বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন

৫ কারণে বাংলাদেশে করোনার সুখবর

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০
  • ৩৪৬ Time View

করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক বড় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছে, এ কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে যখন করোনার পিক সিজন শুরু হয়েছে, সেই সময় গার্মেন্টস খুলে দেয়া, দোকানপাট খুলে দেয়া এবং অর্থনৈতিক গতি সচল রাখার জন্য সরকারি অফিস-আদালতসহ কিছু কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এই উদ্যোগের অনেক সমালোচনা হচ্ছে, অনেকে বলছেন যে, এই উদ্যোগের ফলে সামাজিক সংক্রমণ আরো ব্যাপক বিস্তৃত হবে এবং এর ফলে করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকার সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একদিকে করোনা মোকাবেলার জন্য তাঁদের যেমন সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা রয়েছে এবং করোনা কতটুক বিস্তৃত হতে পারে, কতটা ভয়াবহ হতে পারে- সে সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষনও করেছে সরকার।

আর এই ধরণের খুলে দেওয়া নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু তথ্য বাংলাদেশকে ঝুঁকি নিতে সাহায্য করেছে বলে নীতিনির্ধারকরা বলছেন। আর যেসমস্ত তথ্য বাংলাদেশকে ঝুঁকি নিতে সাহায্য করেছে, সেই তথ্যগুলো একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক-

সমান্তরাল গতি: বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের একটি সমান্তরাল গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথম মার্চ মাসে ৫১ জন্য করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল এবং তারপর ৭ হাজারের উপর করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এপ্রিলে। আর মে মাসে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়শর মতো করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং এই সংখ্যা সর্বোচ্চ ৭৯০ জন পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে আজ। বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের যে গতি, সেটা খুব বড় ধরণের উলম্ফন হচ্ছেনা।

যেটা ইতালি-স্পেন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছিল যে এক লাফে অনেক বেশি বৃদ্ধি এবং প্রতি ২৪ ঘণ্টায় বিশাল সংখ্যক রোগী শনাক্ত হওয়া। এরকম ঘটনা এখনো বাংলাদেশে ঘটেনি। স্থিতিশীলভাবে করোনার সংক্রমণ থাকার কারণে এখানে মহামারির সংখ্যা কম এবং পরিস্থিতি নাগালের মধ্যে আছে বলেই সরকার বিবেচনা করছে।

কম মৃত্যু: দোকানপাট খুলে দেয়া এবং লক ডাউন শিথিলের যে সিদ্ধান্ত তা নিতে অনুপ্রাণিত করেছে আংশিক মৃত্যুর তথ্যটি। এখন পর্যন্ত করোনায় বাংলাদেশে মোট মারা গেছে ১৮৬ জন। হিসেব করলে দেখা যাবে যে, ১১ হাজারের বেশি আক্রান্তের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুহার অনেক কম এবং মৃত্যুহারের লাগামটা টেনে এসেছে। এই তথ্যটি সরকারকে এই ধরণের ঝুঁকি নিতে সাহস দিচ্ছে বলে একাধিক মহল মনে করছে।

ক্রিটিক্যাল রোগীর সংখ্যা কম: বাংলাদেশে করোনার একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে অধিকাংশ রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে বাড়িতে এবং গুরুতর অসুস্থ বা কঠিন উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। বাড়িতে থেকে যখন চিকিৎসা করছে তখন তাঁর নিজ দায়িত্বে কিছু নিয়মকানুন মেনে সুস্থ হয়ে উঠছে। এর মাধ্যমে একটি জিনিস নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, করোনা মরণঘাতী ব্যাধি নয়, বরং তিন থেকে পাঁচ শতাংশ মানুষের জন্য এটা ভয়াবহ অসুখ। এই তথ্যটি সরকারকে খুলে দেওয়া নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হতে সহায়তা করেছে।

পোশাক শিল্পের বাজার: করোনাকালেও পোশাক শিল্পের বাজার নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি শীতল যুদ্ধ চলছে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে। বাংলাদেশ যদি বর্তমান অর্ডারগুলো সম্পূর্ণ করতে না পারতো, তাহলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বাজার ধ্বংস হয়ে যেত।

বাজারটি ভিয়েতনামে চলে যেত। কারণ ভিয়েতনামে করোনার প্রকোপ কম এবং তাঁরা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই জন্যেই বাংলাদেশকে ঝুঁকি সত্ত্বেও গার্মেন্টসগুলো খুলে দিতে হয়েছে এবং এই ঝুঁকির ইতিবাচক ফলাফল হতে পারে বলে সরকারের অনেকে মনে করছেন। তাঁরা মনে করছেন এর ফলে বাংলাদেশ পোশাক শিল্পের বাজারে নিয়ন্ত্রক হতে পারবে। কারণ চীন, ভারত এখন পিছিয়ে পড়ছে।

অভিবাসনে ধ্বস: বাংলাদেশে করোনার কারণে সবথেকে বড় যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা হলো অভিবাসনে একটি বড় ধরণের ধ্বস নেমেছে। বাংলাদেশের বিদেশ থেকে ফেরত আসা শ্রমিকদের নতুন করে চাকরি পাওয়া এবং নতুন করে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘসূত্রিতা শুরু হবে। বেশ কিছুদিন এই খারাপ অবস্থা চলবে। কাজেই বাংলাদেশে রেমিটেন্সের প্রধান দুটি অবলম্বনের একটি নিশ্চিতভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং দ্বিতীয়টি যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে আমাদের অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হবে। একারণেই সরকার এই ঝুঁকি নিয়েছে।

আর এই সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতেই সরকার একটি ক্যাল্কুলেটিভ রিস্ক নিয়েছে বলেই মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 bhabisyatbangladesh
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin