শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন

রোববার খুলছে অফিস ও গণপরিবহন, ঢাকামুখী মানুষের স্রোত

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০
  • ২৮১ Time View

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁঁকি নিয়েই আবার পথচলা শুরু হচ্ছে। সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের পর রোববার (২৯ মে) থেকে খুলে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, চলবে গণপরিবহন। এ কারণে ঈদে ঘরেফেরা মানুষ এখন রাজধানীতে ফিরছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সব সড়ক-মহাসড়কে রাজধানীমুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর প্রবেশপথ ও ফেরিঘাটগুলোতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, বাবুবাজার ব্রিজ, গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ঢাকামুখী মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। গণপরিবহন না চলায় ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও পণ্যবাহী যানবাহনে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করে। তবে কোনো যাত্রীবাহী বাস রাজধানীতে প্রবেশ করেনি। ঈদের ছুটির আগে এসব স্থানে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চেকপোস্ট বসিয়ে ব্যাপক কড়াকড়ি ছিল। কিন্তু শুক্রবার কোথাও কোনো কড়াকড়ি দেখা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছে এবং বের হয়েছে। রাজধানীর ভেতরেও কোথাও পুলিশের চেকপোস্ট বা উপস্থিতি দেখা যায়নি।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ আরও বেড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে ঘাটের উভয় প্রান্তেই যাত্রীদের উপচ পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে, তাদের কাউকেই স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করতে দেখা যায়নি। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় সবাই গাদাগাদি করে ফেরিতে উঠছেন। ঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কেউ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার নির্দেশিত নির্দেশনা অনুসরণ করছেন না।

জানা যায়, প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন ধরে সীমিত আকারে ফেরি সার্ভিস চালু রাখে কর্তৃপক্ষ। এম্বুলেন্স ও জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন পারাপারে ২ থেকে ৫টি ফেরি চালু রাখা হয়। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে বাড়তে থাকে ঢাকাগামী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ। সময় বাড়ার সাথে সাথে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে কর্মজীবী হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামাল দিতে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ শুক্রবার দুপুর থেকে নৌরুটের ১৩টি ফেরির সবই চালু করে।

দৌলতদিয়া ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে দৌলতদিয়া ঘাটে আসছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগে ওই সব ছোট গাড়ির চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছেন। করোনা প্রতিরোধে করণীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে হাজার হাজার যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন।

সাতক্ষীরা থেকে নানা উপায়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসা যাত্রী আনিসুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাস বিস্তারের শুরুতেই পরিবার নিয়ে অনেক আগেই ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যান তিনি। আগামী রোববার থেকে তার অফিস খুলবে। তাই একদিন আগেই ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন তিনি। দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে তার একদিকে যেমন ৫-৬ গুণ বেশি টাকা খরচ হয়েছে তেমনি সময়ও লেগেছে অনেক। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মাথায় রাখা অসম্ভব বলে তিনি জানান।

গার্মেন্টস কর্মী নাজমা আক্তার বলেন, পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করে ঢাকায় ফিরছি, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন যানবাহনে অনেক গাদাগাদি করে তিন-চার গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ঘাটে এসে পৌঁছেছি। করোনার ভয়ে কাজে যোগ না দিয়ে ঘরে বসে থাকলে খাব কি? ঘরে বসে থাকলে তো আর ভাত পেটে যাবে না, কাজ করেই খেতে হবে। তাই করোনা নিয়ে ভাবার সময় এখন আর নাই। অফিস দুইদিন আগে খুলেছে, এখনও অফিসে যেতে পারিনি, চাকরি আছে কি-না সন্দেহ। চাকরি না থাকলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পথে বসতে হবে।

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঈদ শেষে ঢাকামুখী কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০টি ফেরির মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিসি এসব যাত্রী পারাপার করছে। যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলা ও ট্রাফিক পুলিশদের।

ঘাটে দেখা গেছে যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। এদিকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব গাড়ি দিয়ে চলাচলের কথা বলা হলেও ঘাট এলাকায় ভাড়ায় ছোট গাড়ি আসছে ও যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ বেশ কিছু মাইক্রোবাস আটক করে জরিমানাও করেছে।

শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পিকআপ, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজি ও থ্রি হুইলারে গাদাগাদি করে কর্মস্থলে ফিরতে দেখা গেছে কর্মজীবী এসব মানুষদের। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোনো সামাজিক দূরত্ব।

যাত্রীরা বলছেন, ঈদ শেষ তাই কর্মস্থলে ফেরার তাড়া রয়েছে। গণপরিবহন এখনও বন্ধ থাকায় তাই বিভিন্ন উপায়ে বাড়তি খরচ করে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে।

গণপরিবহন, অফিস–আদালত খোলার ঘোষণা আসার পরদিনেই দেশে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড আড়াই হাজারের বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জীবন–জীবিকার কথা বিবেচনা করে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর লক্ষ্যে সীমিত পরিসরে সবকিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে।

দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চললেও সরকার সাধারণ ছুটি আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সাত দফা ছুটি বাড়ানো হয়। বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখার আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে দেশের সার্বিক কার্যাবলী এবং জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভবা নারীদের কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আদেশে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহণ, যাত্রীবাহী নৌ যান ও রেল চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

রোববার থেকে খুলছে পুঁজিবাজার ও স্বাভাবিক লেনদেনে ফেরত যাচ্ছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও। এ ছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুর—এই তিনটি অভ্যন্তরীণ রুটে সোমবার থেকে বিমান চলাচল শুরুর কথা জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

তবে আন্তর্জাতিক রুটে নিয়মিত যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচলে বিধিনিষেধের মেয়াদ ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত ২১ মার্চ থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন বেড়েই চলেছে তখন সবকিছু স্বাভাবিক করার এই চেষ্টা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। তা ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সহজে কমবে না। তবে সবকিছু তো একদিন না একদিন খুলতে হবে। মনে রাখতে হবে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাপূর্ব জীবনে সহসা আর ফেরা হবে না আমাদের।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin