মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন কোনো কোম্পানি যদি টিকটক কেনে তাহলে তার দাম থেকে সরকারের পার্সেন্টেজ পাওয়া উচিৎ। বলেন, টিকটকের দাম থেকে বড় অঙ্কের পার্সেন্টেজ পাওয়া উচিৎ। কারণ আমরাই তা সম্ভব করেছি। এটি বিক্রি হতে পারে আমি ছাড়া কেউ ভাবতে পারেনি। এ কারণে আমি মনে করি পার্সেন্টেজ পাওয়া বৈধ।’
তবে টিকটকের মালিক হওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের উপায়কে চুরি আখ্যা দিয়েছে চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। বলা হয়, চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের চুরি মেনে নেবে না চীন। চীনা মালিকানাধীন টিকটিকের ওপর ওয়াশিংটনের অব্যাহত চাপ মোকাবিলার জন্য বেইজিংয়ের কাছে অনেক উপায় রয়েছে বলেও হুমকি দেয়া হয়।
মঙ্গলবার চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের কাছে টিকটক বিক্রির জন্য বাইটড্যান্সের উপর চাপ প্রয়োগ করছে। বিক্রিতে রাজি না হলে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধের হুমকিও দেয়া হয়েছে। এ ধরনের আচরণ ধংসাত্মক এবং গভীর উদ্বেগের।
বেইজিং সম্ভবত চীনের মার্কিন কোম্পানির উপর সমপরিমাণ বিধিনিষেধ আরোপের ক্ষেত্রে ‘সচেতন’ হবে। তবে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রচুর উপায় রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সোমবার মাইক্রোসফট জানায়, তারা টিকটক ক্রয়ের বিষয়ে বাইটড্যান্সের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটক মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রির জন্য বাইটড্যান্সকে ৪৫ দিন সময় বেঁধে দেয়ার পরই তারা এ বিবৃতি দেয়।
ট্রাম্প টিকটককে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি অভিহিত করে মাইক্রোসফটের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর জন্য বাইটড্যান্সকে সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধের হুমকি দেন তিনি।
বিশ্ব্যাপী টিকটকের ১শ’ কোটির বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। অ্যাপটি স্মার্টফোনে ব্যবহার করে ৬০ সেকেন্ড পর্যন্ত ক্ষুদ্র ভিডিও তৈরি করা যায়।
মঙ্গলবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন অভিযোগ করে, টিকটকের উপর অতিমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করে, অ্যাপটি বিক্রির চুক্তি থেকে আর্থিকভাবে ফায়দা নিতে চাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ট্রাম্প প্রশাসন যা করছে তা বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বাজারনীতির লঙ্ঘন। যা অসচ্ছ এবং বৈষম্য। এটাকে সরাসরি একটা প্রতিষ্ঠানকে ধমকানো। বাধ্য করা তার পণ্য বিক্রি করা জন্য।
টিকটকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করছে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগ। কারণ অ্যাপটি বহু মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে। চীনা কর্তৃপক্ষ চাইলে আইন অনুযায়ী সংরক্ষণ করা তথ্য দিতে বাধ্য প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার ট্রাম্প বলেন, টিকটক মার্কিন কোম্পানির হতে যাচ্ছে। এটার মালিক হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংকট আমরা চাই না।
ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক কূটকৌশল বলে নিন্দা জানিয়েছেন ওয়াং। মঙ্গলবার (০৪ আগস্ট) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোনো ধরনের প্রমাণাদি ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র টিকটককে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।
গেলো সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র টিকটকের বিরুদ্ধে ব্যবন্থা নিচ্ছে। এছাড়া, চীনা যেসব প্রতিষ্ঠান তথ্য পাচার করছে বলে ধারণা তাদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপ, জটিলতা এবং অকল্পনীয় সমস্যা সত্ত্বেও বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান হতে বাইটড্যান্স প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে সোমবার এক বিবৃতিতে জানায় টিকটকের চীনা কোম্পানি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন বিরূপ আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছে বেইজিং। ওয়াশিংটন এ ধরণের আচরণ অব্যাহত রাখলে বেইজিং পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলেও জানায় শি জিনপিং প্রশাসন।