শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৫:১৬ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে তৈরি করোনার ওষুধ “রেমডেসিভির” চলতি মাসেই বাজারে আসছে

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০
  • ৩১২ Time View

বাংলাদেশে তৈরি করোনার ওষুধ “রেমডেসিভির” চলতি মাসেই বাজারে আসছে। করোনাভাই’রাসের চিকিৎসায় কার্যকারিতার নি’রিখে এখন পর্যন্ত যে ওষুধটিকে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় বলে মনে করা হচ্ছে, সেই “রেমডেসিভির” এর উৎপাদন শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশটির বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানিকে রেমডেসিভির তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। তবে বাংলাদেশে উৎপাদিত এই ঔষধের দাম সম্পর্কে যা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করে রেমডেসিভির কতটা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষ’মতার মধ্যে থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের কাছেই।

ঔষধ প্রশাসন অবশ্য বলছে যে তারা বাংলাদেশে তৈরি করোনার ওষুধ রেমডেসিভিরের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের হ’স্তক্ষে’প করবে না। এই সংস্থার মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশের আটটি ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠানকে “রেমডেসিভির” উৎপাদন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই কোম্পানিগুলো হলো বেক্সিমকো, এসকায়েফ, ইনসেপ্টা, স্কয়ার, বিকন, হেলথকেয়ার, অ্যাকমি ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। “এর মধ্যে বেক্সিমকো আর এসকায়েফের কাজ অনেকদূ’র এগিয়েছে। এই মাসের মধ্যেই হয়তো তারা তাদের পণ্য বাজারে ছাড়বে।”

এসকায়েফ ফার্মাসিউটিকালসের মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, চলতি মাসের মধ্যেই তাদের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত রেমডেসিভির বাজারে ছাড়া হবে। রেমডেসিভির ওষুধটির পেটেন্ট যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বায়োফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি গিলিয়াড সাইন্সেস এর। ওষুধটি প্রথমে ইবোলা ভাইরাসে আ’ক্রান্ত রো’গীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

ক্লিনিক্যাল প’রীক্ষায় দেখা গেছে, নভেল করোনাভাই’রাস সহ আরো কিছু ভাই’রাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে যেভাবে বং’শবৃদ্ধি করে এবং রো’গ প্র’তিরো’ধ ক্ষ’মতাকে ক্ষ’তিগ্র’স্থ করে, সেই প্রক্রিয়াটি কিছুটা হলেও থা’মানোর সক্ষ’মতা রয়েছে এই ওষুধের।

কোভিড-১৯ রো’গীদের চিকিৎসায় এই ওষুধ কার্যকর হতে পারে, এমন গবেষণার তথ্য গিলিয়াড সায়ন্সেস প্রকাশ করার পর গত সপ্তাহে করোনাভাই’রাস আ’ক্রান্ত রো’গীদের জরুরি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। বলা হচ্ছে, এই ওষুধের প্র’য়োগ বেশি অসু’স্থ রোগীদের হাসপাতালে থাকার সময়কাল চার দিন পর্যন্ত কমাতে পারে।

রেমডেসিভিরের পেটেন্টের মালিকানা গিলিয়াড সায়ন্সেস-এর, অর্থাৎ শুধুমাত্র তাদেরই এই ওষুধ তৈরির অধিকার রয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় নাম থাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি অনুযায়ী এই ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে ওই নিষে’ধাজ্ঞা বাংলাদেশের ওপর প্রযোজ্য হবে না। এ থেকেই বাংলাদেশে তৈরি করোনার ওষুধ তৈরির প্রস্তুতি চলছে।

এসকায়েফের মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, এই ওষুধটি ইনজেকশন প্র’ক্রিয়ায়, অর্থাৎ রো’গীর শরীরে সুঁ’ইয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করাতে হয়। তিনি বলেন, “যেসব রো’গীদের অবস্থা গু’রুত’র, তাদের ব্যবহারের জন্য মূলত এই ওষুধ। পাঁচ দিন ও দশ দিন, এই দুই ধরণের মেয়াদে বা কোর্সে ওষুধটি প্র’য়োগ করার অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কর্তৃপক্ষ।”

