বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১২ পূর্বাহ্ন

বড় সুখবর! রক্ত জমাট বাঁধা ঠেকিয়ে করোনা কাবু করা যাচ্ছে

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০
  • ৩৮৬ Time View

করোনায় কাঁপছে সারা বিশ্ব। এই মারণ ভাইরাসের কালো থাবায় প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। করোনা নিয়ে গবেষণা করে নতুন নতুন শঙ্কার কথা শুনাচ্ছেন গবেষকরা। পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন উপসর্গ। কয়েকদিন আগেই গবেষকরা জানান করোনার নতুন উপসর্গ হলো মানুষের শরীরে বা ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা। আর এই নতুন উপসর্গে করোনা চিকিৎসায় আশার আলো দেখছেন গবেষকরা।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের এক খবরে বলা হয়, ইতালিতে মিলেছে করোনা চিকিৎসার এই সুখবর। দেশটিতে ৫০ জন করোনা রোগী নিয়ে চলে গবেষণা। তাদের করা হয় ময়নাতদন্ত। আর তাতেই বেরিয়ে এসেছে করোনা সংক্রমণের এক অজানা দিক।

সাধারণত করোনা হানা দেয় ফুসফুসে। পরে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হয়। কিন্তু এই মারণ ভাইরাস শরীরে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে ফেলে। এতে মস্তিষ্কে ও ফুসফুসে রক্ত চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। ইতালিতে যে ৫০ জন রোগীর ময়নাতদন্ত হয় তাদের রিপোর্টে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হয়নি তাদের। ফুসফুসের ধমনীতে প্রদাহ জ্বালায় রক্ত জমাট বেঁধে তাদের মৃত্যু হয়। নতুন এই উপসর্গ সঞ্চার করছে আশার আলো।

কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগীর নিউমোনিয়া হলে তাকে আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে পাঠানো খুব প্রয়োজন। তবে রক্ত জমাট বেঁধে প্রাণহানির শঙ্কা থাকলে ভেন্টিলেশনে পাঠানোর দরকার নেই। রোগীকে রক্ত তরল করার ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা চালানো সম্ভব।

ইতালির ৫০টি মরদেহের ময়নাতদন্তে একটিই লক্ষণ দেখা দিয়েছে। প্রতিক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে করোনাভাইরাস। ফুসফুসে পৌঁছেই ধমনীতে তীব্র প্রদাহের সৃষ্টি করে করোনা। প্রদাহের ফলে রক্ত জমাট বেঁধে ফুসফুসকে বিকল করে দেয় এই মারণ ভাইরাস। একইভাবে হার্ট হার্টের ধমনী কিংবা মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনায় রক্ত জমাট বাঁধার মতো উপসর্গ দেখা দিলে খারাপ কিছু নয়। বরং মন্দের ভালো। কারণ নিউমোনিয়া আক্রান্ত ফুসফুসকে রক্ষা করা কঠিন। এর তুলনায় জমাট বাঁধা রক্ত তরল করা সহজ। হার্টের চিকিৎসায় এই সংক্রান্ত হাজারো ওষুধ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।

তবে এও বলা হচ্ছে যে, নিউমোনিয়ার তুলনায় রক্ত জমাট বাঁধা বেশি বিপজ্জনক। এতে অনেক বেশি অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই জটিল লক্ষণ তাদের চিকিৎসাকে আরো সহজ করে দিয়েছে। নিউমোনিয়া ধরে ভেন্টিলেশনে চিকিৎসা করা ব্যয়বহুল। বরং শুরু থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ও রক্ত তরল করার ওষুধ দিতে থাকলে ফল মিলবে তাড়াতাড়ি। ইতালিতে এই উপায়ে চিকিৎসা করে দারণ ফল মিলেছে। কিন্তু এখনই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সময় আসেনি। এই বিষয়টি নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।

এই ধরনের চিকিৎসায় যে শুধু ইতালিতে সুফল মিলেছে এমন নয়। সুফল পাওয়া গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। দেশটির নিউইয়র্ক সিটির বৃহত্তম হাসপাতাল সিস্টেমের চিকিত্সকদের প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার মারাত্মক সংক্রমণের চিকিত্সায় আশা আলো হয়ে দেখা দিয়েছে এই পদ্ধতিটি। রক্ত তরল করার ওষুধ দিয়ে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিত্সা করলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনার হার বেড়ে যাবে।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুই হাজার সাতশ ৩৩ জন রোগী নিয়ে এই চিকিৎসা পদ্ধতির গবেষণা করা হয়েছে। বিশ্লেষণের ফলাফল বুধবার আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ও গবেষণার অন্যতম লেখক ভ্যালেন্টিন ফুস্টার জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষণগুলো কেবলমাত্র মেডিক্যাল রেকর্ড পর্যালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরো বিশ্লেষণ প্রয়োজন যাতে আরো বিস্তৃত সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্তু বর্তমান গবেষণার ফলাফল আশা দেখাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার মাতামত হলো সতর্কতামূলক। তবে এটি বলতে চাই, আমি মনে করি এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের সাহায্য করবে। কোন ওষুধগুলো ব্যবহার করা উচিত এবং কোন প্রশ্নের জবাব দিতে হবে; এই প্রশ্নগুলো উত্তরের দরজা খোলে গেছে।

ফুস্টার বলেন, বিশ্লেষণের ফলস্বরূপ, হাসপাতালটির করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। কভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের উচ্চমাত্রায় রক্ত তরল করার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অন থ্রম্বোসিস অ্যান্ড হেমোস্ট্যাসিস এবং আমেরিকান সোসাইটি অব হেমাটোলজিসহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল সোসাইটি কিছু করোনা আক্রান্ত রোগীদের রক্ত তরল করার ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিন নিয়ে কাজ করা মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জেফ্রি বার্নেসও একমত প্রকাশ করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin