তুরস্ক ইস’লামি বিশ্বের নেতৃত্বের ভূমিকা পাওয়ার জন্য গেল কয়েক বছর ধরে তীব্র ল’ড়াই করে যাচ্ছে। আয়া সোফিয়াকে পুনরায় ম’সজিদে ফেরানোর পরে আঙ্কারার ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশা চুরমা’র হয়ে গেছে।
বরং আয়া সোফিয়াকে ম’সজিদে ফিরিয়ে তুরস্ক ইস’লামপন্থীদের দিকে আরো ঝুঁকছে। তুরস্কের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আঙ্কারার পুরোনা মিত্র পা’কিস্তান রয়েছে তার স’ঙ্গে। তুরস্কের পাশাপাশি বৈশ্বিক পরাশ’ক্তি চীনের স’ঙ্গেও ইস’লামাবাদের রয়েছে শ’ক্তিশালী স’ম্পর্ক।
১৯১৮ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত ভা’রতে চলামান খেলাফত আ’ন্দোলনের মাধ্যমে তুরস্ক-পা’কিস্তানের মধ্যে বর্তমান স’ম্পর্কের সূত্রপাত হয়। আ’ন্দোলনের লক্ষ্যে ছিল গ্রেট ব্রিটেনের আগ্রাসন থেকে অটোমান সাম’রাজ্যের অখণ্ডতা এবং ইস’লামি খেলাফত রক্ষা করা। পাশাপাশি স্বাধীনতা যু’দ্ধে হিন্দু-মু’সলমানকে ঐক্যবদ্ধ করা। উভ’য়ের শ’ত্রু ইংরেজ বেনিয়াদের বি’রুদ্ধে।
১৯১৯ সালে অটোমান সাম’রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খেলাফত আ’ন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়। আ’ন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শাওকাত আলী, মা’ওলানা মোহাম্ম’দ আলী জৌহর, হাকিম আজমল খান এবং মা’ওলানা আবুল কালাম আজাদ। সুন্নি মু’সলমানদের এ নেতৃত্বকে কার্যকর রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করা হতো।
ইশতিহারে খেলাফত আ’ন্দোলন ব্রিটিশ সাম’রাজ্যবাদের বি’রুদ্ধে ল’ড়াইয়ের আহ্বান জানায়। যারা সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে এ আ’ন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে স’ক্ষম হয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন কৃষক, কারিগর, শ্র’মিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোক্তা, ম’সজিদের ই’মাম, মাদরাসার শিক্ষক সবাই।
তাদের এ বিদ্রোহ ছিল উপনিবেশ ও সাম’রাজ্যবাদের বি’রুদ্ধে। পরে ১৯২২ সালে মু’স্তফা কামাল আতার্তুকের অধীনে তুরস্ক ধ’র্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে রূপান্ত হয়। পরে খেলাফত আ’ন্দোলন সা’ম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতাবাদের পক্ষে অ’ভিজাত সংগঠনে পরিণত হয়।
তুরস্কের স্বাধীনতা যু’দ্ধে কামালপন্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল ব্রিটিশ ভা’রতের মু’সলমানরা। সেই সূত্র ধরে ১৯৪৭ সালে সদ্য গঠিত পা’কিস্তানের স’ঙ্গে চটজলদি কূটনৈতিক স’ম্পর্ক স্থাপন করে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি স’ম্পর্কও ছিল। পা’কিস্তানের স্থপতি মুহাম্ম’দ আলী জিন্নাহর আঙ্কারার স’ঙ্গে ভালো স’ম্পর্ক ছিল। ১৯৯৯ সালে পা’কিস্তানের ক্ষ’মতায় এসে প্রে’সিডেন্ট পারভেজ মোশাররফও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন।
আন্তর্জাতিক অ’ঙ্গনে উভ’য়ে একে অ’পরকে অব্যাহতভাবে সম’র্থ দিয়েছে। যা এখনো চলমান। ১৯৭৪ সালে সাইপ্রাসে আ’ক্রমণের জন্য একমাত্র পা’কিস্তান মিত্র তুরস্ককে সম’র্থন দিয়েছিল।
২০০৩ সালে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইপ এরদোয়ানের স’ঙ্গে সাক্ষাতে পা’কিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ বলেছিলেন, নর্দান আয়ারল্যান্ড বি’ষয়ে আঙ্কারা যে নীতি নির্ধারণ করবে, আম’রা বলছি, পা’কিস্তান তাতে স’ন্দে’হাতীতভাবে সম’র্থন দেবে। আম’রা শতভাগ তুরস্ককে সম’র্থন করবো। প্রে’সিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ও ক্ষ’মতায় থাকাকালীন একই বাক্যের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন যে সাইপ্রাস ইস্যুতে তুরস্কের সংগ্রামে আম’রা পূর্ণ সম’র্থন অব্যাহত রাখবো।
১৯৯০ সালে কারণবশত দু’পক্ষের স’ম্পর্কের অবনতি ঘটে। তখন নর্দান জোট’কে সম’র্থন করে তুরস্ক। তা’লেবানের পক্ষে অবস্থান নেয় পা’কিস্তান। তা সত্ত্বেও ২০০১ সালে তুর্কি প্রে’সিডেন্ট আহমেদ সিজার কা’শ্মীর সং’ঘাতের সময় পা’কিস্তানের পক্ষে সম’র্থন ঘোষণা করেন।
২০০৩ সালে রিসেপ তাইপ এরদোয়ান বলেন, আম’রা বিশ্বা’স করি কা’শ্মীর সমস্যা সমাধানে পা’কিস্তানের ভূমিকা অ’ত্যন্ত ইতিবাচক। আম’রা তাদের আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। কা’শ্মীর ইস্যুতে পা’কিস্তানকে পূর্ণ সম’র্থন দেবে তুরস্ক। অবশ্যই সং’কটের দ্রু’ত সমাধান হওয়া জরুরি।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুর্কি প্রে’সিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান কা’শ্মীর ইস্যুতে সরাসরি পা’কিস্তান এবং কা’শ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের সম’র্থন দেয়ায় ভা’রত-তুরস্ক স’ম্পর্কের অবনতি হয়। এর মাধ্যমে ফিনান্সিয়াল অ্যা’কশন টাস্ক ফোর্সের স’ঙ্গে পা’কিস্তানের চলা দ্ব’ন্দ্বে ইস’লামাবাদকে সহায়তা করে আঙ্কারা।
ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বক্তব্যে কা’শ্মীর ইস্যুতে কারো পক্ষ নিয়ে কথা বলেননি। তিনি বলেন, তুরস্ক এবং তুর্কি জনগণ কা’শ্মীরীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে। কা’শ্মীরীরা নানা ধরনের নি’র্যাতন নি’পীড়নের শি’কার হচ্ছেন। কা’শ্মীর রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে আম’রা গভীরভাবে উ’দ্বি’গ্ন। দিনে দিনে সেখানকার পরিস্থিতি খা’রাপ হচ্ছে। কা’শ্মীর সং’কট নিরসনে কা’শ্মীরী ভাই-বোনদের ই’চ্ছা অনুযায়ী জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনের ভিত্তিতে পা’কিস্তান ও ভা’রতের আলোচনার পক্ষে তুরস্ক।
তুরস্ক এবং পা’কিস্তানের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সাম’রিক সহযোগিতাপূর্ণ স’ম্পর্কও বিদ্যমান। স্নায়ুযু’দ্ধে সময়ে উভ’য়ে সেন্ট্রো মিলিটারি-পলিটিক্যাল ব্লকের সদস্য ছিল। ১৯৮৮ সালে সাম’রিক অ’ভিজ্ঞতা বিনিময় করার জন্য মিলিটারি এডুকেশন অ্যান্ড ডিফেন্স ইন্ড্রাস্টি প্রতিষ্ঠা করে। ২০০৩ সালে দু’পক্ষের মধ্যে গঠিত হয় হায়ার মিলিটারি ডায়ালগ অর্গানাইজেশন।