মুজাহিদুল ইসলাম জানান, পাঁচ দিনের মধ্যে যাদের রো’গ সারবে না, তাদের ক্ষেত্রে দশ দিনের কোর্সের পরামর্শ দেয়া হবে। যারা পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসা নেবেন তাদের জন্য রেমডেসিভিরের ৬টি ভায়াল, আর দশ দিনের চিকিৎসা নেয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ১১টি ভায়াল প্রয়োজন হবে বলে জানান তিনি। মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রতিটি ভায়ালের দাম হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে।” অর্থাৎ যারা পাঁচদিন চিকিৎসা নেবেন তাদের রেমডেসিভির ওষুধ কিনতে খরচ হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আর যারা দশ দিন চিকিৎসা নেবেন তাদের খরচ পড়বে ৬০ হাজার টাকার মতো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজাও জানিয়েছিলেন যে তাদের প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা রেমডেসিভিরের প্রতিটি ভায়ালের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ কোভিড-১৯ চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহার করতে হলে বেশ বড় অংকের অর্থ খরচ করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, শুরুর দিকে শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ওষুধ সরবরাহ করার পরিকল্পনা থাকলেও পরে বেসরকারি পর্যায়ে বাজারজাতকরণের অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, “যেহেতু বিভিন্ন জায়গায় এই ওষুধের প্রয়োজন হবে, তাই সীমিত পরিসরে এর যোগান দিলে হয়তো অনেক মানুষই ওষুধ পাবেন না। তাই আমরা এটি বাজারজাতকরণের অনুমোদন দিচ্ছি।”

তবে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ যেন বিক্রি করা না হয়, এই শর্তে ওষুধ বাজারজাত করা হবে বলে জানান তিনি। “সরকারিভাবে যেন এই ওষুধের বিপণন করা হয়, আমরা সেই পরামর্শ দিয়েছি। তবে তার মানে এই নয় যে এটি বেসরকারিভাবে দেয়া যাবে না। একমাত্র শর্ত হলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার করা যাবে না।”

মাহবুবুর রহমান বলেন, “নিয়ন্ত্রিতভাবে এই ওষুধ বাজারে ছাড়া হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এটি সরবরাহ করতে পারবে। তবে ফার্মেসিতে খুচরা কেনার জন্য সেভাবে পাওয়া যাবে না এই ওষুধ।” তিনি এমন ধারণা দিয়েছেন যে মূলত সেসব হাসপাতাল এ ওষুধ পাওয়া যাবে, যেগুলো করোনাভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত রো’গীদের চিকিৎসা দেয়।

ওষুধ প্রশাসন বেসরকারি পর্যায়ে এই ওষুধ বাজারজাত করার কথা বললেও এসকায়েফের মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম অবশ্য জানিয়েছেন যে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা দেয়া সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ওষুধ সরবরাহ করার শর্তে এটি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

যেহেতু রেমডেসিভির বেশ উচ্চ মূল্যের ওষুধ হবে, তাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ক্র’য়ক্ষম’তার মধ্যে তা থাকবে কিনা, সেটি নিয়ে উ’দ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশে রেমডেসিভিরের দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ওষুধের দাম কিছুটা কম হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

মাহবুবুর রহমান বলেন, “সরকারি হাসপাতালে ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধ বিক্রি করার সময় প্রস্তা’বিত মূল্য ঘোষণা করে। সে সময় কোনো প্রতিষ্ঠান যদি কম মূল্য চায়, তখন ওষুধের দাম কমে আসবে।” তবে এর বাইরে ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসন কোনো ধরণের হ’স্তক্ষে’প করবে না বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin