বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তার অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে তোলপাড়

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০
  • ২৬৯ Time View

বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) এক মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) স্ত্রীর সঙ্গে ওই কর্মকর্তার পিএসের অনৈতিক সম্পর্কের জেরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।এতে ভাঙনের মুখে পড়েছে দুটি সংসার। স্বামীর পরকীয়া ঠেকাতে না পেরে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন অভিযুক্ত পিএসের স্ত্রী।

তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা অফিসে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত। অনৈতিক পরকীয়ায় সৃষ্ট দাম্পত্য কলহের জেরে তিনি তার স্বামীর অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার- এমন অভিযোগ তুলে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

গ্রহণের জন্য গত বুধবার পিএসের স্ত্রী রংপুরের কোতোয়ালি থানায় মামলা (নং-৩) দায়ের করেছেন। তবে গতকাল রবিবার বিকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এদিকে পরকীয়ার জেরে স্বামীর নির্যাতনের বিষয়ে সবিস্তারে জানিয়ে গত ২৫ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দপ্তরেও লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ওই নারী।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক রাজিফুজ্জামান বসুনিয়া গতকালবলেন, মামলার পর থেকে আসামিরা পলাতক থাকায় একাধিক অভিযান চালিয়েও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মামলার বাদী ভুক্তভোগী গৃহবধূ গতকাল জানান, পারিবারিকভাবে ২০০৯ সালে অভিযুক্তের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এর কিছুদিন পরই বাদী বুঝতে পারেন, বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে তার স্বামীর অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।

এসবের প্রতিবাদ করলে বাদীর ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। বাদীর গর্ভকালীন সময়েও তার স্বামী মোবাইল ফোনে, ফেসবুকে ও ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যান। বাধা দিলে গর্ভাবস্থায়ই দুবার বেধড়ক মারপিট করা হয় তাকে।

শুধু তাই নয়, মারধরের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে ডাক্তারের কাছে পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে বিবাহ বিচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়; যৌতুক হিসেবে দাবি করা হয় ২০ লাখ টাকা। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে আসছিলেন বলে জানান বাদী।

তিনি আরও জানান, জিএমের পিএস হিসেবে তার স্বামী দায়িত্ব গ্রহণের পর ওই জিএমের স্ত্রীর সঙ্গেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। জিএমের স্ত্রী তার স্বামীর কর্মস্থলে মাঝে মাঝে বেড়াতে এলে তাদের গোপন সম্পর্ক অফিসে কর্মরত অনেকের নজরে আসে।

একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে তাদের পরকীয়া প্রেমের কথোপকথনের রেকর্ড অফিসের কয়েকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তোপের মুখে পড়েন পিএস।

বাদী আরও বলেন, বিষয়টির সমাধানে অফিসের তিনজন সহকারী পরিচালকের হস্তক্ষেপে আমার শ্বশুরালয়ের লোকজনের সঙ্গে ৩ দফায় বৈঠক হয়। সেখানে আমার স্বামী নিজেকে সংশোধন করে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড- থেকে বিরত থাকবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন ও প্রতিশ্রুতি দেন।

অথচ এখনো তিনি পরকীয়া অব্যাহত রেখেছেন। এ অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমার শিশু কন্যার সামনেই তিনি আমার গলা টিপে ধরেন; মেঝেতে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন।

একপর্যায়ে বাসার গৃহপরিচারিকা এসে বাঁচায় আমাকে। পরে ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানতে পারি, মারধরের কারণে আমার বুকের বাম পাঁজরের একটি হাড় ফেটে গেছে।

নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে থানায় সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত করেছি। কিন্তু পরকীয়া থেকে সরে আসেননি তারা। সর্বশেষ গত ৭ মার্চ ঢাকায় সাক্ষাৎ করেন ওই জিএমের স্ত্রী ও আমার স্বামী। এর প্রমাণ রয়েছে আমার কাছে।

বিবির গভর্নরের কাছে লিখিত অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, একজন শিক্ষিতা, চাকরিজীবী হয়েও অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা না ভেবে সুদীর্ঘ ১১ বছর সংসার করে গেছি। ভালোবেসে তাকে (অভিযুক্ত স্বামী) বিয়ে করেছিলাম সুন্দরভাবে সংসার করার জন্য।

কিন্তু একটা অদৃশ্য ঝড়ে আমার লালিত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। এ পর্যায়ে তার মতো একটা বিশ্বাসঘাতক, অনৈতিকতায় নিমগ্ন ব্যভিচারী লোকের সঙ্গে আর একসঙ্গে বসবাস করা যায় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটা সুপরিচিত, স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অন্তরালে তার স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে সামাজিকভাবে গর্হিত নোংরা কাজ করে যাচ্ছেন তার স্বামী।

এতে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়া ছাড়াও তাদের পৈশাচিকতায় বাদীর একমাত্র অবুঝ শিশু কন্যাকে তার পিতার সঙ্গ এবং পিতার আদর-ভালোবাসা পাওয়া থেকে বিছিন্ন করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রতিকার দাবি করেন অভিযোগকারী।

বাদীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত পিএস ও জিএমের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ওপাশ থেকে সাড়া মেলেনি।

এদিকে ওই জিএম বলেন, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যে পরকীয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। গত বুধবার দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে দাবি করেন। পরকীয়া সংশ্লিষ্ট প্রাপ্ত ছবি ও কথোপকথনের অডিও ক্লিপের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো সাজানো ও নকল।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin