বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন

করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে নিজেই বদলি হয়ে নারায়ণগঞ্জ এসেছেন ডা. মশিউর

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০
  • ২৬৫ Time View

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের দুর্দশা ও কষ্ট দেখে তাদের চিকিৎসা করানোর জন্য নিজেই আবেদন করে বদলি হয়ে নারায়ণগঞ্জ এসেছেন চিকিৎসক মশিউর রহমান। তিনি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় কর্মরত ছিলেন।মশিউর রহমান ৩৯তম বিসিএস’র স্বাস্থ্য ক্যাডারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক। তার নানা একজন বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। পিলখানার তিন নম্বর গেইটটি তার নানার নামে নামকরণ করা হয়েছে। তিনি হলেন বীরউত্তম সুবেদার হাবীবুর রহমান।
ডা. মশিউর রহমান

মশিউর রহমান বলেন, ‘আমি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় কর্মরত ছিলাম। কিন্তু সেখানে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোনও করোনা রোগী ছিল না। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আমাদের চিকিৎসকরা করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু চিকিৎসক তো সবজায়গায় সীমিত। আমি দেখলাম সিরাজগঞ্জে বসে থেকে কোনও লাভ নেই। তাই মনে মনে ইচ্ছা জন্মালো আমি যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবা করতে পারতাম। জাতির এইসময় যদি পাশে দাঁড়াতে পারি তাহলে আমার মেধা ও পরিশ্রম কাজে লাগবে। কিন্তু হঠাৎ করে উপায় মিলছিল না। তাই উপায় খুঁজতে লাগলাম। যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বদলি হতে চাই, তাহলে ফাইল চালাচালি ও অর্ডার হতে সময় লাগবে। তাই আমি নিজেই ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচালক বরাবর নারায়ণগঞ্জে বদলি হওয়ার জন্য আবেদন করলাম। এরমধ্যে আমি আমার মায়ের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করছি। মা তখন আমাকে বলল, সব উপজেলা ও জেলাই তো আক্রান্ত হতে পারে। তুমি যদি নারায়ণগঞ্জ যেতে চাও সিদ্ধান্ত তোমার। আমি মাকে বুঝালাম যথাযথ প্রটেকশন পেলে ভাইরাস আক্রান্ত হবো না। আমার পরিবার আমার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন। তারা সায় দিলেন। তবে তাদের দুশ্চিন্তা কমে না।’

বদলির আবেদনে যা লিখেছিলেন ডা. মশিউর

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর করা আবেদনে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি ডা. মশিউর রহমান, সহকারী সার্জন, দোবিলা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জে কর্মরত আছি। দেশের ক্রান্তিলগ্নে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় করোনা রোগীদের সেবাদানের জন্য আইসোলেশন সেন্টার এবং করোনা নিবেদিত হাসপাতালসমূহে সরকারি ডাক্তারদের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আমি, ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের যে কোনও জেলায় করোনা টিমে বদলি হয়ে করোনা রোগীদের সেবা করতে ইচ্ছুক। উল্লেখ্য যে, আমার নানা বীর উত্তর সুবেদার হাবিবুর রহমান ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বিজিপি পিলখানার সদর দফতরের ঢাকা নিউ মার্কেট সংলগ্ন ৩ নম্বর গেইট এর নাম বীর উত্তম হাবিবুর রহমান গেইট। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি নিজের জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘ ৪৬ বছর তিনি পঙ্গু থাকার পর ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। নানার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমিও করোনা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চাই।

অতএব, উপরোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনা করে আমাকে ঢাকা, গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জ জেলার যে কোনও করোনা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে বদলি করে রোগীদের সেবা করার সুযোগ দানে হুজুরের সদয় মর্জি হয়।’এই আবেদন করার দুদিন পর ২৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে চিকিৎসক মশিউর রহমানের বদলির অর্ডার হয়।মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের বদলির প্রক্রিয়াটি জেলা সিভিল সার্জনদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তবে সেই প্রক্রিয়ায় সময় লাগতো। তাই সরাসরি ডিজি’র কাছে আবেদন করেছি।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin