রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন

ফিজ কি পারবে নিজেকে ‘পুনর্জন্ম’ দিতে?

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০
  • ২৮৮ Time View

এই তো কিছুদিন আগেই ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ এসে তছনছ করে গেল বাংলাদেশের বুক। কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাসে তার ভয়াবহতা যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল ঠিক ততটা কার্যকরী হতে পারেনি ‘আম্ফান’। বরং শুরুতে মহাপ্রলয় ঘটিয়ে খুব জলদি শক্তি হারিয়ে হয়ে গেছে বিলীন। আম্ফানের মতোই ভয়ঙ্করী আভাস দেয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটে মহাপ্রলয় ঘটিয়ে এসেছিল এক সুপারস্টার।

যার বোলিং সৌন্দর্যে প্রতিপক্ষের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা হয়ে পড়তেন দিশেহারা। ২০১৫ সালে শক্তিশালি ভারতের বিপক্ষেই যার ওয়ানডে অভিষেক। অভিষেক ম্যাচেই নিজের জাত চেনালেন এই তরুণ। কেউ স্বপ্নের পিছে ছুটে, কারো কীর্তিই আবার স্বপ্নের মতো- মুস্তাফিজুর রহমানের ক্ষেত্রে যেন তা-ই। প্রত্যাশা আর অপূর্ণতার মিশেলে পার করেছে নিজের ৫ বছরের ক্যারিয়ার। শুরুটা যেভাবে হয়েছিল, পরে তা ধরে রাখেননি।

বাংলাদেশের সবথেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটারটি নিজের প্রতিভার সাথে সুবিচার করেননি বা করতে পারেনি তর্ক থাকবে। কিন্তু যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন, সেই মুস্তাফিজ কি পারবে পুরনো ‘ফিজ’ কে ফিরিয়ে আনতে? ক্যাপ্টেন মাশরাফির হাত ধরেই ২০১৫ সালে ফিজের আবির্ভাব। ভারতের সাথে চার বোলার খেলানোর কথা ভাবেন ম্যাশ। আর সেই দলে মুস্তাফিজকে তার চাই-চাই।

কারন ফিজের চোখ ধাঁধানো কাটার নজর কেড়েছে অধিনায়কের। কোচকে (তৎকালীন হাথুরি সিংহ) এবং দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিজের মতামত জানালে সবাই সম্মতি জানান। বাস, তারপরেরটা ইতিহাস। ভারতের সাথে প্রথম সিরিজ জয়, অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে ৫ উইকেট, প্রথম দুই ম্যাচে ১১, পুরো সিরিজে ১৩। সোনার কলমে নিজের অভিষেক লেখা ছেলেটিকে চিনতে শুরু করে সবাই। রাতারাতি হয়ে যান সুপারস্টার।

সেই বছরেই সাউথ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়ের সাথে অনবদ্য পারফর্মেন্স দেখিয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০১৫ সালের আইসিসি বছরের সেরা দলে জায়গা করে নেন মুস্তাফিজ। পরের বছরে এশিয়া কাপ টি টোয়েন্টিতে তার চোখ ধাঁধানো বোলিং তাকে সুযোগ করে দেয় আইপিএলের মতো আসরে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে সে বছর দলকে জেতান আইপিএল ট্রফি। সে আসরে আইপিএলের ইমার্জিং খেলোয়াড় নির্বাচিত হোন তিনি।

উড়তে থাকা মুস্তাফিজকে কাবু করে ফেলে ইনজুরি। ২০১৬ সালে কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে পাঁচ মাস থাকেন খেলার বাইরে। ইনজুরির আগে খেলা ২২ টি ম্যাচে ফিজের উইকেট সংখ্যা ছিল ৪৮। বোলিং এভারেজ ১৩.০৮ এবং স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫.৮। সেখানে ইনজুরি থেকে ফিরে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তিনি ৩২ উইকেট পান যেখানে বোলিং এভারেজ এবং স্ট্রাইক রেট দ্বিগুণ ছিল।

আইপিএলে নিজের প্রথম আসরে হায়দ্রাবাদের হয়ে ৬.৯ ইকোনোমিতে ১৭ উইকেট নেয়া ফিজ ২০১৮ সালে মুম্বাইয়ের হয়ে ৩২.৮৫ এভারেজে পান ৭ উইকেট। মোস্তাফিজকে নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল এক সাক্ষাৎকারে একবার বলেন, ‘ওকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ব্যাটসম্যানরা তাকে পড়ে ফেলছে। সুতরাং দ্বিতীয় চিন্তায় যেতে হবে। কোচ হয়তো এ ব্যাপারে তাকে বলবেন।

কিন্তু আগে ওর বোঝা উচিত যে, কিভাবে বল করতে হবে। বিপিএলে প্রথম ম্যাচের প্রথম দুই ওভারে সে ভালো বল করেছে। শেষের দুই ওভারে মার খেয়েছে। একই লেন্থে বোলিং করছে, একইভাবে মার খাচ্ছে। ওই সময়ে মোস্তাফিজ আলাদা কিছু করার চেষ্টা করেনি।’ তিনি বলেন, ‘মোস্তাফিজ কিন্তু উইকেট পাচ্ছে, কিন্তু খরুচে বোলার হয়ে যাচ্ছে।

সে আমাদের ডেথ বোলার, সে বেশি রান দিলে পুরো দলের ওপর চাপ বাড়বে।’ চেষ্টা করলে মোস্তাফিজ এখনও বিশেষ বোলার হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন নিজেকে। এমনটি মনে করছেন জাতীয় দলের নির্বাচক। হাবিবুল বলেন, ‘মোস্তাফিজ স্পেশাল বোলার, এটা আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু তাকে এটা প্রমাণ করতে হবে। উইকেট নেয়ার সঙ্গে ইকোনমি রেটও ঠিক রাখতে হবে।’

দলের প্রধান অস্ত্র থেকে বোঝায় পরিণত হওয়া মুস্তাফিজের ছিটকে পড়া এখন সময়ের ব্যাপার। সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত গুণাবলীর সঠিক পরিচর্যা না করতে পারলে নিজের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের সাথে হুমকির মুখে পড়বে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত। মুস্তাফিজের কাছে তার নিজের ফিরে আসাটা বা উন্নতি করাটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই প্রয়োজনীয় ক্রিকেট বোর্ডের ফিজের বিকল্প খোঁজা।

মুস্তাফিজ কি পারবে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে? দেশের সমর্থকরা আবারও সেই চোখ ধাঁধানো কাঁটার দেখতে পারবে? তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে করোনা শেষে ফিজের মাঠে ফেরার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin