন কোন পণ্য বাজারে আনার আগে বিজ্ঞাপনদাতারা টিকটকে সেলেব্রিটিদের পণ্যের বিক্রি বাড়াতে কাজে লাগান।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।