শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন

ভয়ঙ্কর যে বিপদটি আসছে ঈদের পর

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৪ মে, ২০২০
  • ৩০৭ Time View

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, কোথায় শেষ হবে ইত্যাদি নিয়ে কোন প্রক্ষেপণ এবং পূর্বাভাসই যেন মিলছে না। একের পর এক পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব এবং লক ডাউন না করলে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন প্রক্ষেপণই সঠিক হবে না। বরং পরিস্থিতি দিনের পর দিন ভয়াবহ হবে, একটি চূড়ান্ত সীমার পর আরেকটি নতুন চূড়ান্ত সীমা শুরু হবে এবং এই পরিস্থিতি কখন শেষ হবে তা বোঝার উপায় নেই।

কারণ বাংলাদেশে যখন করোনা পরিস্থিতি চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছিল ঠিক সেই সময় সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, দোকানপাট ইত্যাদি উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে, কেউ কেউ ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং দোকানপাটে কেনাকাটা করছে, বাজারহাট করছে। ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন সংক্রমণের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে, প্রতিদিনই নতুন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কাজেই বাংলাদেশ সম্পর্কে পূর্বে যে প্রেডিকশন করা হয়েছিল যে, বাংলাদেশে হয়তো করোনা পরিস্থিতি থাকবে মে মাসের শেষ পর্যন্ত এবং জুন মাসে আস্তে আস্তে দেশ স্বভাবিক হওয়া শুরু করবে। তবে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সেই ধারণাটি এখন ক্রমশ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। এই ভুল প্রমাণের পেছনে তারা একাধিক কারণ দেখাচ্ছেন। তারা মনে করছেন যে-

প্রথমত; আগে যে প্রক্ষেপণটি করা হয়েছিল তখনকার বাস্তবতা, সাধারণ ছুটি বা লকডাউনকে মাথায় রেখে। কিন্তু এপ্রিল মাস থেকে ক্রমশ লকডাউন শিথিল হয়ে গেছে এবং মে মাসে এসে সাধারণ ছুটি বা লকডাউন বলতে কিছুই নেই। বরং গার্মেন্টস খুলে গেছে, দোকানপাট খুলে গেছে, মানুষ এখন ঈদের ছুটিতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে বাংলাদেশে নতুন করে আবার করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যেটা হয়তো আবার ২১ দিন বা ৩/৪ সপ্তাহের ভেতর চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছাবে।

দ্বিতীয়ত; তারা মনে করছেন যে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের যে ভৌগলিক অবস্থা ছিল, সেটা ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক। মূলত অর্ধেকের বেশি আক্রান্ত রোগীই ছিল ঢাকার। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক দিক ছিল। কারণ আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাসহ যা কিছুই থাকুক না কেন, তা হলো ঢাকাকেন্দ্রিক। আর ঢাকার বাইরে এই করোনা ছড়িয়ে পড়লে আমাদের একটি ভয়াবহ ট্রাজেডিতে পড়তে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

কেননা ঢাকার বাইরে সাধারণ চিকিৎসারই অপ্রতুলতা রয়েছে, করোনা চিকিৎসা তো বটেই। আর এই বাস্তবতায় ঢাকা করোনার হটস্পট থাকবে এবং আস্তে আস্তে ঢাকাকে করোনা মুক্ত করার মাধ্যমে আমরা করোনা সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসবো বলে আমাদের চিকিৎসকরা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু এখন যে লাখ লাখ মানুষ ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছেন তার ফলে পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই সমস্ত লোকরা ঢাকার বাইরে চলে যাবেন। তারা ওই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে করোনা সংক্রমন ছড়িয়ে দিতে পারেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন এখন দেখা যাচ্ছে যে প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে ১৭ জন করোনায় আক্রান্ত। কাজেই এই বিপুল সংখ্যক মানুষ যারা উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গ কিংবা তথ্য গোপন করে শুধুমাত্র ঈদের জন্য যারা ঘরমুখো হচ্ছেন তাদের অনেকেই করোনায় সংক্রমিত এবং তারা দ্রুত গ্রামে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এটা যদি গ্রামে ছড়িয়ে দেয় তাহলে এত ভয়ংকর অবস্থা নেবে।

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আটজন বিশেষজ্ঞের একটি প্যানেল প্রক্ষেপণ করেছিল যে বাংলাদেশে ৫০ থেকে ৬০ হাজার করোনা সংক্রমণ হবে। সেই প্রক্ষেপণ এখন ভুল প্রমানিত হচ্ছে। কারণ ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে আক্রান্তের সংখ্যা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এখন লকডাউন শিথিল এবং সব কিছু শিথিল করার ফলে আমাদের দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমণ শুরু হবে। দ্বিতীয় ধাপের করোনা সংক্রমণ আবার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে চুড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছবে। অর্থাৎ আগামী জুনে গিয়ে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।

কোন কোন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে এখন যে সংক্রমণ হবে সেই সংক্রমণের ফলে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় যেটি চিকিৎসকরা মনে করছেন যে আমাদের সীমিত চিকিৎসা সুযোগ রয়েছে কাজেই যখনি আমাদের আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ অতিক্রম করবে তখনি আমাদের ভয়ংকরভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে।

সারা বিশ্বের তথ্য বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি যে, যারা আক্রান্ত তাদের মধ্যে ৮০ ভাগ এমনিতেই সুস্থ হয়ে যান, ২০ভাগ জটিল অবস্থায় যান। অর্থাৎ, বাংলাদেশের যদি ১ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় তাহলে ২০ হাজার মানুষকে চিকিৎসা দিতে হবে। এই ২০ হাজার মানুষকে চিকিৎসা দেয়ার মত বাস্তব পরিস্থিতি আমাদের নেই।

আবার মোট আক্রান্তের মধ্যে ৫ শতাংশ মানুষ গুরুতর আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ ১ লাখ মানুষ যদি আক্রান্ত হয়ে তার মধ্যে ৫ হাজার মানুষের আই সি ইউ, ভ্যান্টিলেশন ইত্যাদি লাগবে। অথচ আমাদের বাংলাদেশে এখন সব হাসপাতাল মিলিয়ে করোনা চিকিৎসার জন্য ৪০০-র কম আই সি ইউ আছে।

এই অবস্থায় আমাদের করোনা পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে কি ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে তা বলাই বাহুল্য। চিকিৎসকরা মনে করছেন ঈদের পর করোনা কমবে না বরং জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হবে এবং আমরা আরেকটি সর্বোচ্চ সীমার জন্য অপেক্ষা করবো। তখন এই পরিস্থিতিটি ভয়াবহ হবে আমাদের সকলের জন্যই।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin