মানুষের রক্তের গ্রুপ চারটি- এ, বি, এবি এবং ও। সংকটকালে রক্ত দেয়া-নেয়া ছাড়া সাধারণত প্রাত্যহিক জীবনে রক্তের গ্রুপের প্রভাব তেমন একটা অনুভুত হয় না। তারপরও, করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করার ওপর রক্তের গ্রুপের প্রভাব নিয়ে কয়েকটি গবেষণা যে কাউকে অবাক করে দিতে পারে।
যদি করোনার প্রভাব বিস্তারে রক্তের গ্রুপের কোনরূপ ভূমিকা থাকতো তাহলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়তেন ‘এ’ গ্রুপের রক্তের মানুষ। বলা হচ্ছে এই ‘এ’ গ্রুপের রক্ত যাদের তারা সবচেয়ে বেশি সহজে সংক্রমণের শিকার হতেন। কোভিড-১৯ তাদের শরীরে সহজেই মারাত্মক রূপ ধারণ করতো। তবে, সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে পড়তেন ‘ও’ গ্রুপের মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল এবং বেথ ইস্রায়েল ডিকোনেস হাসপাতালের গবেষক দল একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছে। যেখানেই এই দাবি করা হয়েছে। ওই গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে, করোনার বিস্তার ও সংক্রমণের গভীরতার ওপর ব্লাডগ্রুপের কোন প্রভাব নেই। তবুও কারও কারও শরীরে এই ভাইরাসটি খুবই মারাত্মক রূপ ধারণ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন অ্যাডান্সেস সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ গত ১২ জুলাই গবেষণা পত্রটি প্রকাশ করেছে। এর আগের কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছিল এই ভাইরাসের ঝুঁকি ও অন্য রোগের সংক্রমণ এমনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতেও বিশেষ বিশেষ ব্লাডগ্রুপ বিশেষ ভূমিকা রাখে।
কেন মানুষের রক্তের এতো গ্রুপ এবং কি-বা এর উদ্দেশ্য মোটাদাগে এ প্রশ্নের প্রায় সবটুকু উত্তরই এখনও অজানা। খুব অল্পই জানা গেছে নানা রোগের সঙ্গে রক্তের গ্রুপের সম্পর্কের কথা।
এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সের ন্যাশনাশ মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টোরির গবেষক ও মানব বিবর্তনীয় জিনতত্ত্ববিদ ল্যুরে সেগুরেল বলেন, আমি মনে করি বিবর্তনের ইতিহাস খুবই আকর্ষণীয়। আমি এটা মনে করি না যে কেন আমাদের রক্তের গ্রুপ ভিন্ন রকম, সে প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে আছে।
১৯০১ সালে অস্ট্রিয়ান ইম্যুনোলজিস্ট ও রোগতত্ত্ববিদ কার্ল ল্যান্ডেস্টেইন রক্তের গ্রুপ আবিষ্কার করেন এবং এজন্য তিনি নোবেল পুরস্কারও পান।
রক্তের গ্রুপ শনাক্ত হওয়ার আগে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া যা বর্তমানে অনেক জীবন বাঁচিয়ে দেয় সহজে তা ছিল অনুমান নির্ভর ও ঝুঁকিপূর্ণ। ১৮০০ সালের আগে লন্ডনে কাজ করা গুনী চিকিৎসক জেমস ব্লানডেল ১০ জন রোগীর শরীরে রক্ত সঞ্চালন করেছিলেন সেখানে মাত্র ৫ জন সেরে উঠেছিল।
এর আগে ইউরোপীয় একদল গবেষক দাবি করেছিলেন জিন, রক্তের ধরণ করোনার সংক্রমণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’র প্রকাশ করা ওই গবেষণা পত্র নিয়ে গত মাসের ১৮ তারিখ খবর প্রকাশ করেছিল মার্কিন সংবাদ সংস্থা সিএনএন।
ওই গবেষক দল তাদের গবেষণা লিখেছেন, প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন ‘এ’ গ্রুপধারীরা অন্য গ্রুপের তুলনায় ৪৫ ভাগ বেশি করোনা সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। সে তুলনায় ‘ও’ গ্রুপ রক্তের মানুষ রয়েছেন সামান্য ঝুঁকিতে।