বাবার ক’ষ্টের উপার্জনের টাকা দালালের হাতে তুলে দিয়েও কুলসুম এই ভেবে খুশি ছিলেন যে, তাকে বিদেশে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া শে’ষ করেছেন ওই দালাল। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি বিমানবন্দরে হাজির হন কুলসুম।
ওই দিন রাতের ফ্লাইটে রওনা হন সৌদি আরবের উদ্দেশে। দালালের সহযোগিতায় এই পুরো কাজটি করে দেয় ‘বেসকো ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সি। কিন্তু সৌদি আরবের মাটিতে পা দিয়েই কুলসুমের জীবনে নেমে আসে অ’ন্ধকার।
কারণ কারখানায় কাজের কথা বলে তাকে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ দেওয়া হয় কুলসুমকে। নিয়তিকে মেনে নিয়ে সেই বাসায় গৃহকর্মীর কাজেই যোগ দেন কুলসুম। কয়েক দিন যেতেই তার ওপর নেমে আসে নানা ধরনের অ’ত্যাচার-নি’র্যাতন।
কুলসুম বেগম। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জে’লায়। বাবা ও বড় ভাইয়ের স’ঙ্গে রাজধানীর পুরান ঢাকায় বসবাস করেন। বাবা ভাইয়ের বোঝা হয়ে সংসারে থাকতে চাননি তিনি। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে নানা চে’ষ্টা করেও ব্য’র্থতার কারণে হ’তাশ হয়ে পড়েছিলেন।
২০১৭ সালের শেষের দিকে ট্র্যাভেল এজেন্সির এক দালালের মাধ্যমে তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন স্বাবলম্বী হওয়ার। ট্রাভেল এজেন্সির দালাল কুলসুম বেগমকে বোঝান, বিনা খরচে সৌদি আরবে গিয়ে সেখাকার কারখানায় কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন তিনি।
বিনা খরচে বলা হলেও সৌ’দি আরবের পাঠানোর আগেই নানা অজুহাতে কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নেন ওই দালাল। সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করেও কুলসুম তার কাজ চা’লিয়ে যান। পরদেশ, ভিন্ন পরিবেশ ও আবহাওয়ার স’ঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং একই স’ঙ্গে গৃহক’র্তা ও গৃহকর্তীর নির্যা’তনে শা’রীরিকভাবে অসু’স্থ হয়ে পড়েন কুলসুম।
তবুও চলছিল মেনে নেওয়ার ল’ড়াই। কিন্তু এত কিছুর পরেও যখন মাস শে’ষে তার বেতনের টাকাও সময় মতো পাচ্ছিলেন না, তখনই কুলসুম সি’দ্ধান্ত নেন, আর ভিনদেশে থাকবেন না। ফিরে যাবেন বাবা-ভাইয়ের কাছে, ফিরে আসবেন নিজের দেশে।
কিন্তু ততদিনে কে’টে গেছে প্রায় ৬ মাস। এরপর দেশে ফিরে আসার জন্য সৌদি আরবের সেই এজেন্সির স’ঙ্গে যোগাযোগ করেন কুলসুম। কিন্তু সেখানকার ম্যানেজার শফিক আহমেদ তাকে কোনো ভাবেই সহযোগিতা করেননি বলে অভি’যোগ করেন কুলসুম।
যে বাসায় কুলসুম কাজ করতেন, সেখানে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না কুলসুমকে। তাই এক দিন বা’ধ্য হয়ে গো’পনে কাঁ’দতে কাঁদ’তে ফোন করেন বড় ভাই গোলজার হোসেনকে। বাংলাদেশে থাকা বড় ভাই গোলজারকে কুলসুম বলেন, ‘ভাই আমি ১১ দিন পর একটা খেজুর খাইছি। আমারে তুই বাঁ’চা, আমারে তুই নিয়ে যা।